শেষ ওভারের রোমাঞ্চে ভারতের জয়

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উত্তেজনার রেশ না কাটতেই মাঠে নেমে আরেকটি নখ-কামড়ানো ম্যাচ উপহার দিল ভারত ও নিউ জিল্যান্ড। মার্টিন গাপটিল ও মার্ক চাপম্যানের ফিফটিতে লড়াই করার পুঁজি পেল কিউইরা। রোহিত শর্মা ও সূর্যকুমার যাদবের ব্যাটে রান তাড়া সহজই মনে হচ্ছিল স্বাগতিকদের জন্য। কিন্তু শেষ দিকে দেখা মিলল রোমাঞ্চের। অবশ্য জয়ের হাসি নিয়েই শেষ পর্যন্ত মাঠ ছাড়ল ভারত।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Nov 2021, 05:29 PM
Updated : 17 Nov 2021, 06:13 PM

জয়পুরে বুধবার প্রথম টি-টোয়েন্টিতে নিউ জিল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেছে ভারত। সফরকারীদের ১৬৪ রান তারা ছাড়িয়ে যায় ২ বল বাকি থাকতে।

পূর্ণ মেয়াদে ভারতের কোচ হিসেবে জয় দিয়ে পথচলা শুরু করলেন রাহুল দ্রাবিড়। আর বিরাট কোহলির টি-টোয়েন্টির নেতৃত্ব ছাড়ার পর প্রথম ম্যাচেই অধিনায়ক হিসেবে জয় পেলেন রোহিত। যদিও তাকে স্থায়ীভাবে নেতৃত্ব দেওয়া নিয়ে এখনও কিছু বলেনি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড-বিসিসিআই।

৮ বছর পর সাওয়াই মানসিং স্টেডিয়ামে হওয়া প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে লড়াই হলো দারুণ। শেষ দুই ওভারে ভারতের প্রয়োজন ছিল ১৬। ১৯তম ওভারে দুর্দান্ত বোলিংয়ে কেবল ৬ রান দেন টিম সাউদি।

শেষ ৬ বলে ১০ রানের জন্য ড্যারিল মিচেলের হাতে তুলে দেওয়া হয় বল। অভিষিক্ত ভেঙ্কাটেশ আইয়ারের উইকেট নিয়ে তিনি ম্যাচ যদিও জমিয়ে দেন। কিন্তু শেষরক্ষা করতে পারেননি তিনি। রিশাভ পান্তের চারে জয়ের বন্দরে পৌঁছায় ভারত।

ব্যাটিং উইকেটে এদিন টস হেরে খেলতে দলকে বড় সংগ্রহ এনে দেওয়ার মূল কাজটি করেন গাপটিল ও চাপম্যান। দুইজনেই করেন ফিফটি। রান তাড়ায় ৬২ রান করে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন সূর্যকুমার। রোহিতের ব্যাট থেকে আসে ৪৮ রান।

শেষের মতো শুরুটাও ভালো ছিল না নিউ জিল্যান্ডের। ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের তৃতীয় বলেই তার হারায় উইকেট। দুর্দান্ত এক ইনসুইং ডেলিভারিতে মিচেলের স্টাম্প এলোমেলো করে দেন ভুবনেশ্বর কুমার। নিউ জিল্যান্ডকে বিশ্বকাপের ফাইনালে তোলার নায়ক আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে প্রথমবার পান গোল্ডেন ডাকের তেতো স্বাদ।

সেই ধাক্কা সামাল দিয়ে দলকে ১০৯ রানের জুটি উপহার দেন গাপটিল ও দলে ফেরা চাপম্যান। শুরুতে দুইজনই ভুগছিলেন রান তুলতে। প্রথম ১০ ওভার শেষে নিউ জিল্যান্ডের রান ছিল ৬৫।

এরপর রানের গতিতে দম দেন দুইজনই। মোহাম্মদ সিরাজকে টানা ছক্কা-চার মারেন গাপটিল। আকসার প্যাটেলকে মিডউইকেট দিয়ে ছক্কায় উড়িয়ে ৪৫ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন চাপম্যান। টি-টোয়েন্টিতে দুই দেশের হয়ে ফিফটি করা প্রথম ক্রিকেটার তিনি। ২০১৫ সালে হংকংয়ের হয়ে ওমানের বিপক্ষে ফিফটি ছিল বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের।

