লোকে মনে রাখে শেষটা। লোকে মনে রাখে সাম্প্রতিক সময়টা। লিটন দাসের জন্য তা ভীষণ রকম মলিন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও এর আগে দেশের মাঠে নিউ জিল্যান্ড সিরিজে তিনি নিজেকে হারিয়ে খুঁজেছেন। গত মার্চ-এপ্রিলে নিউ জিল্যান্ড সফরে টি-টোয়েন্টি সিরিজ কেটেছে তার যাচ্ছে তাই।
সব মিলিয়ে এ বছর ১৬ টি-টোয়েন্টি ইনিংসে তার গড় ১৩, স্ট্রাইক রেট ৯৫.৪১। ছয় বছরের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এতটা বাজে বছর তার আসেনি।
খুব স্বাভাবিকভাবেই বলে দেওয়া যায়, ফর্মহীনতায় ভুগছেন লিটন। পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে তো দলে জায়গাই পাননি।
সেই লিটন শুক্রবার পাকিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে খেলতে নামবেন বেশ ভালো ফর্মে থেকে। এই সংস্করণে সবশেষ ইনিংসটিই যে তার ৯৫ রানের! সেটিও দলের ভীষণ বিপদের সময় উইকেটে গিয়ে।
সমস্যা হলো, সেই ইনিংসটি ছিল জুলাই মাসে। লোকের তাই ভুলে যাওয়া স্বাভাবিক যে টেস্টে এই বছর ব্যাট হাতে বেশ ধারাবাহিক লিটন। ৫ টেস্ট খেলে তার ফিফটি চারটি। ৪৬.২৫ গড়ে রান ৩৭০। তার ছয় বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারের সফলতম বছর।
রঙিন আর সাদায় এভাবেই চলছে লিটনের উল্টো রথ।
“টি-টোয়েন্টিতে লিটন অনেক শট বানিয়ে খেলতে যায় বা তৈরি করতে চায়। এখানেই বিপদ ডেকে আনে। ক্রিকেটিং শট ওর সবই আছে। টেস্টে সেগুলো কাজে লাগিয়ে রান করে। টি-টোয়েন্টিতে জোর করে কিছু চেষ্টা করে। যে শট খেলার দরকার নেই, সেসব চেষ্টা করে। ক্রিকেটার হিসেবে আমার কাছে এটাই সমস্যা মনে হয়।”
“টি-টোয়েন্টিতে সে মনে হয় বাড়তি চাপ নিয়ে নেয় রান করার। অথচ ওকে কখনোই চাপ দেওয়া হয় না। সবসময়ই নিজের খেলাটা খেলতে বলা হয়। সহজাত খেলা খেললেই ওর রান করার কথা।”
সেই সহজাত খেলা লিটন খেলতে পারেননি ২০ ওভারের ক্রিকেটে। এখন টেস্ট ক্রিকেটে কি পারবেন? টি-টোয়েন্টির এই বাজে সময় টেস্টের সুসময়কে গিলে খাওয়ার শঙ্কা থাকেই। হাবিবুল অবশ্য আশাবাদী, টেস্টে লিটনের ধারাবাহিকতাই দেখা যাবে।
“আমার মনে হয় না প্রভাব পড়বে। পড়া উচিত নয়। আগেও যখন সে টি-টোয়েন্টিতে ভালো করছিল না, তখনও টেস্টে, ওয়ানডেতে ভালো করেছে। আশা করি, এবারও পারবে।”
আশার কথা শোনালেন টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হকও। টি-টোয়েন্টিতে খারাপ সময়ের চক্করে লিটনের আত্মবিশ্বাস একদমই শূন্যতে থাকার কথা। তাকে জাগিয়ে তোলার বড় দায়িত্ব টিম ম্যানেজমেন্ট ও অধিনায়কের। তবে মুমিনুল বললেন, লিটন নিজেই তা সামলে নিয়েছেন।
“টি-টোয়েন্টি আর টেস্টে কিন্তু অনেক পার্থক্য আছে। আমার কাছে মনে হয়, সে নিজেই ব্যাপারটি কাটিয়ে উঠেছে এতদিনে। গত এক বছরে ওর টেস্ট গড় ৪৫ বা ৫০-এর মতো। আমার মনে হয় না, টি-টোয়েন্টির ফর্ম ওর এখানে প্রভাব ফেলবে। দলের সবাই ওর পাশে আছে। মানসিকভাবেও বেশ চনমনে আছে দেখলাম।”
সত্যিই চনমনে থাকলে দলের জন্যই তা দারুণ খবর। তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসানদের অনুপস্থিতিতে অনভিজ্ঞ হয়ে পড়া ব্যাটিং অর্ডার যে ভরসার জন্য তাকিয়ে থাকবে লিটনের ব্যাটে।