পাকিস্তানের বিপক্ষে মেয়েদের নাটকীয় জয়

শুরুর দুর্দান্ত বোলিং শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারল না রুমানা-নাহিদারা। পঞ্চাশের আগে পাঁচ উইকেট হারানো পাকিস্তান নিদা দার ও আলিয়া রিয়াজের দৃঢ়তায় গড়ল দুইশ ছাড়ানো পুঁজি। রান তাড়ায় দুর্দান্ত এক ইনিংসে কঠিন সমীকরণ মেলালেন রুমানা আহমেদ। তার অপরাজিত ফিফটিতে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ বাছাই শুরু করল বাংলাদেশের মেয়েরা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2021, 02:47 PM
Updated : 21 Nov 2021, 08:04 PM

হারারের ওল্ড হারারিয়ান্সে রোববার পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষের দেওয়া ২০২ রানের লক্ষ্য তারা ছুঁয়ে ফেলে ২ বল বাকি থাকতে।

ওয়ানডেতে বাংলাদেশের মেয়েদের এটি দ্বিতীয় সর্বোচ রান তাড়া করে জয়। পাকিস্তানের বিপক্ষেই ২০১৯ সালে ২১০ রান তাড়া করে জিতেছিল দলটি।

বাংলাদেশের শেষ ১০ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৮৯ রান, হাতে ৬ উইকেট। রিতু মনি ও রুমানা সেই সমীকরণ মেলানোর পথে এগিয়ে নেন দলকে। মাঝে ১ রানে ৩ উইকেট পড়লে জয়ের আশা প্রায় মিইয়ে যেতে বসেছিল তাদের।

সেখান থেকে বাংলাদেশকে দারুণ এক জয় এনে দেন রুমানা ও সালমা খাতুন। দুইজনে শেষ ২৪ বলে ৪১ রানের কঠিন সমীকরণ মেলান দুই বল আগেই। ম্যাচ সেরা হওয়া রুমানা ৪৪ বলে ৫০ করে দলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন। আর ১৩ বলে ১৮ করে অপরাজিত থাকেন সালমা।

এর আগে শুরুর ধাক্কা সামলে পাকিস্তানকে লড়ার পুঁজি এনে দেওয়ার কারিগর নিদা ও আলিয়া ষষ্ঠ উইকেটে গড়েন ১৩৭ রানের জুটি। ৮৭ রানের ইনিংস খেলেন নিদা। আর আলিয়া অপরাজিত থাকেন ৬১ রান নিয়ে।

রান তাড়ায় শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। পঞ্চম ওভারে মুরশিদা খাতুন ফিরে যান আনাম আমিনের বলে ক্যাচ দিয়ে। শুরুর ধাক্কা সামলে দলকে এগিয়ে নেন শারমিন আক্তার ও ফারজানা হক।

তাদের ৭০ রানের জুটিতে শক্ত ভিত পায় বাংলাদেশ। নাশরা সান্ধুর বলে ৪ চারে ৩১ রান করা শারমিন এলবিডব্লিউ হলে ভাঙে দুইজনের প্রতিরোধ। বাঁহাতি এই স্পিনার পরে ফিরিয়ে দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নিগার সুলতানাকেও।

দারুণ ব্যাটিংয়ে ফিফটির দিকে এগোতে থাকা ফারজানাকে ৪৫ রানে কট বিহাইন্ড করে থামান নিদা। ১৮ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন রুমানা ও রিতু।

দুইজনে শুরুতে দেখেশুনে খেলতে থাকেন। সময়ের সঙ্গে তাদের ব্যাট থেকে আসতে থাকে দ্রুত রান। ফাতিমা সানাকে টানা ৩টি চার মেরে বোল্ড হয়ে যান রিতু। শেষ হয় তার ৫ চারে ৩৩ রানের ইনিংস।

