নিউ জিল্যান্ডকে উড়িয়ে সিরিজ ভারতের

প্রথম ম্যাচে তবু শেষ দিকে ছড়িয়েছিল উত্তেজনা। এবার ভারতের সামনে দাঁড়াতেই পারল না নিউ জিল্যান্ড। তাদের প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানই গেলেন দুই অঙ্কে। কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারলেন না কেউ। কিউইদের দেড়শ ছাড়ানো রান লোকেশ রাহুল ও রোহিত শর্মার ব্যাটে সহজেই পেরিয়ে গেল ভারত। এক ম্যাচ হাতে রেখে জিতে নিল টি-টোয়েন্টি সিরিজ।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2021, 05:25 PM
Updated : 19 Nov 2021, 06:41 PM

রাঁচিতে শুক্রবার সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের জয় ৭ উইকেটে। ১৫৪ রানের লক্ষ্য স্বাগতিকরা পেরিয়ে যায় ১৬ বল বাকি থাকতেই।

তিন ম্যাচের সিরিজে ভারত এগিয়ে গেল ২-০ ব্যবধানে। পূর্ণ মেয়াদে ভারতের কোচ হিসেবে প্রথম সিরিজেই জিতলেন রাহুল দ্রাবিড়। বিরাট কোহলির টি-টোয়েন্টির নেতৃত্ব ছাড়ার পর অধিনায়ক হিসেবে রোহিতের শুরুটাও হলো সিরিজ জয় দিয়ে। যদিও তাকে স্থায়ীভাবে নেতৃত্ব দেওয়া নিয়ে এখনও কিছু বলেনি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড-বিসিসিআই।

গত রোববার বিশ্বকাপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে শিরোপা স্বপ্ন ভাঙে নিউ জিল্যান্ডের। পাঁচ দিন পরই তারা হারল সিরিজ। আগামী রোববার কলকাতায় তাদের সামনে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর চ্যালেঞ্জ।

ভারতের জয়ের ভিত গড়ে দেন মূলত দুই স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও আকসার প্যাটেল এবং অভিষিক্ত মিডিয়াম পেসার হার্শাল প্যাটেল।

প্রথম ম্যাচে নিজের বলে ফিল্ডিংয়ের সময় হাতে চোট পাওয়া মোহাম্মদ সিরাজের জায়গায় আন্তর্জাতিক অভিষেক হলো গত আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালোরের হয়ে ১৫ ম্যাচে ৩২ উইকেট নেওয়া হার্শালের। ৪ ওভারে ২৫ রানে ২ উইকেট নিয়ে দলের সফলতম বোলার তিনি।

গত আইপিএলের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিও ছিলেন হার্শাল। ১৩টি ডট বল করা ৩০ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার জাতীয় দলের হয়ে প্রথম ম্যাচেই জিতলেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

মাত্র ১৯ রানে একটি উইকেট নেন অফ স্পিনার অশ্বিন। বাঁহাতি স্পিনার আকসারও একটি উইকেট নেন ২৬ রানে। ভুবনেশ্বর কুমার ও দিপক চাহার ছিলেন খরুচে।

ব্যাটিংয়ে ৪৯ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৬৫ রানের ইনিংস খেলেন রাহুল। ৩৬ বলে ৫ ছক্কা ও একটি চারে ৫৫ রান রোহিতের। দুজনে ৮০ বলে গড়েন ১১৭ রানের উদ্বোধনী জুটি।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি শতরানের উদ্বোধনী জুটির রেকর্ডে তারা স্পর্শ করলেন পাকিস্তানের বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানকে, ৫টি করে।

একাদশে তিনটি পরিবর্তন আনা নিউ জিল্যান্ড টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে মার্টিন গাপটিলের ব্যাটে শুরুটা দারুণ করেছিল। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে তারা তোলে ৬৪ রান। কিন্তু পরের ৮৪ বলে করতে পারে কেবল ৮৯ রান। ১ রানে জীবন পেয়ে ইনিংস সর্বোচ্চ ৩৪ রান করেন গ্লেন ফিলিপস।

ভুবনেশ্বরের প্রথম দুই বলে দুটি চার মেরে শুরু করেন গাপটিল। চতুর্থ বলে তার ক্যাচ ফেলেন লোকেশ রাহুল। শেষ বলে আরেকটি বাউন্ডারিতে বিরাট কোহলিকে ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড নিজের করে নেন কিউই ওপেনার।

প্রথম ম্যাচে শূন্য রানে ফেরা ড্যারিল মিচেল পরপর দুটি চার মারেন দিপককে। ভুবনেশ্বরকে ছক্কায় ওড়ান গাপটিল। ৪ ওভারেই আসে ৪২ রান।

পরের ওভারে দিপককে ছক্কা মারার পরই শর্ট বল পুল করার চেষ্টায় আকাশে তুলে ফিরে যান গাপটিল। ১৫ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় সাজানো তার ৩১ রানের ইনিংস। প্রথম ম্যাচে তিনি ৪২ বলে করেছিলেন ৭০।

