সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠে সোমবার খুলনার প্রথম ইনিংস থামে ২৫৭ রানে। পরে মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি ও মিরাজের দুর্দান্ত বোলিংয়ে রংপুর বিভাগকে তারা থামিয়ে দেয় ২২২ রানে।
দ্বিতীয় দিনের শেষ বেলায় দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে এক উইকেট হারিয়ে ২১ রান করেছে খুলনা। জাতীয় লিগের প্রথম স্তরের এই ম্যাচে দলটি এখন এগিয়ে ৫৬ রানে।
প্রথম ইনিংসে খুলনাকে ৩৫ রানের লিড এনে দেওয়ার পথে বড় ভূমিকাটা রাখেন মিরাজ। ৭২ রানের অপরাজিত ইনিংসের পর বল হাতে নেন ৪ উইকেট।
দারুণ বোলিংয়ে ৬২ রান দিয়ে ৫ উইকেট নেন মৃত্যুঞ্জয়। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমেই পাঁচ উইকেটের স্বাদ পেলেন বাঁহাতি এই পেসার।
রংপুরের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৬ রান করেন আরিফুল হক। ৪৩ রানের ইনিংস খেলেন আকবর আলি।
৯ উইকেটে ২৫৭ রান নিয়ে খেলতে নামা খুলনাকে দিনের দ্বিতীয় ওভারেই গুটিয়ে দিয়ে ব্যাটিংয়ে নামে রংপুর। কিন্তু তাদের শুরুটা হয়নি ভালো। মৃত্যুঞ্জয়ের চতুর্থ ওভারে বোল্ড হয়ে যান জাহিদ জাভেদ।
শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগে আরও দুইজনকে হারায় রংপুর। মিরাজ ফেরান মাইশুকুর রহমানকে। আব্দুল হালিমের শিকার মেহেদি মারুফ।
২৮ রানে ৩ উইকেট হারানো দলকে কিছুক্ষণ টানেন নাঈম ইসলাম ও নাসির হোসেন। কিন্তু তারা কেউই পারেননি বড় ইনিংস খেলতে। মৃত্যুঞ্জয়ের বলে দুইজনেই ধরা পড়েন তুষার ইমরানের হাতে।
এরপর আকবরকে নিয়ে ৬৩ রানের জুটি গড়েন আরিফুল। ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৬৬ রান করা আরিফুলকে এলবিডব্লিউ করে তাদের প্রতিরোধ ভাঙেন মিরাজ। এই অফ স্পিনারের বলেই ফিফটির আগে ফিরে যান আকবর।
মিরাজের ক্যাচে তানভির হায়দারকে ফেরানোর পর আব্দুর রহমানকে বোল্ড করে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন মৃত্যুঞ্জয়। রংপুরের ইনিংসও শেষ হয়ে যায় সেখানেই।
শেষ বেলায় ব্যাটিংয়ে নামা খুলনাকে শুরুতেই বিপদে ফেলে দেন এনামুল হক। সোহরাওয়ার্দী শুভর বলে লং অনে ক্যাচ দিয়ে তিনি ফিরে যান দ্বিতীয় ওভারেই। দিনের বাকি ১৪ ওভার নিরাপদে কাটিয়ে দেন অমিত মজুমদার ও তুষার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
খুলনা ১ম ইনিংস: (আগের দিন ২৫৭/৯) ৯১.৩ ওভারে ২৫৭ (মিরাজ ৭২*, হালিম ০; আলাউদ্দিন ১৯-৬-৫৫-৩, আরিফুল ১২-২-৩১-১, নাসির ১১-৫-২৩-০, সোহরাওয়ার্দী ২৮.৩-৬-৬৯-৪, আব্দুর রহমান ১৮-২-৫৮-২, তানবীর ২-০-১০-০, নাঈম ১-১-০-০)
রংপুর ১ম ইনিংস: ৬৩ ওভারে ২২২ (মাইশুকুর ১৫, জাহিদ ৫, মেহেদি ৭, নাঈম ২২, নাসির ২৪, আরিফুল ৬৬, আকবর ৪৩, তানভির ১৭, সোহরাওয়ার্দী ২*, আলাউদ্দিন ১৭, আব্দুর রহমান ০; হালিম ১৩-৪-৩৭-১, মৃত্যুঞ্জয় ১৬-১-৬২-৫, মিরাজ ২০-৩-৭৪-৪, রাইহান ৮-০-৩০-০, জিয়াউর ৬-০-১৬-০)।
খুলনা ২য় ইনিংস: ১৬ ওভারে ২১/১ (অমিত ৬*, এনামুল ১, তুষার ১৪*; আলাউদ্দিন ৫-০-১০-০, সোহরাওয়ার্দী ৭-৩-৬-১, নাসির ৩-১-২-০, আব্দুর রহমান ১-০-৩-০)।
জাকির-জাকেরের ফিফটিতে সিলেটের বড় লিড
