টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে আনঅফিসিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে ওমান ‘এ’ দলকে ৬০ রানে হারায় বাংলাদেশ।
মাসকাটের ওমান ক্রিকেট একাডেমি মাঠে শুক্রবার বাংলাদেশ ২০ ওভারে করে ৪ উইকেটে ২০৭।
৩ চার ও ২ ছক্কায় ৫৩ বলে ৬৬ করে স্বেচ্ছাবসরে যান নাঈম, লিটন আউট হন ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৩৩ বলে ৫৩ করে। সৌম্য করতে পরেন কেবল ৮, মুশফিক আউট প্রথম বলেই।
লিটন অবশ্য জীবন পান ২২ রানে, ৩৯ রানে বেঁচে যান নাঈম।
শেষ দিকে ধ্বংসলীলা চালান সোহান। ৭ ছক্কায় এই কিপার-ব্যাটার উপহার দেন ১৫ বলে অপরাজিত ৪৯ রানের ইনিংস।
রান তাড়ায় ওমান ২০ ওভারে তোলে ৯ উইকেটে ১৪৭ রান। দলের সব ক্রিকেটার অপেশাদার, বেশির ভাগের নেই আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা। দেড়শর কাছাকাছি রান করা তাই তাদের জন্য যথেষ্টই বড় ব্যাপার।
এই মাঠেই বিশ্বকাপের প্রাথমিক পর্বের তিন ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। মূল লড়াইয়ের আগে ময়দানের স্বাদ পাওয়া হয়ে গেল ভালোভাবেই।
পিঠের অস্বস্তির কারণে এই ম্যাচে খেলেননি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। নেতৃত্ব দেন লিটন। সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমান আছেন আইপিএলে। বিশ্বকাপ স্কোয়াড থেকে এদিন একাদশে ছিলেন না তাসকিন আহমেদ।
বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নামে টস হেরে। দ্বিতীয় বলে আসে ম্যাচের প্রথম চার, নাঈমের ব্যাটের কানায় লেগে কিপারের পাশ দিয়ে বল যায় বাউন্ডারিতে। তৃতীয় ওভারে দারুণ এক পুল শটে আরেকটি চার পান তিনি। লিটন প্রথম বাউন্ডারি পান দুর্দান্ত লফটেড অফ ড্রাইভে।
পঞ্চম ওভারে মিডিয়াম পেসার মেহরান খানের বলে নান্দনিক এক শটে লং অন দিয়ে লিটন মারেন ম্যাচের প্রথম ছক্কা। পরের বলে মারেন চার। ওই ওভারেই জীবন পান পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে।
পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ৪৮ রান। কিন্তু নাঈম তাতে করেন ১৯ বলে মাত্র ১৯।
তবে লিটন আরেকপ্রান্তে দারুণ ব্যাটিং করায় রান ওঠে ভালো গতিতেই। ১১ ওভারে দলের রান স্পর্শ করে একশ। এক্সট্রা কাভার দিয়ে বাউন্ডারিতে লিটন ফিফটি করেন ৩২ বলে।
লিটনের বিদায়েই ভাঙে ১০২ রানের জুটি। লেগ স্পিনার সময় শ্রীবাস্তবের বলে বেরিয়ে এসে সজোরে ব্যাট চালান লিটন, গুলির বেগে আসা বল হাতে জমান বোলার।
