শেষ টি-টোয়েন্টিতে শেষ বলের নিষ্পত্তিতে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারাল পাকিস্তান। তিন ম্যাচের সিরিজ তারা জিতে নিল ৩-০তে।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সোমবার বাংলাদেশের ১২৪ রান তাড়ায় ধীরস্থির ব্যাটিংয়ে জয়ের পথে ছিল পাকিস্তান। শেষ ১২ বলে তাদের প্রয়োজন যখন ১৫ রান, উইকেট তখনও বাকি ৮টি। দারুণ খেলে টিকে আছেন হায়দার আলি। ১৯তম ওভারে দারুণ বোলিংয়ে মাত্র ৭ রান দেন অভিষিক্ত শহিদুল ইসলাম।
শেষ ওভারে পাকিস্তানের দরকার পড়ে ৮ রান। মাহমুদউল্লাহর নিজের বোলিংয়ে আসা ছাড়া বিকল্প খুব একটা ছিল না। বিপিএলে শেষদিকের বোলিংয়ে দারুণ সাফল্যের অভিজ্ঞতাও আছে তার। এবার অভাবনীয় এক জয়ের আশা জাগান বাংলাদেশ অধিনায়ক।
প্রথম বলে রান নিতে পারেননি সরফরাজ আহমেদ। পরের বলে তিনি মিড উইকেট সীমানায় ধরা পড়েন ছক্কার চেষ্টায়। তৃতীয় বলে আরেকটি উইকেট। এবার থিতু হয়ে যাওয়া হায়দার আলি (৩৮ বলে ৪৫) ধরা পড়েন লং অনে!
ম্যাচ তখন দারুণভাবেই হেলে বাংলাদেশের দিকে। কিন্তু নতুন ব্যাটসম্যান ইফতিখার আহমেদ প্রথম বলেই বিশাল ছক্কা মারেন বোলারের মাথার ওপর দিয়ে। তবে নাটকের শেষ নয় সেখানেই। পঞ্চম বলে আবার উড়িয়ে মারার চেষ্টায় ইফতিখার ধরা পড়েন শর্ট থার্ড ম্যানে।
শেষ বলের আগে নাটক হয় দফায় দফায়। স্নায়ু থিতু করতে দুই দলই সময় নেয় কিছুটা। এরপর মাহমুদউল্লাহ বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে বল ছাড়েন উইকেটের বেশ পেছন থেকে। এতেই হয়তো অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন নতুন ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ নওয়াজ। শেষ মুহূর্তে তিনি বল না খেলে ছেড়ে দেন। বল লাগে স্টাম্পে। তবে নওয়াজ দাবি করেন ‘ডেড বল।’ আম্পায়ারও ‘ডেড বল’ সঙ্কেত দেন। মাহমুদউল্লাহ ও বাংলাদেশের ফিল্ডাররা শুরুতে একটু প্রতিবাদ করলেও পরে মেনে নেন। যদিও টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, মাহমুদউল্লাহর বলটি উইকেটে পিচ করা পর্যন্ত স্টান্সেই ছিলেন নওয়াজ। বলটি বৈধ হওয়াই তাই ছিল যৌক্তিক।
পরের বল করতে এসে মাহমুদউল্লাহ আবার নেন কিছুটা ‘বদলা।’ বল ছাড়তে গিয়ে শেষ মুহূর্তে ছাড়েননি। শেষ রক্ষা যদিও হয়নি। বলটি যখন হলো, ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এক্সট্রা কাভার দিয়ে চার মেরে আনন্দে ভাসলেন নওয়াজ।
পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণ এই ম্যাচে ছিল দ্বিতীয় সারির। একাদশে ছিলেন না শাহিন শাহ আফ্রিদি, ইমাদ ওয়াসিম, হাসান আলি ও শাদাব খান। তারপরও ধুঁকেছে বাংলাদেশের ব্যাটিং।
দ্বিতীয় ম্যাচের পর জরুরিভিত্তিতে পারভেজ হোসেন ইমনকে দলে যোগ করা হলেও তরুণ ওপেনারকে রাখা হয়নি একাদশে। মোহাম্মদ নাঈম শেখের সঙ্গে ইনিংস শুরু করেন নাজমুল হোসেন শান্ত। জুটি থেমে যায় দ্বিতীয় ওভারেই। অভিষিক্ত শাহনওয়াজ দাহানিকে বাউন্ডারি মেরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে স্বাগত জানান শান্ত। কিন্তু ওই ওভারেই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে বোল্ড করে শোধ তোলেন দাহানি।
একাদশে ফেরা শামীম হোসেনকে তিনে নামিয়ে খানিকটা চমক দেয় বাংলাদেশ। শামীম শুরুটাও করেন আশা জাগিয়ে। তবে আরেকপ্রান্তে নাঈম থাকেন ঘুমিয়ে।
পাওয়ার প্লেতে ১৩ বল খেলে নাঈমের রান ছিল কেবল ৭। প্রথম বাউন্ডারি মারেন তিনি দশম ওভারে, লেগ স্পিনার উসমান কাদিরকে ছক্কায় উড়িয়ে। তার আগ পর্যন্ত রান ছিল ২১ বলে ১০!
