দুই মেরুতে থাকা এমন দুটি দল এবার মুখোমুখি হচ্ছে ক্রিকেটের সবচেয়ে অভিজাত সংস্করণের লড়াইয়ে। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের পথচলা। পাকিস্তানের যা এই চক্রের দ্বিতীয় সিরিজ। চট্টগ্রামে খেলা শুরু সকাল ১০টায়।
নিজেদের সবশেষ টেস্টে দুই দলেরই প্রাপ্তি ছিল দারুণ জয়। অগাস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে প্রথম টেস্ট হারার পর দ্বিতীয় টেস্টে দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়ায় পাকিস্তান। বাংলাদেশের জয়টি ছিল জুলাইয়ে জিম্বাবুয়ে সফরে। তবে প্রতিপক্ষ তুলনামূলক দুর্বল হলেও খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো জয়টি ছিল স্মরণীয়।
তবে চিত্র বদলে গেছে সাম্প্রতিক সময়ে। টি-টোয়েন্টিতে খারাপ সময়ের হাওয়ায় বাংলাদেশের ক্রিকেট সামগ্রিকভাবেই টালমাটাল। টেস্ট নিয়েও তাই শঙ্কার অবকাশ আছে যথেষ্টই। সেই টি-টোয়েন্টির সুবাতাসেই আবার পাকিস্তানের ক্রিকেট আরও বেশি ফুরফুরে। টেস্ট দলের আত্মবিশ্বাসও তাই তুঙ্গে।
এবার সামনে পাকিস্তান, শক্তিতে যারা যোজন যোজন এগিয়ে। সেই দলের বিপক্ষে খেলতে হবে দলের সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল, সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আর হাসান ও সেরা ফাস্ট বোলার তাসকিন আহমেদকে ছাড়া। চোট জর্জর ও ভগ্ন মনোবলের দলের জন্য ম্যাচটি কঠিন হবে, জানেন মুমিনুলও। তবে অধিনায়ক হিসেবে আশার গান গাইলেন তিনি।
“এই ফরম্যাট (টেস্ট) ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের মধ্যে অনেক তফাৎ। তবে টেস্ট ক্রিকেটেও পকিস্তান অনেক এগিয়ে আছে। আমার কাছে মনে হয়, বিশ্বের সেরা ও শক্তিশালী দলগুলির একটা। ওদের সঙ্গে খুব চ্যালেঞ্জিং হবে।”
“সিনিয়র ক্রিকেটার কয়েকজন নেই। তরুণ অধিনায়ক হিসেবে এটা আমার জন্য ও দলের সবার জন্য হতাশাজনক। তবে এই জায়গায় পড়ে থাকলে হবে না। নতুন যারা খেলবে, জুনিয়র যারা আছে, সবার জন্য সুযোগ এটা নিজেদের মেলে ধরার ও নিজেদের সামর্থ্য দেখানোর জন্য।”
“ওদের ঘরের মাঠ, নিজেদের কন্ডিশন। ওদেরকে কখনোই হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। কোনো দলকেই আসলে হালকা করে নেওয়ার সুযোগ নেই। ওদের কয়েকজন ক্রিকেটার নেই। তবে যারা আছে, এই কন্ডিশনেই তো খেলে। বাংলাদেশ দলে তারুণ্য ও অভিজ্ঞতার সমন্বয় আছে। হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই।”
“ওরা জানে যে ওদের কন্ডিশনে খেলা। কাজটা তাই কঠিনই হবে (আমাদের জন্য)। কন্ডিশন বুঝতে তাই একটু সময় লাগে। ওরা অবশ্যই আমাদের কঠিন সময় দিতে পারে। আমাদের চেষ্টা থাকবে শতভাগ দেওয়ার ও হার্ড ক্রিকেট খেলার।”