এরপর দ্রুত আরও তিনটি উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সময়ের পরের ওভারেই সৌম্য ধরা পড়েন লং অফে (৮ বলে ৮)। পরের ওভারে ওমান অধিনায়ক আমির কালিম বাঁহাতি স্পিনে নেন দুই উইকেট। প্রথম বলেই প্যাডল করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন মুশফিক। আফিফ হোসেন প্রথম বলে সুইপ করে ছক্কা মেরে পরের বলেই আরেকটি ছক্কার চেষ্টায় ধরা পড়েন অং অনে।
নাঈম ৩৯ রানে স্টাম্পিং থেকে বেঁচে গিয়ে ফিফটি করেন ৪২ বলে। তবে ২২ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারানোর পর রানের গতি একটু মন্থর হয় বাংলাদেশের। ১৫ ওভার শেষে রান দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ১২৬।
এরপর নাঈম সুইচ হিটে ছক্কা মেরে গতি বদলে দেওয়ার সূচনা করেন। পরের ওভারে তিনি মাঠ ছেড়ে যান অন্যদের সুযোগ দিতে। সোহানের তাণ্ডব শুরু সেই ওভার থেকেই। কালিমকে ছক্কা মারেন টানা দুটি। ১৯তম ওভারে পেসার ওবায়েদউল্লাহকে ছক্কা মারেন তিনি টানা তিন বলে। এর মধ্যে একটি ভেঙে দেয় গ্যালারি ছাড়িয়ে একটি কক্ষের কাঁচ।
রান উৎসবে যোগ দেন পরে শামীম হোসেনও। শেষ ওভারে শামীম মারেন দুটি ছক্কা, সোহান আরও দুটি। শেষ ৫ ওভারে আসে ৮১ রান। শামীম অপরাজিত থাকেন ১২ বলে ১৯ করে।
ওমান রান তাড়ার প্রথম ওভারেই হারায় উইকেট। নাসুম আহমেদকে উড়িয়ে মেরে লং অনে ধরা পড়েন অক্ষয় প্যাটেল। আরেক ওপেনার প্রুথভিকুমার মাচ্ছি বিদায় নেন শেখ মেহেদি হাসানের বলে সুইচ হিট খেলে, দারুণ ক্যাচ নেন লিটন।
তিনে নেমে শোয়েব খান ৩৯ বলে করেন ৪৩। তবে মিডল অর্ডারে দাঁড়াতে পারেননি আর কেউ। ৭৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বিশাল ব্যবধানে পরাজয়ের শঙ্কায় ছিল তারা।
তবে মাঠে থাকা দর্শকদের বেশ বিনোদন দেন লেজের ব্যাটসম্যানরা। নয়ে নেমে ৪ ছক্কায় ১৩ বলে ৩১ রান করেন রাফিউল্লাহ, মেহরান করেন ২ ছক্কায় ১৯। ওমান ‘এ’ তাই শেষ পর্যন্ত অলআউট হয়নি, রানও পৌঁছে যায় ভদ্রস্থ পর্যায়ে।
আনঅফিসয়াল এই ম্যাচের পর এবার অফিসিয়াল দুটি গা গরমের ম্যাচ খেলতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাবে বাংলাদেশ দল। আবু ধাবিতে আগামী মঙ্গলবার প্রস্তুতির প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা, বৃহস্পতিবার আয়ারল্যান্ড।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ২০৭/৪ (নাঈম ৬৬ (স্বেচ্ছাবসর), লিটন ৫৩, সৌম্য ৮, মুশফিক ০, আফিফ ৬, সোহান ৪৯*, শামীম ১৯*; রাফিউল্লাহ ৪-০-৪৮-০, ওবায়েদউল্লাহ ৩-০-৩৭-০, মেহরান ২-০-২৫-০, কালিম ৪-০-৩৯-২, শোয়েব ২-০-২২-০, সময় ৪-০-২৪-২, প্রুথভিকুমার ১-০-৯-০)।
ওমান ‘এ’: ২০ ওভারে ১৪৭/৯ (অক্ষয় ০, প্রুথভিকুমার ১, শোয়েব ৪৩, খালিদ ৭, কালিম ৭, খুররম ১১, মেহরান ১৯, রউফ ১৯, রাফিউল্লাহ ৩১, সময় ১*; নাসুম ৪-১-২২-১, মেহেদি , শরিফুল ৪-০-৩০-৩, সাইফ ৪-০-১৭-২, সৌম্য ৩-০-৩৫-০, আফিফ ১-০-৪-১, শামীম ১-০-৭-০)।