জাতীয় লিগের প্রথম স্তরের আরেক ম্যাচে বড় লিড পেয়েছে সিলেট বিভাগ। দলটির হয়ে ফিফটি করেছেন সায়েম আলম, জাকির হাসান ও জাকের আলি।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সোমবার স্বাগতিকদের ২৬৫ রানে থামিয়ে দিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করছে ঢাকা বিভাগ। এক উইকেট হারিয়ে ২২ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে তারা। প্রথম ইনিংসে ১২৩ রানে গুটিয়ে যাওয়া দলটি এখনও পিছিয়ে ১২০ রানে।
সিলেটকে ১৪২ রানের লিড এনে দেওয়ার পথে ৭৮ রান করেন সায়েম। জাকিরের ব্যাট থেকে আসে ৬৭ রান। আর ৬৭ রানে অপরাজিত থাকেন কিপার-ব্যাটসম্যান জাকের।
স্পিন সহায়ক উইকেটে ঢাকার হয়ে ৭২ রান দিয়ে ৫ উইকেট নেন নাজমুল ইসলাম অপু। প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে যা তার সপ্তম পাঁচ উইকেট।
এদিন চোট হানা দেয় ঢাকার শিবিরে। কুঁচকিতে চোট পেয়ে ৮.৩ ওভারে এক উইকেট নেওয়ার পর আর বোলিং করতে পারেননি পেসার মোহাম্মদ হোসেন আলি।
২ উইকেটে ৭৯ রান নিয়ে দিন শুরু করা সিলেট আগের দিনের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে এগোতে থাকে। প্রথম দিনে ৪৫ রানে অপরাজিত সায়েম ফিফটি তুলে নিতে দেরি করেননি। দিনের তৃতীয় ওভারেই ১০৯ বলে স্পর্শ করেন পঞ্চাশ।
তার ও জাকিরের ব্যাটে দেড়শ পার করে সিলেট। দুজনে গড়েন ১২৬ রানের ইনিংস। সায়েমকে ফিরিয়ে তাদের প্রতিরোধ ভাঙেন নাজমুল। বাঁহাতি এই স্পিনারের বলে লং-অনে ধরা পড়েন ৯ চার ও এক ছক্কায় ৭৮ রান করা সায়েম।
পরপর দুই ওভারে অলক কাপালী ও জাকিরকে হারায় সিলেট। তাইবুর রহমানের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান কাপালী। নাজমুলের শিকার ৩ চারে ৬৭ রান করা জাকির।
১২ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়া দলের হাল ধরেন জাকের। তাকে কিছুক্ষণ সঙ্গ দিয়ে তাইবুরের বলে ফিরে যান শাহানুর রহমান। এরপর আর কাউকে দাঁড়াতেই দেননি নাজমুল।
সিলেটের শেষ দিকের চার ব্যাটসম্যানের কেউই যেতে পারেননি দুই অঙ্কে। যাদের তিন জনকে আউট করে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন নাজমুল।
সতীর্থদের আসা যাওয়ার মাঝে এক প্রান্ত আগলে রেখে ১০৩ বলে ফিফটি তুলে নেন জাকের। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত থাকেন ৭ চার ও এক ছক্কায় ৬৭ রানে।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই রনি তালুকদারকে হারায় ঢাকা। প্রথম ইনিংসে গোল্ডেন ডাকের তেতো স্বাদ পাওয়া এই ওপেনার এবার বোল্ড হন ১ রানে। দুইবারই তাকে ফেরালেন নাসুম আহমেদ।
আব্দুল মজিদ ও জয়রাজ শেখ দিনের বাকি সময় আর দলকে বিপদে পড়তে দেননি। যথাক্রমে ৮ ও ১৩ রান নিয়ে খেলছেন দুইজন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ঢাকা বিভাগ ১ম ইনিংস: ১২৩
সিলেট বিভাগ ১ম ইনিংস: (আগের দিন ৭৯/২) ১০৪.১ ওভারে ২৬৫ (সায়েম ৭৮, জাকির ৬৭, কাপালী ৪, জাকের ৬৭*, শাহানুর ২৩, রাহাতুল ৬, নাসুম ১, রেজাউর ০, ইবাদত ০; সুমন ১৬-১-৭২-১, এনামুল ১৪-২-৩৮-০, নাজমুল ৩৬.৪-১০-৭২-৫, হোসেন আলি ৮.৩-১-১৪-১, তাইবুর ১৯.৩-৩-৪০-৩, মজিদ ৪.৩-১-১৩-০, রুবেল ৫-১-৯-০)।
ঢাকা বিভাগ ২য় ইনিংস: ১৩ ওভারে ২২/১ (রনি ১, মজিদ ৮*, জয়রাজ ১৩*; ইবাদত ৪-১-৪-০, নাসুম ৬-১-৯-১, রেজাউর ১-০-২-০, শাহানুর ১-০-৫-০)