ভারতের প্রধান কোচ দ্রাবিড়

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরই শেষ রবি শাস্ত্রীর চুক্তির মেয়াদ। তার জায়গায় ভারতের নতুন প্রধান কোচ হচ্ছেন রাহুল দ্রাবিড়।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Nov 2021, 03:46 PM
Updated : 3 Nov 2021, 05:36 PM

সবকিছু অবশ্য একরকম নিশ্চিতই ছিল। তারই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এলো বুধবার। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের ওয়েবসাইটে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চলতি বিশ্বকাপের পরপরই ঘরের মাঠে হতে যাওয়া নিউ জিল্যান্ড সিরিজ দিয়ে কাজ শুরু করবেন দ্রাবিড়।

নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজটি শুরু হবে আগামী ১৭ নভেম্বর। পরে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজও খেলবে দল দুটি।

এরই মধ্যে অবশ্য এক সিরিজের জন্য ভারতের প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন দ্রাবিড়। গত জুলাইয়ে জাতীয় দলের নিয়মিত ক্রিকেটারদের অনেকে ইংল্যান্ড সফরে থাকায় অন্য একটি দলকে শ্রীলঙ্কা সফরে পাঠায় ভারত, যে দলের কোচ ছিলেন তিনি।

এতদিন ভারতের জাতীয় ক্রিকেট একাডেমির প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন দেশটির ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন। সঙ্গে অনূর্ধ্ব-১৯ দল ও ‘এ’ দলের কোচের দায়িত্বও পালন করছিলেন তিনি।

ভারতের জাতীয় দলের দায়িত্ব তাকে দেওয়া নিয়ে আলোচনা অনেক দিনের। ২০১৬ সালে যখন অনিল কুম্বলে কোচের দায়িত্ব পেলেন, তখন বোর্ডের প্রথম পছন্দ ছিলেন দ্রাবিড়ই। কিন্তু সবিনয়ে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন তিনি। পরের বছর যখন কুম্বলের দায়িত্ব শেষ হলো বিতর্কিতভাবে, আবারও ডাক পড়ে দ্রাবিড়ের।

সেবারও দ্রাবিড় তা ফিরিয়ে দেন। তরুণ ও উঠতি ক্রিকেটারদের নিয়ে কাজ করা, ভবিষ্যতের জন্য তাদের তৈরি করে দেওয়ার কাজটিই তার কাছে উপভোগ্য বলে বরাবরই জানান তিনি। শ্রীলঙ্কা সফরে কোচ হিসেবে যাওয়ার পরও বলেছিলেন, ভারতের প্রধান কোচের পদ তার ভাবনায় নেই।

তবে এবার আর ফিরিয়ে দিতে পারলেন না বোর্ডের প্রস্তাব। পূর্ণ মেয়াদে বিরাট কোহলিদের দায়িত্ব পেয়ে জানালেন ভালো লাগার কথাই। সামনে দলকে আরও এগিয়ে নেওয়ার পথে কাজ করতে মুখিয়ে আছেন বলে বিসিসিআইয়ের দেওয়া বিবৃতিতে বলেন তিনি।

“ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ পাওয়া দারুণ সম্মানের। দায়িত্ব পালনের জন্য আমি সত্যিই মুখিয়ে আছি। শাস্ত্রীর কোচিংয়ে দলটি খুবই ভালো করেছে। আশা করছি, এই দলকে আরও এগিয়ে নিতে পারব।”

“এনসিএ, অনূর্ধ্ব-১৯ ও ভারত ‘এ’ দলের সেটআপে খেলোয়াড়দের অনেকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সুবাদে আমি জানি, তাদের প্রতিদিনই উন্নতি করার আকাঙ্ক্ষা ও ইচ্ছা আছে। আগামী দুই বছরে বড় কিছু মাল্টি-টিম প্রতিযোগিতা আছে। ক্রিকেটার ও সাপোর্ট স্টাফদের সঙ্গে কাজ করে নিজেদের সেরাটা অর্জনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছি।”

ভারতের জাতীয় দলে শাস্ত্রীর কোচিং অধ্যায়ের শুরু সহকারী কোচ হিসেবে। নানা সময়ে তিন দফায় এই দায়িত্ব পালনের পর ২০১৪ সালের অগাস্টে ভারতের টিম ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাকে। বছর দুয়েক ছিলেন এই ভূমিকায়। পরে ২০১৭ সালের জুলাইয়ে দুই বছরের চুক্তিতে ভারতের কোচের দায়িত্ব নেন তিনি।

২০১৯ বিশ্বকাপের সময় সাময়িকভাবে তার মেয়াদ বাড়ানো হয় দেড় মাস। এরপর ওই বছরের অগাস্টে আবার দুই বছরের জন্য নতুন চুক্তি করেন চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত। বৈশ্বিক এই আসর শুরুর আগেই অবশ্য এরপর আর দায়িত্ব চালিয়ে না যাওয়ার ইঙ্গিত দেন সাবেক এই অলরাউন্ডার।

শাস্ত্রীর দায়িত্বে সাফল্য কম আসেনি ভারতের। এশিয়ার প্রথম দল হিসেবে ২০১৮-১৯ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সিরিজ জিতে তারা। এরপর ২০২০-২১ মৌসুমেও সেখান থেকে টেস্ট সিরিজ জিতে ফিরে দলটি। পাঁচ ম্যাচের দ্বিপাক্ষিক টি-টোয়েন্টি সিরিজে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করা প্রথম দলও তারা; নিউ জিল্যান্ডকে ৫-০ ব্যবধানে হারিয়েছিল তারা। শাস্ত্রীর দায়িত্বকালে ঘরের মাঠের সাতটি টেস্ট সিরিজই জিতেছে ভারত।

কিন্তু তার দায়িত্বে আইসিসি আসরে এখনও শিরোপা ধরা দেয়নি। ২০১৯ বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনাল থেকে বাদ পড়ার পর গত জুনে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও হারে ভারত। চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ভালো অবস্থানে নেই তারা।

এমনিতেই অবশ্য শাস্ত্রীকে দায়িত্ব থেকে সরাতেই হতো ভারতের। ৬০ বছর বয়সের বেশি কাউকে জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব না দেওয়ার নিয়ম করেছে বিসিসিআই। শাস্ত্রি ৫৯ পেরিয়ে গেছেন।

এক সময়ের সতীর্থকে জাতীয় দলের দায়িত্বে পেয়ে দারুণ খুশি বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলি। তার বিশ্বাস, ভারতীয় ক্রিকেটকে নতুন উচ্চতায় তুলবেন দ্রাবিড়।

“ভারতের প্রধান কোচ হিসেবে বিসিসিআই রাহুল দ্রাবিড়কে স্বাগত জানাচ্ছে। রাহুলের ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ এবং খেলাটার কিংবদন্তিদের একজন সে। ভারতের জাতীয় ক্রিকেট একাডেমির (এনসিএ) প্রধান হিসেবেও সম্মানের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছে সে।”

“রাহুলের প্রচেষ্টায় এনসিএ থেকে অনেক তরুণ প্রতিভা উঠে এসেছে, যারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছে। আমি আশা করছি, তার হাত ধরে ভারতীয় ক্রিকেট আরও উচ্চতায় উঠবে।”