স্বপ্নাতুর চোখে টেস্টের সীমানায় মাহমুদুল

প্রথম দিনের অনুশীলনে নতুন কারও দিকে নজর একটু বেশিই থাকে। মাহমুদুল হাসান জয়ের ক্ষেত্রে সুযোগ এসে গেল শুরুতেই। এমনিতে তিনি ওপেনার নন। কিন্তু ওপেনার সাদমান ইসলামের পাশের নেটে পাঠানো হলো মাহমুদুলকে। কোচ, ব্যাটিং কোচ ও টিম ডিরেক্টরের দৃষ্টিও নিবদ্ধ সেই নেটে। টেস্ট স্কোয়াডে থাকার সত্যিকারের স্বাদ পেয়ে গেলেন তরুণ ব্যাটসম্যান।

ক্রীড়া প্রতিবেদকচট্টগ্রাম থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2021, 12:09 PM
Updated : 24 Nov 2021, 12:09 PM

পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টের জন্য বাংলাদেশের পুরো স্কোয়াডের একসঙ্গে প্রথম অনুশীলন হলো বুধবারই। সাদমানের সঙ্গে ওপেনার হিসেবে স্কোয়াডে আছেন সাইফ হাসান। তবে জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামের ড্রেসিং রুম প্রান্তের নেটে সাদমানের পাশে শুরুতে ব্যাটিং করলেন মাহমুদুল।

পেস বোলিং অবশ্য নয়, মাহমুদুল শুরুতে খেললেন স্পিনারদের। মেহেদি হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলামদের সামনে শুরুতে কিছুটা অস্বস্তি দেখা গেল তার ব্যাটিংয়ে। মিরাজ এসময় তাকে বেশ সাহসও জোগালেন প্রেরণাদায়ী কথায়। পরে অবশ্য তাকে দেখা গেল সাবলীল ব্যাটিং করতে।

এক প্রান্তের নেট সেশন শেষে আরেক প্রান্তের পালা। মাঝখানে ‘শিক্ষা গ্রহণ পর্ব।’ প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো ও টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ বেশ কিছুক্ষণ কথা বললেন দলের এই নবীন সদস্যের সঙ্গে।

এরপর মাহমুদুল চলে গেলেন প্রেসবক্স প্রান্তের নেটে। সেখানে অপেক্ষায় তিন আর্ম থ্রোয়ার। এবার অবশ্য বেশ স্বচ্ছন্দ ২১ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। তার মূল শক্তির জায়গা সোজা ব্যাটে খেলা। টেকনিক খুব জটিল নয় তার, বরং ‘সিম্পল’ ও প্রথাগত। চেষ্টা করেন বল যতটা সম্ভব দেরিতে খেলার। অফ ড্রাইভ, কাভার ড্রাইভ ও ইনসাইড আউট শট তার দারুণ। ফ্লিকও খারাপ খেলেন না। নেটে সেসবের সবকিছুই মেলে ধরেন মাহমুদুল।

জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন তিনি প্রথমবার। এই চট্টগ্রামে তার টেস্ট অভিষেক হয়ে গেলেও থাকবে না খুব বিস্ময়ের কিছু। চোটে ছিটকে পড়া সাকিব আল হাসানের জায়গায় যদি কোনো ব্যাটসম্যান খেলানোর সিদ্ধান্ত নেয় দল, সেই জায়গাটি নিয়ে লড়াই হবে ইয়াসির আলি চৌধুরি ও মাহমুদুলের।

অভিষেক হলে মাহমুদুলের জন্য সেটি হবে একরকম রূপকথাই। গতবছরই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলেছেন তিনি। দলের শিরোপা জয়ের অবিস্মরণীয় সাফল্যে তার অবদানও ছিল দারুণ। সেমি-ফাইনালে করেছিলেন অসাধারণ এক সেঞ্চুরি।

যুব বিশ্বকাপের পর সেখানেই আটকে থাকেননি তিনি। উন্নতির পথ ধরে ছুটে চলেছেন দ্রুতই। গতবছর কোভিড বিরতি শেষে দেশে ক্রিকেট শুরুর পর বিসিবি প্রেসিডেন্ট’স কাপে তিন ম্যাচ খেলে ফিফটি করেন একটি। এইচপি স্কোয়াডে জায়গা পেয়ে নিজের ব্যাটিংয়ে উন্নতি করেন বেশ। শটের রেঞ্জ বাড়ে অনেকটাই। সেটির ছাপ রাখেন এই বছর আয়ারল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে একদিনের ম্যাচের সিরিজ ও গত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টিতে।

আইরিশদের বিপক্ষে গত মার্চে একদিনের ম্যাচের সিরিজে ৭১.২৫ গড়ে ২৮৫ রান করে সর্বোচ্চ স্কোরার হন তিনি। ৫ ইনিংসে সেঞ্চুরি ছিল একটি, ফিফটি দুটি। প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরার তিনি। ওল্ডডিওএইচএসের হয়ে ৩৯২ রান করেন ৪৩.৫৫ গড় ও ১২১.৩৬ স্ট্রাইক রেটে।

রঙিন পোশাকের দুই সংস্করণের পর মাহমুদুল রানের জোয়ার ধরে রাখেন সাদা পোশাকেও। এবার জাতীয় লিগে জোড়া শূন্য দিয়ে শুরু করলেও পরের দুই ম্যাচে করেন দারুণ দুটি সেঞ্চুরি। পরের ম্যাচে আউট হন ৮৩ রান করে। সেই ম্যাচেই মাঝপথেই টেস্ট দলে ডাক পেয়ে চলে আসেন চট্টগ্রামে।

শেষ পর্যন্ত এখানেই টেস্ট অভিষেক হবে কিনা, তা জানা যাবে শুক্রবারই। তবে স্কোয়াডে জায়গা পেয়েও রোমাঞ্চ কম নয় মাহমুদুলের।

“আসলে এই অনুভূতিটা প্রকাশ করার মতো নয়। সবারই স্বপ্ন থাকে টেস্ট স্কোয়াডে সুযোগ পাওয়ার, জাতীয় দলে জায়গা পাওয়ার। প্রথমবারের মতো টেস্ট দলে সুযোগ পেয়েছি, আমি অনেক খুশি।”

“জাতীয় লিগে বেশ কয়েকটি ইনিংস ভালো খেলেছি। আমার আত্মবিশ্বাস এখন ভালো। তার আগে এইচপি ও ‘এ’ দলের প্রস্তুতি ম্যাচেও ভালো ইনিংস খেলেছি। সামনের ম্যাচগুলোতে ভালো করার জন্য আমি প্রস্তুত।”

আপাতত বাংলাদেশ ক্রিকেটও তৈরি হচ্ছে নতুন এক তারার ঝলকানি দেখার জন্য।