আফ্রিদির ছোবলের পর মাঠে ফিরে নতুন চ্যালেঞ্জে তাকিয়ে ইয়াসির

নিজেকে নিয়ে ছিল ভয়। মনে চেপে বসেছিল শঙ্কা, না জানি কী হয়! শুধু নিজের বেদনায় বুঁদ থাকার উপায়ও নেই। দলের বিপর্যয়ের কষ্টও সঙ্গী হলো। হেলমেটে বলের আঘাতে মাঠ ছাড়ার পর সব মিলিয়ে মিশ্র একটা অনুভূতির ঢেউয়ে দোল খাচ্ছিলেন ইয়াসির আলি চৌধুরি। সময়ের সঙ্গে সব সামলে নিয়েছেন। চট্টগ্রাম টেস্টে অভিষিক্ত ব্যাটসম্যান এখন তাকিয়ে মিরপুর টেস্টের চ্যালেঞ্জে।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Dec 2021, 02:39 PM
Updated : 2 Dec 2021, 03:50 PM

পাকিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের চতুর্থ দিনে শাহিন শাহ আফ্রিদির বল লাগে ইয়াসিরের হেলমেটে। তখন ব্যাটিং চালিয়ে গেলেও পরের ওভার শেষেই মাঠ ছাড়েন এই ব‍্যাটসম‍্যান। পরে স্ক‍্যান করতে হাসপাতাল গেলে তাকে ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।

সেই টেস্টে আর অংশ নিতে পারেননি ইয়াসির। তবে মিরপুর টেস্টের জন্য তিনি পুরোপুরি ফিট। বৃহস্পতিবার শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে দলের সঙ্গে অনুশীলনও করেন পুরোদমে।

পরে বিসিবির ভিডিও বার্তায় তিনি ফিরে গেলেন আগের টেস্টে। ২৫ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান বললেন, মাঠ ছাড়ার সময় অনেক রকমের অনুভূতি ভীড় করেছিল তার মনে।

“এটা অনেক হতাশাজনক ছিল। কারণ, আমি যেভাবে ব্যাটিং করছিলাম, সেভাবে করে যেতে পারলে দল হয়তো আরেকটু ভালো অবস্থানে থাকতে পারত। ওই সময় নতুন ব্যাটসম্যান নেমে ব্যাটিং করাটা ততটা সহজ নয় সবসময়। আমি বলব, একটু তো কষ্ট লেগেছে, যখন দেখেছি আমি আউট হওয়ার পর এরকমভাবে কেউ ব্যাটিং করতে পারেনি।”

“আসলে একটু ভয় পেয়েছিলাম, কারণ মাথায় বল লেগেছিল। সত্যি কথা বলতে, একটু ভয়ে ছিলাম।  আবার একটু কষ্টও পাচ্ছিলাম, আমার অভিষেক ম্যাচ, দলকে একটু ভালো জায়গায় নিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু শেষ করতে পারিনি। মিশ্র অনুভূতি ছিল। ভয় এবং কষ্টের মিশ্র অনুভূতি।”

বাইরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ইয়াসির খেলছিলেন দুর্দান্ত। জাতীয় দলের সেট আপে আসার ৯৫৫ দিন পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার। প্রথম ইনিংসে ভালো করতে পারেননি। দ্বিতীয় ইনিংসে তা পুষিয়ে দেওয়ার পথে ছিলেন। বিপর্যয়ে নেমে সাবলিল ব্যাটিং ও লিটন দাসের সঙ্গে জুটিতে এগিয়ে নিচ্ছিলেন দলকে। এরপরই ওই আঘাত। মাঠ ছাড়েন তিনি ৬ চারে ৩৬ রান করে।

তিনি বাইরে যাওয়ার পর আর সেভাবে দাঁড়াতে পারেননি কেউ। দল তাই পারেনি লিড আরও বড় করে পাকিস্তানকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলতে।

এতকিছুর মাঝে একটু স্বস্তি তার পাওয়ার কথা, অভিষেকে নিজের ছাপ রাখতে পেরেছেন। কম সময় তো অপেক্ষায় থাকতে হয়নি! একাদশ থেকে বারবার দূরে থাকার সেই সময়টায় কীভাবে নিজেকে উজ্জীবিত রাখতেন, সেই গল্প শোনালেন ইয়াসির।

“এটা খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল। অনেকদিন দলের সঙ্গে থাকা হচ্ছিল। কিন্তু ম্যাচ খেলা হচ্ছিল না। আমি আগেও বলেছি, আমি যে জায়গায় ছিলাম, এটাই অনেকের কাছে স্বপ্নের মতো। ওই জিনিসটা চিন্তা করে নিজেকে অনুপ্রাণিত করতাম, ‘ইয়াসির, তোমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। যখন সুযোগ আসে, তখন সেটা যেন তুমি কাজে লাগাতে পারো। এই চিন্তা সব সময় মাথায় ছিল।”

“এছাড়া সবসময় সতীর্থরা, বড় ভাইরা, বন্ধুরা, কোচ, যারাই ছিল, সবসময় অনুপ্রাণিত করতেন যে, ‘রাব্বি, কষ্ট করছো, যখনই সুযোগ পাবে, জানি তুমি এটা কাজে লাগাবে।”

অভিষেকে নিজেকে কিছুটা জানান দিয়ে ইয়াসির এখন তাকিয়ে পরের চ্যালেঞ্জে। সাফল্যের পথে হাঁটতে তার মন্ত্র, প্রক্রিয়া ঠিক রাখা।

“আমাদের যে জিনিসটা করতে হবে… জানি না, উইকেট কেমন হবে, উইকেটের আচরণ দেখে ওভাবে করতে হবে…। মূল ব্যাপারটি হচ্ছে, যে প্রক্রিয়া আছে, তা আমাদের ধরে রাখতে হবে। সবকিছু সিম্পল রেখে উইকেট যেরকম চায়, ওরকম ব্যাটিং করা…।”

শনিবার থেকে শুরু পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের দ্বিতীয় টেস্ট।