ওই ওভারে আরেকটি চারও মারেন তিনি। কিন্তু বাকি চার বল দেন ডট। পরে কাদিরকে আরও একটি ছক্কা মারেন। কিন্তু তারপরও পুষিয়ে দিতে পারেননি ঘাটতি। শেষ পর্যন্ত ১৯তম ওভারে আউট হন ৫০ বলে ৪৭ করে।
শামীম ও আফিফ চেষ্টা করেন ইনিংসকে গতি দিতে। তবে দুজনের কেউই পারেননি বড় ইনিংস খেলতে। চার বাউন্ডারিতে শামীম করেন ২৩ বলে ২২। কাদিরের এক ওভারে দুটি ছক্কাসহ আফিফ করেন ২১ বলে ২০।
শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহ ও নুরুল হাসান সোহানরা পারেননি দ্রুত রান তুলতে। তাতে দলের সংগ্রহও হয়নি খুব ভালো।
দ্বিতীয় উইকেটে রিজওয়ান ও হায়দার আলির ৫১ রানের জুটি পাকিস্তানকে রাখে পথে। ঝড়ো ব্যাটিং করতে না পারলেও প্রয়োজনীয় রান রেট ছিল নাগালেই। ৪৩ বলে ৪০ করে রিজওয়ান আউট হওয়ার সময়ও মনে হয়নি, ম্যাচের শেষদিকটা জমে উঠবে এমন।
হাতে চোট পেয়ে ১ ওভার বল করার পর মাঠ ছেড়ে আবার ফিরে বোলিং করেন তাসকিন। তবে ওভারের মাঝখানে বেরিয়ে যাওয়ায় পুরো করা যায়নি তার ৪ ওভার। শেষ ওভারে তাই বোলিংয়ে আসতে হয় মাহমুদউল্লাহকে।
সেটিই হয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশের শাপেবর। রোমাঞ্চের উথালপাথাল ঢেউয়ে ভেসে ম্যাচ গড়ায় শেষ বলে। নওয়াজের বাউন্ডারিতে দূরে চলে যায় বাংলাদেশের শেষ আশাটুকুও।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১২৪/৭ (নাঈম ৪৭, শান্ত ৫, শামীম ২২, আফিফ ২০, মাহমুদউল্লাহ ১৩, সোহান ৪, মেহেদি ৫*, আমিনুল ৩; নওয়াজ ১-০-২-০, দাহানি ৩-০-২৪-১, ওয়াসিম ৪-০-১৫-২, রউফ ৪-০-৩২-১, ইফতিখার ৪-০-১৩-০, কাদির ৪-০-৩৫-২)।
পাকিস্তান: ২০ ওভারে ১২৭/৫ (রিজওয়ান ৪০, বাবর ১৯, হায়দার ৪৫, সরফরাজ ৬, খুশদিল ০*, নওয়াজ ৪*; মেহেদি ৪-০-১৯-০, তাসকিন ৩.১-০-১৬-০, নাসুম ৪-০-২০-০, শহিদুল ৩.৫-০-৩৩-১, আমিনুল ৪-০-২৬-১, মাহমুদউল্লাহ ১-০-১০-৩)।
ফল: পাকিস্তান ৫ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে পাকিস্তান ৩-০তে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: হায়দার আলি।