আরেকটি চ্যালেঞ্জ আছে দুই দলের জন্যই। গত কয়েক মাস টানা টি-টোয়েন্টি খেলে এবার টেস্ট খেলতে নামতে হচ্ছে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ও কোনো প্রস্তুতি ম্যাচ ছাড়াই। ধুমধাড়াক্কা ক্রিকেট ছেড়ে এবার যে সময় কাটানোর খেলায় মন দিতে হবে, দলকে তা মনে করিয়ে দিলেন বাবর।
“কাজটা সহজ নয় (টি-টোয়েন্টি থেকে টেস্টে মনোযোগ)। মাঝখানে সময় ছিল খুবই কম। একদিন ছিল ভ্রমণ, আরেকদিন যথাযথ অনুশীলন হয়েছে, আর আজকে। তবে পেশাদার হিসেবে যতটা দ্রুত সম্ভব ‘সুইচ অন’ করতে হবে এবং টেস্টের আবহে ঢুকতে হবে।”
“ধৈর্য রাখতেই হবে। আড়াই মাস ধরে টানা সাদা বলের ক্রিকেট খেলে এখন দ্রুত টেস্ট খেলতে হবে। ধৈর্য তাই বেশি রাখতে হবে। যতটা ধৈর্য আমরা ধরতে পারব, ধীরস্থির রাখতে পারব নিজেদের, সিদ্ধান্ত ঠিকঠাক নিতে পারব, তা পারলে ফল আমাদের পক্ষে আসবে।”
ধৈর্যের সেই খেলায় উপযুক্ত ক্রিকেটারদের বাছাইও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। পাকিস্তান যেখানে একাদশ একরকম ঠিক করেই ফেলেছে, বাংলাদেশের জন্য সেখানে আছে কিছু প্রশ্ন। ওপেনিংয়ে সাদমান ইসলামের সঙ্গী কে? এমনিতে সাইফ হাসানই হওয়ার কথা। তবে ম্যাচের আগের দিন মাহমুদুল হাসান জয়কেও ওপেনিংয় বিবেচনা করার কথা বললেন অধিনায়ক মুমিনুল হক।
সাকিব না থাকলে দলের যেটা বরাবরই সমস্যা, সেটি আছে এবারও। বোলার একজন কম নেওয়া হবে নাকি ব্যাটসম্যান? চার বোলার নিয়ে খেললে অভিষেক হয়ে যেতে পারে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ইয়াসির আলি চৌধুরির। পাঁচ বোলার মাঠে নামালে ইয়াসিরকে অপেক্ষা করতে হবে আরও। পাঁচ বোলার হলে পেসার তিনজন নাকি স্পিনার তিনজন, সেই ভাবনাও আছে।
দুই দলের যা সাম্প্রতিক চিত্র, তাতে ড্র করতে পারলেও বাংলাদেশের জন্য হবে বড় পাওয়া। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে আগেরবার তলানিতে থাকা দল তাতে এবার শুরুতেই পাবে নিজেদের লক্ষ্য পূরণের ভরসা। সেই ‘লক্ষ্য’ অবশ্য খুব বড় কিছু নয়। নিজেদের বাস্তবতা বুঝেই হয়তো মুমিনুল বললেন, আগের চেয়ে এবার স্রেফ ২-৩ ধাপ এগোতে পারলেই খুশি থাকবেন তারা।
সেই লক্ষ্য পূরণের পথটাও হবে খুব কঠিন। নিউ জিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দেশগুলোতে সফর আছে, যেখানে কখনোই ভালো করার অভিজ্ঞতা নেই বাংলাদেশের। পয়েন্ট যতটা বেশি সম্ভব, ঝুলিতে ভরতে হবে মূলত ঘরের মাঠ থেকেই।
মুমিনুলরা কি পারবেন? সত্যিই দারুণ কিছু করতে পারলে প্রাপ্তি শুধু পয়েন্টই নয়, দেশের ক্রিকেটেও চলমান আঁধার ফুঁড়ে খানিকটা আলোর রেখা মিলবে।