কানপুর টেস্টে শনিবার নিউ জিল্যান্ডকে ২৯৬ রানে গুটিয়ে দিয়ে ব্যাটিং করছে ভারত। দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে শুবমান গিলকে হারিয়ে ১৪ রান তুলেছে তারা। তৃতীয় দিন শেষে ৬৩ রানে এগিয়ে স্বাগতিকরা।
প্রথম ইনিংসে ভারতকে ৪৯ রানের লিড এনে দেওয়ার মূল কারিগর আকসার। স্পিন সহায়ক উইকেটের সুবিধা কাজে লাগিয়ে ৬২ রান খরচায় তিনি তুলে নেন ৫ উইকেট। মাত্র চার টেস্টের ক্যারিয়ারে এটি তার পঞ্চম পাঁচ উইকেট।
গত ফেব্রুয়ারিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টেস্টের আঙিনায় পা রাখা আকসার এরই মধ্যে দারুণ এক রেকর্ড ছুঁয়েছেন। অভিষেকের বছরে সবচেয়ে বেশিবার ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেওয়ার কীর্তিতে তিনি নাম লিখিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পেসার রোডনি হগের পাশে। ১৯৭৮ সালে তিন টেস্টেই পাঁচবার পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন হগ।
দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে শেষ পর্যন্ত হতাশা সঙ্গী হয় টম ল্যাথাম ও উইল ইয়াংয়ের। ল্যাথাম আউট হন ৯৫ রানে, ইয়াং ৮৯ করে। তাদের ১৫১ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর আর কোনো জুটিই পায়নি নিউ জিল্যান্ড। ৯৯ রানের মধ্যে শেষ ৯ উইকেট হারায় তারা।
বিনা উইকেটে ১২৯ রান নিয়ে খেলতে নামা নিউ জিল্যান্ড শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। আগের দিনের ৭৫ রানের সঙ্গে ১৪ রান যোগ করতেই ইয়াং ধরা পড়েন ঋদ্ধিমান সাহার চোটে এদিন কিপারের দায়িত্বে থাকা শ্রিকর ভারতের গ্লাভসে। রিভিউ নিয়ে ১৫ চারে ৮৯ রান করা কিউই ওপেনারের সেঞ্চুরির স্বপ্ন ভাঙে স্বাগতিকরা।
কেন উইলিয়ামসন ও ল্যাথাম মিলে পার করে দিচ্ছিলেন প্রথম সেশন। ঠিক তখনই ভারতকে সাফল্য এনে দেন উমেশ যাদব। নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক ১৮ রানে এলবিডব্লিউ হলে স্বস্তি নিয়েই লাঞ্চ বিরতিতে যায় ভারত।
এরপর শুরু হয় আকসারের ঝলক। নতুন বলে ১১ ওভারের এক স্পেলে প্রতিপক্ষের মিডল অর্ডার ধসিয়ে দেন তিনি। এই সময় মাত্র ১৪ রান দিয়ে তুলে নেন ৩ উইকেট।
তার প্রথম শিকার রস টেইলর। লেংথ বলে পা বাড়িয়ে ডিফেন্ড করার চেষ্টায় কট বিহাইন্ড হয়ে যান অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান। আকসারের বলেই তাকে ফেরানোর সুযোগ অবশ্য আগেই এসেছিল; কিন্তু স্টাম্পিং করতে পারেননি শ্রিকর ভারত।
আকসারের পরের ওভারে স্লগ সুইপ করে এলবিডব্লিউ হয়ে যান নিকোলাস হেনরি। রিভিউ নিয়েও বাঁচেননি তিনি। সবচেয়ে বড় শিকারটি বাঁহাতি এই স্পিনার ধরেন কয়েক ওভার পরই। সেঞ্চুরি থেকে ৫ রান দূরে থাকতে তার বলে স্টাম্পড হয়ে যান ল্যাথাম। শেষ হয় তার ৪০১ মিনিট ২৮২ বল স্থায়ী ১০ চারে ৯৫ রানের ইনিংস।
এরপর আসা-যাওয়ার মাঝে থাকে নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। অভিষিক্ত রাচিন রবীন্দ্রকে বোল্ড করে দেন রবীন্দ্র জাদেজা। টম ব্লান্ডেল ও টিম সাউদিকে বোল্ড করে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন আকসার।
টেস্টে সপ্তম ইনিংসে এসে পঞ্চম পাঁচ উইকেট তুলে নিলেন তিনি। সবচেয়ে কম ইনিংসে পাঁচবার পাঁচ উইকেট নেওয়ার রেকর্ডে যা যৌথভাবে দ্বিতীয় দ্রুততম। বসেছেন তিনি অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পেসার চার্লি টার্নার ও ইংল্যান্ডের সাবেক পেসার টম রিচার্ডসনের পাশে। রেকর্ডটি হগের, ৬ ইনিংসে।
কাইল জেমিসনের পর উইলিয়াম সমারভিলকে ফিরিয়ে তিনশর আগে নিউ জিল্যান্ডের প্রথম ইনিংস শেষ করে করে দেন অশ্বিন।
দিনের শেষ বেলায় ব্যাটিংয়ে নামা ভারতকে খেলতে হতো কেবল পাঁচ ওভার। এর মাঝেই নিউ জিল্যান্ডকে সাফল্য এনে দেন জেমিসন। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই তিনি স্টাম্প এলোমেলো করে দেন শুবমানের।
এই উইকেটে জেমিসন গড়েন দারুণ এক রেকর্ড; নিউ জিল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে কম টেস্টে ৫০ উইকেট নেওয়ার কীর্তি। ৯ টেস্টে মাইলফলকটি ছুঁয়ে তিনি ভেঙে দেন শেন বন্ডের ১২ টেস্টে গড়া আগের রেকর্ড। এই তালিকায় সবার উপরে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পেসার টার্নার, ৬ টেস্টেই নিয়েছিলেন তিনি ৫০ উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত ১ম ইনিংস: ৩৪৫
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: (আগের দিন ১২৯/০) ১৪২.৩ ওভারে ২৯৬ (ল্যাথাম ৯৫, ইয়াং ৮৯, উইলিয়ামসন ১৮, টেইলর ১১, নিকোলস ২, ব্লান্ডেল ১৩, রাচিন ১৩, জেমিসন ২৩, সাউদি ৫, সমারভিল ৬, এজাজ ৫*; ইশান্ত ১৫-৫-৩৫-০, উমেশ ১৮-৩-৫০-১, অশ্বিন ৪২.৩-১০-৮২-৩, জাদেজা ৩৩-১০-৫৭-১, আকসার ৩৪-৬-৬২-৫)
ভারত ২য় ইনিংস: ৫ ওভারে ১৪/১ (মায়াঙ্ক ৪*, শুবমান ১, পুজারা ৯*; সাউদি ২-১-২-০, জেমিসন ২-০-৮-১, এজাজ ১-০-৪-০)