পরের ওভারে ওমাইমার চার বলের মধ্যে লতা মণ্ডল ও ফাহিমা খাতুনকে হারিয়ে শঙ্কায় পড়ে যায় বাংলাদেশ। ৪৫.৩ ওভারে তখন তাদের রান ১৬০। সেই বিপদ থেকে দলকে উদ্ধার করেন রুমানা ও সালমা।

ওমাইমাকে সালমা একটি চার মারার পর রুমানা মারেন তিনটি। ৩৫ বলে ৩০ রানে থাকা রুমানা ফিফটি তুলে নেন ৪৪ বলে।

ম্যাচের শুরুটা বাংলাদেশের ছিল দুর্দান্ত। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা পাকিস্তানকে কোণঠাসা করে ফেলে তারা। ৪৯ রানের মধ্যে তুলে নেয় ৫ উইকেট।

ইনিংসের সপ্তম ওভারে প্রথম সাফল্য পায় বাংলাদেশ। রান আউটে কাটা পড়েন আয়েশা জাফর। কয়েক ওভার পর জোড়া শিকার ধরেন রিতু মনি। আরেক ওপেনার মুনিবা আলির পর ওমাইমা সোহাইলকেও কট বিহাইন্ড করে দেন এই পেসার।

পাকিস্তান অধিনায়ক জাভেরিয়া খানকে টিকতে দেননি নাহিদা আক্তার। এই বাঁহাতি স্পিনার পরে ফিরিয়ে দেন ইরাম জাভেদকে।

নিদা ও আলিয়ার ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় পাকিস্তান। খাঁদের কিনার থেকে দলকে টেনে তোলেন দুইজন। শতরানের জুটি গড়ে দলকে এনে দেন লড়ার মতো পুঁজি।

সাবধানী ব্যাটিংয়ে দলের রান বাড়াতে থাকেন তারা। ৮৫ বলে ফিফটি তুলে নেন নিদা। ইনিংস শেষের আগের ওভারে তাকে থামান সালমা খাতুন। এলবিডব্লিউ হওয়ার আগে ৮ চার ও ২ ছক্কায় ১১১ বলে করেন ৮৭।

ওই ওভারেই সালমাকে ছক্কায় উড়িয়ে ৭৮ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন আলিয়া। ৮২ বলে ৪টি চার ও ৩ ছক্কায় তিনি মাঠ ছাড়েন ৬১ রান করে।

বাংলাদেশের সফল বোলার নাহিদা; ২৫ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন তিনি। দুটি উইকেট প্রাপ্তি রিতুরও। একটি করে শিকার সালমা ও রুমানার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

পাকিস্তান নারী দল: ৫০ ওভারে ২০১/৭ (মুনিবা ২২, আয়েশা ৬, জাভেরিয়া ১২, ওমাইমা ০, নিদা ৮৭, আলিয়া ৬১*, ফাতিমা ৫, দিয়ানা ১*; জাহানারা ৮-০-৪০-০, সালমা ১০-২-৩২-১, রিতু ৯-০-৩৬-২, নাহিদা ১০-১-২৫-২, রুমানা ৮-০-৪০-১, ফাহিমা ৩-০-১৩-০, লতা ২-০-১৩-০)

বাংলাদেশ নারী দল: ৪৯.৪ ওভারে ২০২/৭ (মুরশিদা ৯, শারমিন ৩১, ফারজানা ৪৫, নিগার ৪, রুমানা ৫০*, রিতু ৩৩, লতা ০, ফাহিমা ০, সালমা ১৮*; আনাম ১০-১-৩০-১, দিয়ানা ৮-০-৪১-০, ফাতিমা ৪.৪-০-৩৫-১, নাশরা ১০-২-২৪-২, নিদা ১০-১-১৭-১, ওমাইমা ৭-০-৪৪-২)

ফল: বাংলাদেশ ৩ উইকেটে জয়ী

ম্যাচ সেরা: রুমানা আহমেদ