‘নিউক্লিয়াস’ মুশফিকের সেরা ব্যাটিংয়ের অপেক্ষা

দলের অনুশীলন দুপুর দেড়টায়। মুশফিকুর রহিম মাঠে হাজির দুপুর ১২টায়। হালকা একটু গা গরম করে তিনি নেমে গেলেন নেটে। তিন আর্ম থ্রোয়ারকে নিয়ে আধ ঘণ্টা চলল তার ব্যাটিং অনুশীলন। এরপর মিনিট দুয়েক জিরিয়ে নিয়ে আবার ১৫ মিনিটের মতো হালকা নক আর সুইপ শট ঝালাই করে নিলেন। সকালে মাঠে আসা পাকিস্তানের অনুশীলন তখনও শেষ হয়নি। মোহাম্মদ রিজওয়ান, ফাওয়াদ আলমরা বারবার ফিরে তাকাচ্ছিলেন মুশফিকের দিকে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকচট্টগ্রাম থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2021, 01:50 PM
Updated : 24 Nov 2021, 01:50 PM

পাকিস্তানিরা অবাক হলেও বাংলাদেশের ক্রিকেটে এটি নিয়মিত দৃশ্য। মুশফিক বরাবরই সবার আগে অনুশীলনে আসেন। ম্যাচ-সিরিজের আগে এরকম দেড়-দুই ঘণ্টা আগে মাঠে এসে নিজের মতো করে তার এক দফায় ব্যাটিং শানিত করে নেওয়া নতুন কিছু নয়। তবে এখনকার পরিস্থিতি আর এই সময়টা মুশফিকের জন্য নতুন!

বাংলাদেশের ক্রিকেটে তিনি মহীরূহ। তবে বিশাল বটবৃক্ষও অনেক সময় ঝড়-ঝাপটায় কাবু হয়! সময় তাদেরকেও মলিন করে তোলে। গত কিছুদিনে যে অভিজ্ঞতা হলো মুশফিকের, তার ক্যারিয়ারে তা আগে খুব একটা হয়নি।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর তিনি জায়গা পাননি পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলে। বিশ্বকাপে তার যা পারফরম্যান্স, তাতে জায়গা না পাওয়াটা বিস্ময়কর নয়। তবে বিতর্ক ছড়ায় নির্বাচকদের ব্যাখ্যা ও মুশফিকের প্রতিবাদ ঘিরে। প্রধান নির্বাচক দল ঘোষণার সময় জানান, টি-টোয়েন্টি সিরিজে বিশ্রাম দিয়ে মুশফিককে টেস্ট সিরিজের প্রস্তুতির সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

মুশফিক পরে বেশ ক্ষোভ নিয়েই বলেন, এটিকে তিনি বিশ্রাম নয়, বাদ হিসেবেই নিচ্ছেন। নির্বাচকদের ব্যাখ্যা ও ক্রিকেটারদের সঙ্গে যোগাযোগের ঘাটতি নিয়েও অভিযোগ করেন তিনি। সেই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিসিবি থেকে আবার তাকে তলব করা হয় আলোচনার জন্য। সব মিলিয়ে ব্যাট হাতে খারাপ সময়ের পাশাপাশি মাঠের বাইরেও কয়েকটি দিন কাটে তার ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ।

এরপর অবশ্য যথারীতি ট্র্যাকে ফেরেন। টেস্টের প্রস্তুতির জন্য আগেভাগেই চলে আসেন চট্টগ্রামে। চলতে থাকে তার চেনা রুটিন।

তবে ব্যাট হাতে তিনি চেনা চেহারায় নেই এই সংস্করণেও। সাম্প্রতিক সময়ে তার টি-টোয়েন্টি ফর্ম নিয়ে আলোচনা হয়েছে অনেক। কিন্তু টেস্টেও এই বছর তার পারফরম্যান্স মোটেও মুশফিক-সুলভ নয়।

এই বছর ৫টি টেস্ট খেলে তার ফিফটি মোটে দুটি। একটিতে অপরাজিত থাকেন ৬৮ রানে, আরেকটিতে ফেরেন ৫৪ রানে। আরও দুটি ইনিংসে আউট হন ৪০ রানে, আরেকটি ৩৮ রানে। এভাবে বারবার থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে না পারা তার জন্য অস্বাভাবিকই। সবশেষ টেস্টে গত জুলাইয়ে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আউট হন ১১ রানে।

এমনিতেই বাংলাদেশ দল মিডল অর্ডারে বড় রানের জন্য তাকিয়ে থাকে তার ব্যাটের দিকে। দলের অবস্থার কারণে এবার তার ওপর ভারটা আরও বেশি। দুই অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল নেই এই টেস্টে। সবশেষ টেস্টে ১৫০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলা মাহমুদউল্লাহ এখন অবসরে।

এই বাস্তবতাই তুলে ধরলেন জাতীয় নির্বাচক হাবিবুল বাশার। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় সাবেক এই অধিনায়ক বললেন, সেরা ফর্মের মুশফিককে বড্ড বেশি প্রয়োজন এই সময়টায়।

“মুশফিকের সেরাটা চাই এবার। বাংলাদেশকে যদি ভালো করতে হয় টেস্ট ক্রিকেটে, মুশফিকের ভালো করা জরুরি। আমাদের এই টেস্ট দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার সে। এই দলে ওর দায়িত্ব অনেক বেশি। আগেও অনেকবার করেছে সে, তবে এবার চাওয়া আরও বেশি থাকবে। কারণ এই দলের ব্যাটিং আবর্তিত হবে ওকে ঘিরেই। এখানে তামিম, সাকিব, রিয়াদ (মাহমুদউল্লাহ) নেই। এই দলের ব্যাটিংয়ের নিউক্লিয়াস মুশফিকই।”

টি-টোয়েন্টি দলে মুশফিকের না থাকার ধরন নিয়ে বিতর্কে আর যেতে চাইলেন না হাবিবুল। তবে তার বিশ্বাস, এটা মুশফিকের জন্য ভালোই হয়েছে।

“আমি নিশ্চিত, এই বিরতি ওর কাজে লাগবে। মানসিকভাবে চাঙা ও চনমনে হয়েছে। সে চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার। আমি নিশ্চিত যে টেস্টে সে ভালো করবে।”

পাকিস্তানের বিপক্ষে মুশফিকের রেকর্ডও বলার মতো নয়। চার টেস্ট খেলে ফিফটি কেবল একটি, গড় মোটে ২৩.৭৫। ব্যক্তিগত হিসাব-নিকাশ চুকানোর পালাও তাই আছে তার। সব মিলিয়ে অপেক্ষা এবার মুশফিকের জ্বলে ওঠার।