পঞ্চাশের পর বেশিক্ষণ টিকেননি চাপম্যান। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ঝুলিয়ে দেওয়া বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি ২ ছক্কা ও ৬ চারে ৬৩ রান করে। ওই ওভারেই গ্লেন ফিলিপসকে এলবিডব্লিউ করে দেন ভারত স্পিনার।

জোড়া উইকেট পড়লেও দমে যাননি গাপটিল। সিরাজকে উড়িয়ে সীমানা ছাড়া করে ৩১ বলে তিনি তুলে নেন ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি তার প্রথম ফিফটি। দিপক চাহারকে মিডউইকেট দিয়ে গ্যালারিতে আছড়ে ফেলার পরের বলেই ক্যাচ দিয়ে ফেরেন গাপটিল। ৪ ছক্কা ও ৩ চারে করেন ৪২ বলে ৭০।

রান তাড়ায় রোহিত ও লোকেশ রাহুলের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পায় ভারত। টিম সাউদিকে টানা দুই চারের পর ছক্কায় ওড়ান রোহিত। এই দুইজন ঝড় বইয়ে দেন ট্রেন্ট বোল্টের ওপর দিয়ে। দুটি করে ছক্কা-চারে ওভার থেকে আসে ২১ রান।

পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে সীমানায় ধরা পড়েন রাহুল (১৪ বলে ১৫)। তাকে হারিয়ে প্রথম ৬ ওভারে ৫৬ রান তোলে ভারত।

ক্রিজে গিয়েই দ্রুত রান তোলায় মনোযোগ দেন সূর্যকুমার যাদব। রোহিতের সঙ্গে ৫৯ রানের জুটিতে অগ্রণী ছিলেন তিনিই। তাদের প্রতিরোধ ভাঙে ২ ছক্কা ও ৫ চারে ৪৮ রান করা ভারত অধিনায়কের বিদায়ে। বোল্টের স্লোয়ারে ক্যাচ তুলে দেন তিনি।

পান্ত ও সূর্যযাদব ব্যাটে সহজেই এগিয়ে যাচ্ছিল ভারত। কিন্তু বিপত্তি বাধে বোল্টের বলে সূর্যকুমার বোল্ড হলে। ৩ ছক্কা ও ৬ চারে ৬২ করে সূর্যকুমার ফেরার পর দ্রুত বিদায় নেন শ্রেয়াস আইয়ার।

আগে বেশ ভুগলেও শেষ ওভারের চতুর্থ বলে চার মেরে দলকে জয় এনে দেন পান্ত। তিন সংস্করণ মিলিয়ে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে টানা সাত ম্যাচ হারার পর জিতল ভারত।

আগামী শুক্রবার সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি হবে দুই দল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউ জিল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৬৪/৬ (গাপটিল ৭০, মিচেল ০, চাপম্যান ৬৩, ফিলিপস ০, সাইফার্ট ১২, রাচিন ৭, স্যান্টনার ৪*, সাউদি ০*; ভুবনেশ্বর ৪-০-২৫-২, দিপক ৪-০-৪২-১, সিরাজ ৪-০-৩৯-১, অশ্বিন ৪-০-২৩-২, আকসার ৪-০-৩১-০)।

ভারত: ১৯.৪ ওভারে ১৬৬/৫ (রাহুল ১৫, রোহিত ৪৮, সূর্যকুমার ৬১, পান্ত ১৭*, শ্রেয়াস ৫, ভেঙ্কাটেশ ৪, আকসার ১*; সাউদি ৪-০-৪০-১, বোল্ট ৪-০-৩১-২, ফার্গুসন ৪-০-২৪-০, স্যান্টনার ৪-০-১৯-১, অ্যাস্টল ৩-০-৩৪-০, মিচেল ০.৪-০-১১-১)

ফল: ভারত ৫ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: সূর্যকুমার যাদব।

সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে ভারত।