তাইজুলের ৭ উইকেটে বাংলাদেশের লিড

দিনের শুরুতে সামনে ছিল যেন ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু।’ তাইজুল ইসলামের বাঁ হাতে চড়ে বাংলাদেশ তা দোর্দণ্ড প্রতাপে পার হয়ে গেল দুই সেশনেই। কোনো উইকেট না হারিয়ে ১৪৫ রান নিয়ে দিন শুরু করা পাকিস্তান এ দিন সব উইকেট হারিয়ে যোগ করতে পারল না আর ১৪৫ রানও। তাইজুলের রেকর্ড গড়া বোলিংয়ে বাংলাদেশ পেল লিড।

ক্রীড়া প্রতিবেদকচট্টগ্রাম থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Nov 2021, 10:01 AM
Updated : 28 Nov 2021, 10:01 AM

চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিনে পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে অলআউট ২৮৬ রানে। বাংলাদেশের লিড ৪৪ রানের।

তাইজুলের শিকার ১১৬ রানে ৭ উইকেট। পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড এটিই।

উইকেটে টার্ন মিলেছে কিছুটা। তবে খুব স্পিন সহায়ক নয়। তারপরও মোহনীয় ফ্লাইট, গতিবৈচিত্র আর ক্রিজের কার্যকর ব্যবহারে ধ্রুপদি বাঁহাতি স্পিনের প্রদর্শনী মেলে ধরেন তাইজুল।

আলাদা করে বলতে হবে ইবাদত হোসেন চৌধুরির কথাও। উইকেট স্রেফ দুটি পেলেও দিনজুড়ে দুর্দান্ত বোলিং করে তাইজুলকে সঙ্গ দেন এই পেসার।

পাকিস্তানের দুই ওপেনার ছাড়া আর কোনো ব্যাটসম্যান ছুঁতে পারেনি ৪০ রানও। ৯৩ রান নিয়ে দিন শুরু করা আবিদ আলি আউট হন ১৩৩ রানে। 

পাকিস্তান শনিবার দিন শুরু করে কোনো উইকেট না হারিয়ে ১৪৫ রান নিয়ে। বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল দ্রুত উইকেট। তাইজুল প্রথম ওভারেই এনে দেন দুটি!

প্রথম উইকেট অবশ্য ফ্লাইটের সৌজন্যে নয়, ধরা দেয় কিছুটা ব্যাটসম্যানের ভুলে। স্টাম্প সোজা বল জায়গা বানিয়ে কাট করার চেষ্টা করেন আব্দুল্লাহ শফিক। বল খানিকটা খাটো লেংথে পড়লেও স্কিড করে সোজা গিয়ে লাগে প্যাডে। অভিষিক্ত ওপেনারের ইনিংস থামে আগের দিনের ৫২ রানেই।

পরের ডেলিভারিটি দুর্দান্ত। ফ্লাইটেই আজহার আলিকে বিভ্রান্ত করেন তাইজুল। ফুল লেংথ বল লেগ-মিডলে পিচ করে সামান্য টার্ন করে ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে লাগে প্যাডে। আম্পায়ার আউট না দিলেও রিভিউ নিয়ে উল্লাসে ভাসে বাংলাদেশ। টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৮ বারের মতো শূন্য রানে ফেরেন আজহার।

আরেক প্রান্তে মুমিনুল বোলিংয়ে আনেন ইবাদতকে। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে তিনি ধরে রাখেন চাপ। সকালে তার স্পেল ৫-৩-৩-০।

প্রথম ১০ ওভারে পাকিস্তান তুলতে পারে কেবল ১০ রান।

৯৩ রানে দিন শুরু করা আবিদকে সেঞ্চুরি ছুঁতে অপেক্ষা করতে হয় দশম ওভার পর্যন্ত। ২০৯ বলে তিনি পা রাখেন শতরানে। ১৫ টেস্টে ৩৪ বছর বয়সী ব্যাটসম্যানের এটি চতুর্থ সেঞ্চুরি।

ইবাদতের প্রান্ত থেকে বোলিংয়ে এসে মেহেদী হাসান মিরাজ বোল্ড করে দেন বাবর আজমকে। ৪৬ বল খেলে ছন্দ না পাওয়া পাকিস্তান অধিনায়ক ফেরেন ১০ রানে।

তাইজুলের দারুণ ফ্লাইট ও লিটনের দুর্দান্ত ক্যাচে এরপর ৮ রানে বিদায় নেন অপ্রথাগত স্টান্সের ব্যাটসম্যার ফাওয়াদ আলম।

একটু পরই আসে আবিদকে থামানোর সুযোগ। তবে তাইজুলের বলে ১১৩ রানে স্লিপে তার ক্যাচ নিতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত।

তারপরও ৪ উইকেট নিয়ে প্রথম সেশন শেষ করে বাংলাদেশ। এক প্রান্ত থেকে টানা ১৬ ওভার বল করে ৩১ রানে ৩ উইকেট নেন তাইজুল।

সেই ধারা বাংলাদেশ ধরে রাখে দ্বিতীয় সেশনেও। ১৪১ কিলোমিটার গতির ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে মোহাম্মদ রিজওয়ানকে ফেরান ইবাদত। একটু পরই আবিদকে ফিরিয়ে বড় বাধা সরান তাইজুল।

২৮২ বলের ইনিংসে ১২ চার ও ২ ছক্কায় ১৩৩ রানে থামেন আবিদ।

হাসান আলিকে ফিরিয়ে তাইজুল পূর্ণ করেন ৫ উইকেট। টেস্ট ক্যারিয়ারে যা তার নবম।

এরপর ইবাদত যখন উড়িয়ে দিলেন সাজিদ খানের স্টাম্প, বেশ বড় লিডের হাতছানি তখন বাংলাদেশের সামনে। তবে শেষ জুটিতে ব্যবধান কিছুটা কমান ফাহিম আশরাফ ও শাহিন শাহ আফ্রিদি। দুজন উইকেটে কাটিয়ে দেন ১২ ওভার। শেষ পর্যন্ত ৩৮ রান করা ফাহিমকে ফিরিয়ে ইনিংস শেষ করেন সেই তাইজুলই।  

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩৩০

পাকিস্তান ১ম ইনিংস: (আগের দিন ১৪৫/০) ১১৫.৪ ওভারে ২৮৬ (আবিদ ১৩৩, শফিক ৫২, আজহার ০, বাবর ১০, ফাওয়াদ ৮, রিজওয়ান ৫, ফাহিম ৩৯, হাসান ১২, সাজিদ ৫, নুমান ৮, আফ্রিদি ১৩; আবু জায়েদ ১২-০-৪১-০, ইবাদত ২৬-৭-৪৭-২, তাইজুল ৪৪.৪-৯-১১৬-৭, মিরাজ ৩০-৭-৬৮-১, মুমিনুল ৩-০-১২-০)।