গাপটিলের বিদায়ের পরই নিউ জিল্যান্ডকে চেপে ধরেন অশ্বিন, আকসার, হার্শালরা। আগের ম্যাচে ফিফটি করা মার্ক চাপম্যানকে (১৭ বলে ২১) বেশিক্ষণ টিকতে দেননি আকসার। মিচেলকে (২৮ বলে ৩১) ফিরিয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক উইকেটের স্বাদ পান হার্শাল। দুই ব্যাটসম্যানই ছক্কার চেষ্টায় ক্যাচ দেন বাউন্ডারিতে।

গ্লেন ফিলিপস আউট হতে পারতেন শুরুতেই। আকসারের বলে তার ক্যাচ ফেলেন ভেঙ্কাটেশ আইয়ার।

জীবন পেয়ে দলকে এগিয়ে নেন ফিলিপস। ছক্কা মারেন তিনি আকসার ও ভুবনেশ্বরকে। টিম সাইফার্ট পারেননি তেমন কিছু করতে (১৫ বলে ১৩)।

হার্শালের নিচু ফুলটস লং অনের ওপর দিয়ে আছড়ে ফেলে এই বছর স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি ছক্কার সংখ্যা ৯৭-এ নিয়ে যান ফিলিপস। দুই বল পরই তাকে ফিরিয়ে জবাব নেন ডানহাতি মিডিয়াম পেসার হার্শাল।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের প্রথম উইকেট নেওয়ার পর সতীর্থদের সঙ্গে হার্শাল প্যাটেলের উদযাপন। ছবি: বিসিসিআই

জেমস নিশাম পারেননি শেষের দাবি মেটাতে। বরং ৩ রান করতে তিনি খেলেন ১২ বল! শেষ তিন ওভারে কোনো বাউন্ডারিই মারতে পারেনি সফরকারীরা।

রান তাড়ায় শুরুতে রাহুল ও রোহিতের ব্যাটে অতটা দাপট ছিল না। পাওয়ার প্লেতে রাহুলের রান ছিল ২৬ বলে ৩২, রোহিতের ১০ বলে ১০।

পরে আগ্রাসী হয়ে ওঠেন তারা। দশম ওভারে মিচেল স্যান্টনারের চার বলের মধ্যে দুটি ছক্কা হাঁকান রোহিত। এরপরই অবশ্য আউট হতে পারতেন তিনি। কিন্তু ক্যাচ ফেলেন ট্রেন্ট বোল্ট। রোহিতের রান তখন ২৯।

পরের ওভারে অ্যাডাম মিল্নকে পরপর ছক্কা-চারের পথে রাহুল ফিফটি পূর্ণ করেন ৪০ বলে। সবশেষ পাঁচ টি-টোয়েন্টি ইনিংসে এটি তার চতুর্থ পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস।

রাহুলকে ফিরিয়ে বড় জুটি ভাঙেন টিম সাউদি। মিল্নকে ছক্কায় উড়িয়ে রোহিত পঞ্চাশে পা রাখেন ৩৫ বলে। সাউদি নিজের পরের ওভারে ফিরিয়ে দেন রোহিত ও সূর্যকুমার যাদবকেও। ৪ ওভারে মাত্র ১৬ রানে তার প্রাপ্তি ৩টি।

নিশামকে পরপর দুই ছক্কা মেরে দলের জয় নিয়ে ফেরেন রিশাভ পান্ত।

বিশ্বকাপে নিউ জিল্যান্ডের কাছে ৮ উইকেটে হেরেছিল ভারত। দলটির বিপক্ষে এবার সিরিজ জিতে সেই ক্ষতে কিছুটা প্রলেপ দিতে পারল তারা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউ জিল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৫৩/৬ (গাপটিল ৩১, মিচেল ৩১, চাপম্যান ২১, ফিলিপস ৩৪, সাইফার্ট ১৩, নিশাম ৩, স্যান্টনার ৮*, মিল্ন ৫*; ভুবনেশ্বর ৪-০-৩৯-১, দিপক ৪-০-৪২-১, আকসার ৪-০-২৬-১, অশ্বিন ৪-০-১৯-২, হার্শাল ৪-০-২৫-২)  

ভারত: ১৭.২ ওভারে ১৫৫/৩ (রাহুল ৬৫, রোহিত ৫৫, ভেঙ্কাটেশ ১২*, সূর্যকুমার ১, পান্ত ১২*; সাউদি ৪-০-১৬-৩, বোল্ট ৪-০-৩৬-০, স্যান্টনার ৪-০-৩৯-০, মিল্ন ৩-০-৩৯-০, সোধি ২-০-১৩-০, নিশাম ০.২-০-১২-০)  

ফল: ভারত ৭ উইকেটে জয়ী

সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজের দুটি শেষে ভারত ২-০ তে এগিয়ে

ম্যান অব দা ম্যাচ: হার্শাল প্যাটেল