বিশ্বকাপে ওঠার আনন্দে আত্মহারা মেয়েরা

ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের মেয়েদের পথচলা এক দশকের। কিন্তু কখনও খেলা হয়নি এই সংস্করণের বিশ্বকাপে। দুইবার থমকে যেতে হয়েছিল বাছাই পর্বেই। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হচ্ছে অবশেষে। প্রথমবারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপের মূল পর্বে জায়গা পেয়ে দলের সবাই যেন আনন্দে আত্মহারা। মনের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশের শব্দ খুঁজে পাচ্ছেন না রুমানা-সালমারা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Nov 2021, 04:40 PM
Updated : 27 Nov 2021, 04:44 PM

নিউ জিল্যান্ডে হতে যাওয়া ২০২২ বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব খেলতে বাংলাদেশ নারী দল এখন জিম্বাবুয়েতে। করোনাভাইরাসের প্রকোপে শনিবার মাঝপথে বাতিল হয়ে গেছে বাছাই প্রতিযোগিতা। যা বিশ্বকাপের দুয়ার খুলে দিয়েছে বাংলাদেশের।

বাছাইপর্ব থেকে তিন দল যাওয়ার কথা ছিল মূল পর্বে। টুর্নামেন্টই বাতিল হয়ে যাওয়ায় এই দল তিনটি র‍্যাঙ্কিংয়ের ভিত্তিতে নির্বাচন করেছে আইসিসি। স্বাগতিক নিউ জিল্যান্ডের সঙ্গে আগেই মূল প্রতিযোগিতায় খেলা নিশ্চিত করে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত। ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ে পাঁচ নম্বরে থাকার সুবাদে বাংলাদেশ তাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে। জায়গা পেয়েছে র‍্যাঙ্কিংয়ে সপ্তম ও অষ্টম স্থানে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তানও।

অলরাউন্ডার ও সাবেক অধিনায়ক রুমানা আহমেদ ভিডিও বার্তায় বললেন, এটা তাদের জন্য স্মরণীয় এক দিন।

“আজকের দিনটা আমাদের জন্য অনেক স্মরণীয়, এই দিনেই আমরা বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করেছি। আমরা অনেক ভালোভাবে র‍্যাঙ্কিংয়ে পাঁচে এসেছি, এটা আমার কাছে আনন্দের। দেশবাসীর, সবার দোয়া ছিল বলে আজ এরকম একটা অনুভূতি আমাদের। পরবর্তী লক্ষ্য বিশ্বকাপে গিয়ে যেন আমরা ভালো কিছু করতে পারি। ইনশাআল্লাহ ভালো কিছুই হবে।”

স্বপ্নপূরণের আনন্দে ভাসছেন ব্যাটার ফারজানা হকও। তিনি যেন অনুভূতি প্রকাশের ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না।

“যে স্বপ্নটা আজ পূরণ হয়েছে আমাদের, এটা শুধু আমাদের নয়, ক্রিকেট বোর্ড, ম্যানেজমেন্ট, খেলোয়াড় থেকে শুরু করে সবাই। যে স্বপ্ন আমাদের ছিল, সেটা আস্তে আস্তে বাস্তবায়ন হয়েছে। বুঝিয়ে অনুভূতি বলা যাবে না আসলে কী (অনুভব করছি)। আমাদের যে স্বপ্নটা পূরণ হলো এটা সামনে আমাদের ক্রিকেটের জন্য ভালো হবে।”

“আমরা যখন নিউ জিল্যান্ডে যাব, দৃশ্যগুলো অনেক পরিবর্তন হয়ে যাবে, আমরা সবাই অনেক ভালো খেলব। আমাদের জন্য আপনারা দোয়া করবেন। সামনে যেন বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় বড় অর্জন নিয়ে আসতে পারি।”

এর আগে দুইবার বাছাইপর্ব খেলে প্রতিবারই পঞ্চম হয়েছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। এবার জিম্বাবুয়েতে দুই গ্রুপে ভাগ করে ৯ দল নিয়ে শুরু হয়েছিল বাছাই পর্ব। দুই গ্রুপ থেকে সেরা তিনটি করে দল নিয়ে আয়োজিত হওয়ার কথা ছিল সুপার সিক্স। চূড়ান্ত পর্বের জন্য সেরা তিন দল নির্বাচিত করা হতো সেখান থেকে।

