গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টেস্টে শ্রীলঙ্কার জয় ১৬৪ রানে। ২৯৭ রানের লক্ষ্য দিয়ে তারা প্রতিপক্ষকে গুটিয়ে দিয়েছে ১৩২ রানে।
দুই টেস্টের সিরিজটি ২-০তে জিতে নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। প্রথম টেস্টে তাদের জয় ছিল ১৮৭ রানে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রে টানা দুই ম্যাচ জিতল দলটি।
শ্রীলঙ্কার কোচ হিসেবে বিদায়টা দারুণ হলো মিকি আর্থারের। লঙ্কান বোর্ডের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন নিয়ে সমঝোতা না হওয়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ শেষে দায়িত্ব থেকে তার সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত আগে থেকেই হয়ে আছে।
শেষ দিনে লঙ্কানদের জয়ের নায়ক রমেশ ও এম্বুলদেনিয়া। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১০ উইকেট ভাগ করে নিয়েছেন এই দুইজন। বাঁহাতি স্পিনার এম্বুলদেনিয়ার প্রাপ্তি ৩৫ রান দিয়ে ৫ উইকেট। আর অফ স্পিনার রমেশের শিকার ৬৬ রানে ৫টি।
ইনিংসের ১০ উইকেট দুই স্পিনারের নেওয়ার ঘটনা শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটে এটি দ্বিতীয়বার। ২০০২ সালে গলেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৫টি করে উইকেট নিয়েছিলেন সানাৎ জয়াসুরিয়া ও মুত্তিয়া মুরালিধরন।
স্পিনারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স ছাপিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার উঠেছে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার হাতে। প্রথম ইনিংস শেষে পিছিয়ে পড়া দলকে বড় লক্ষ্য এনে দেওয়ার কারিগর ১৫৫ রানে ছিলেন অপরাজিত।
দুই টেস্ট মিলিয়ে মোট ১৮ উইকেট নেওয়া রমেশ জিতেছেন সিরিজ সেরার পুরস্কার। ম্যাচে ক্যারিবিয়ানদের ২০ উইকেটই নিয়েছেন স্পিনাররা।
৮ উইকেটে ৩২৮ রান নিয়ে লক্ষ্য আরও বাড়ানোর জন্য শুক্রবার সকালে ব্যাটিংয়ে নামে শ্রীলঙ্কা। জেসন হোল্ডারের বলে ৩৯ রান করা এম্বুলদেনিয়া বোল্ড হলে আর ব্যাটিং করেনি তারা। সকালে কেবল ২.৪ ওভার খেলে ৯ উইকেটে ৩৪৫ রানে ঘোষণা করে দেয় ইনিংস।
বিশাল রান তাড়া করতে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হার এড়াতে দিনের ৯৩ ওভার ব্যাটিং করতে হতো। কিন্তু তারা পারেনি টিকে থাকতে। শুরুতে যদিও কিছুটা আভাস দিয়েছিল লড়াইয়ের। কিন্তু শেষ দিকে পড়ে ব্যাটিং ধসের মুখে।
ইনিংসের অষ্টম ওভারেই প্রতিপক্ষ শিবিরে ছোবল দেন রমেশ। এলবিডব্লিউ করে দেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটকে। শুরুর সেই ধাক্কা সামাল দিয়ে দলকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালান জার্মেইন ব্ল্যাকউড ও এনক্রুমা বনার।
এই দুইজনের ৫০ রানের জুটি ভাঙতে পারত ২৯ রানেই। মেন্ডিসের বলে শর্ট মিডউইকেটে ২৪ রানে থাকা ব্ল্যাকউডের ক্যাচ মুঠোয় জমাতে পারেননি দিমুথ করুনারত্নে।
লাঞ্চ বিরতির ঠিক আগের ওভারে ব্ল্যাকউডকে ফেরান এম্বুলদেনিয়া। ঝুলিয়ে দেওয়া বল ড্রাইভ করে প্রথম স্লিপে ধরা পড়েন ক্যারিবিয়ান ওপেনার (৪ চারে ৩৬)।
বেশিক্ষণ টিকেননি শেই হোপ। মেন্ডিসকে পুল করে স্কয়ার লেগ সীমানায় তিনি ধরা পড়ার পর সফরকারীদের ব্যাটিং ধসের শুরু। এই অফ স্পিনারের পরের বলেই শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়ে গোল্ডেন ডাকের তেতো স্বাদ পান রোস্টন চেইস। ওভারের শেষ বলে স্লিপে ক্যাচ দেন কাইল মেয়ার্স।
হোল্ডারকে টিকতে দেননি এম্বুলদেনিয়া। এই স্পিনারই পরে ভাঙেন বনারের প্রতিরোধ। ১৪৩ বলে ৪৪ রান করা এই ব্যাটসম্যান বোল্ড হন কাট শট খেলার চেষ্টায়।
এরপর আর কেউই দলের হাল ধরতে পারেননি। কেবল ১৩ ওভার খেলে ৪০ রান তুলতেই শেষ আট উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ২০৪
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ২৫৩
শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংস: (আগের দিন ৩২৮/৮) ১২১.৪ ওভারে ৩৪৫/৯ ডিক্লে: (ধনাঞ্জয়া ১৫৫*, এম্বুলদেনিয়া ৩৯; পেরমল ৪০-৪-১০৬-৩, চেইস ২৭-২-৮২-২, ওয়ারিক্যান ২৯-৫-৭৬-০, রোচ ৮-০-২৭-০, হোল্ডার ৯.৪-১-২৪-১, ব্র্যাথওয়েট ৫-০-১১-১, বনার ৩-১-৯-০)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২৯৭) ৫৬.১ ওভারে ১৩২ (ব্র্যাথওয়েট ৬, ব্ল্যাকউড ৩৬, বনার ৪৪, হোপ ১৬, চেইস ০, মেয়ার্স ০, হোল্ডার ৩, ডা সিলভা ৪*, রোচ ১৩, পেরমল ১, ওয়ারিক্যান ৩; এম্বুলদেনিয়া ২০.১-৬-৩৫-৫, রমেশ ২৫-৬-৬৬-৫, জয়াবিক্রমা ১০-৩-২৩-০, আসালাঙ্কা ১-০-২-০)
ফল: শ্রীলঙ্কা ১৬৪ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা
ম্যান অব দা সিরিজ: রমেশ মেন্ডিস
সিরিজ: দুই টেস্টের সিরিজ ২-০ তে জিতেছে শ্রীলঙ্কা