সেই পথে ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। নিজেদের প্রথম ম্যাচে শক্তিশালী পাকিস্তানকে হারানোর পর দ্বিতীয় ম্যাচে তারা উড়িয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্রকে। তৃতীয় ম্যাচটি থাইল্যান্ডের বিপক্ষে হারলেও ‘বি’ গ্রুপের শীর্ষেই ছিল বাংলাদেশের মেয়েরা।

আরেক সাবেক অধিনায়ক ও অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার সালমা খাতুনের বিশ্বাস, বিশ্বকাপের মূল পর্বেও ভালো করবেন তারা।

“আলহামদুলিল্লাহ, বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করে আমরা অনেক আনন্দিত। এটা বলে বোঝানো যাবে না, আমরা কতটা আনন্দিত। সবচেয়ে বড় বিষয়, আমরা এখানে এসেছিলাম বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করতে, সেটায় আমরা সফল হয়েছি। আশা করি, বিশ্বকাপে গিয়ে আমরা ভালো করব, ইনশাল্লাহ।”

করোনাভাইরাস মহামারীতে দেড় বছরের বেশি সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে ছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। ওয়ানডে ক্রিকেটে বিরতি ছিল দুই বছরের। এই মাসের মাঝামাঝি জিম্বাবুয়েতে ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরে তারা।

দাপুটে পারফরম্যান্সে তিন ম্যাচের সিরিজটি বাংলাদেশ জিতে নেয় ৩-০ ব্যবধানে। এই সিরিজ দিয়েই নেতৃত্বের পথচলা শুরু হয় নিগার সুলতানার। বাছাই পেরিয়েও মূল পর্বে যাওয়ার বিশ্বাস তার ছিল। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম সফরে এত বড় সুখবর পেয়ে নিগারের আনন্দে বেড়ে গেছে দ্বিগুণ।    

“যে স্বপ্ন নিয়ে আমরা এখানে এসেছিলাম, তা পূরণ হয়েছে। হয়তো এটা কিছুদিন পরে হতো, কিন্তু আগেই হয়ে গেছে, যার জন্য আমরা বেশি আনন্দিত। আমি বলব, এটা আমাদের সকলের কঠোর পরিশ্রমের ফল। আমরা যদি র‍্যাঙ্কিংয়ে পাঁচে থেকে কোয়ালিফাই করি, আমরা অনেক কষ্ট করেছি। আমরা প্রত্যেকে যে কাজগুলো করেছি, তার ফল হিসেবে এটা পেয়েছি।”

“আমি আরও বেশি খুশি যে প্রথমবার অধিনায়ক হিসেবে এসে আমি এত বড় একটা আনন্দ পেয়েছি। এটা আমাদের দলের জন্য অনেক গর্বের বিষয়। বিশ্বকাপে গিয়ে যেন আমরা ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারি।”

বাংলাদেশ নারী দল ছুটে চলেছে পুরোপুরি দেশীয় কোচিং স্টাফদের তত্ত্বাবধানে। দলের প্রধান কোচ মাহমুদ ইমনও অনুভূতি প্রকাশের শব্দ পাচ্ছেন না।

“এটার অনুভূতি আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আমার কোচিং জীবনের একটা সেরা অর্জন হচ্ছে আজকের এই দিনটা। আমার জীবনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা দিন, বাংলাদেশ নারী দলের জন্যও।”

“বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করা নিয়ে গত এক বছর ধরে আমাদের যে পরিকল্পনা ছিল, দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের একটা আন্তরিক প্রচেষ্টা ছিল যে আমরা বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করব। যাতে বাংলাদেশ নারী দল একটা ভালো অবস্থানে যায়, বিশ্ব দরবারে অন্যতম উচ্চতায় জায়গা করে নিতে পারে। আল্লাহর রহমতে আমরা এটা অর্জন করতে পেরেছি।”

দলের ম্যানেজার ও সাবেক বাঁহাতি পেসার মঞ্জুরুল ইসলামের মতে, স্থানীয় কোচিং স্টাফের তত্ত্বাবধানে এমন অর্জন উদাহরণ হয়ে থাকবে।

“আমাদের স্থানীয় যে কোচিং স্টাফ, তারাও যে এরকম অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে সেটার সবচেয়ে বড় উদাহরণ বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করা। আশা করি, নিউ জিল্যান্ডে গিয়েও আমরা এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারব।”