রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচে হৃদয়ের অপরাজিত ৯৩

প্রথম বলেই উইকেট। বাজে শুরুর ধারাবাহিকতা ধরে রেখে ৬৫ রানে নেই ৭ উইকেট। লক্ষ্য তখনও অনেক দূর। হাল ছাড়লেন না তৌহিদ হৃদয়। রেজাউর রহমানকে নিয়ে অষ্টম উইকেটে গড়লেন শতরানের জুটি। বাংলাদেশ এইচপি দল দেখতে শুরু করল জয়ের স্বপ্ন। কিন্তু রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত জিতে নিল বাংলাদেশ ‘এ’ দল।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Oct 2021, 02:22 PM
Updated : 2 Oct 2021, 06:58 PM

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে শনিবার তৃতীয় একদিনের ম্যাচটি ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে ৪ রানে হেরেছে এইচপি দল। ‘এ’ দল ৪ ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেছে ৩-০ ব্যবধানে।

বৃষ্টি বাধায় দেরিতে খেলা শুরু হলে ৪৪ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে ৯ উইকেটে ২২২ রান করে ‘এ’ দল। পঞ্চাশ পর্যন্ত যেতে পারেননি কেউ। সর্বোচ্চ ৪৭ রান সাদমান ইসলামের।

বৃষ্টি হানা দেয় পরের ইনিংসেও। এতে এইচপি দলের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৩ ওভারে ১৯৪ রান। ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়া দলকে শেষ ওভার পর্যন্ত টেনে নেন হৃদয়। ৯৩ রানের দারুণ ঝকঝকে এক অপরাজিত ইনিংসেও জেতাতে পারেননি দলকে। ৮ উইকেটে ১৮৯ রানে থামে  এইচপি দল।

শেষ ওভারে জয়ের জন্য এইচপি দলের প্রয়োজন ছিল ১৭ রানের। হৃদয় ও মুকিদুল ইসলাম মিলে পারেননি দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিতে। আবু জায়েদ চৌধুরির করা ওভারটি থেকে এক চারে আসে ১২ রান।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা ‘এ’ দলের শুরুটা ছিল ভালো। মুমিনুল হক ও সাদমানের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৬৭ রান।

৩ চারে ২৭ রান করা মুমিনুলকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন হৃদয়। এই স্পিনারকে বেরিয়ে এসে উড়িয়ে মারেন বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক। লং অন সীমানায় ধরা পড়েন রিশাদ হোসেনের হাতে। 

আগের ম্যাচে ফিফটি করা নাজমুল হোসেন শান্ত এবার করেন কেবল ১০। শর্ট লেগ থেকে দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে নন-স্ট্রাইক প্রান্তে সরাসরি থ্রোয়ে তাকে রান আউট করে দেন রিশাদ।

পরপর দুই বলে ফিফটির দুয়ারে থাকা সাদমান ও মোহাম্মদ মিঠুনকে ফিরিয়ে দেন হাসান মুরাদ। বাঁহাতি স্পিনারের বল লেগ সাইডে খেলে মিড উইকেট ফিল্ডারের হাতে সহজ ক্যাচ তুলে দেন ৩ চারে ৪৭ রান করা সাদমান। পরের বলেই তার দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে স্টাম্প এলোমেলো হয়ে যায় মিঠুনের।

ইমরুল কায়েস ও ইয়াসির আলি চৌধুরি বিপদে পড়া দলকে টানেন কিছুক্ষণ। তাদের জুটি বড় হতে দেননি তানভির ইসলাম। বাঁহাতি এই স্পিনারকে স্লগ খেলতে গিয়ে হাওয়ায় তুলে দেন ইয়াসির, সহজ ক্যাচ নেন হৃদয়।

ইমরুলকে বড় ইনিংস খেলতে দেননি মুরাদ। বাঁহাতি এই স্পিনার পরের ওভারে থামান মোসাদ্দেক হোসেনকে। ওভারে জোড়া শিকার ধরেন রেজাউর। তাইজুল ইসলামকে ফেরানোর পর ইরফান শুক্কুরকে এলবিডব্লিউ করে দেন তিনি।

শেষ দিকে খালেদ আহমেদের ২ ছক্কা ও ১ চারে ২১ বলে ২৫ রানের ইনিংসে লড়ার মতো পুঁজি পায় ‘এ’ দল।

জবাব দিতে নেমে প্রথম বলেই মুনিম শাহরিয়ারকে হারায় এইচপি দল। মোসাদ্দেকের শর্ট বল ব্যাকফুটে পুল করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান তিনি।

মোসাদ্দেকের শিকার তানজিদ হাসানও। আগের ম্যাচে ফিফটি করা এই ওপেনার স্লগ খেলে স্কয়ার লেগ বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন এবার কেবল ১৩ রান করে।

পরের ওভারে আক্রমণে এসে পারভেজ হোসেনকে এলবিডব্লিউ করে দেন মোসাদ্দেক। শাহাদাত হোসেন বোল্ড হয়ে যান খালেদের বলে।

আনিসুল ইসলামকে এলবিডব্লিউ করে দেন তাইজুল। পরপর দুই ওভারে রকিবুল হাসানের শিকার ইমরান-উজ-জামান ও তানজিম হাসান সাকিব। ৬৫ রানে ৭ উইকেট হারায় এইচপি দল।

এক প্রান্ত আগলে রাখেন হৃদয়। তাকে দারুণ সঙ্গ দেন রেজাউর। দুইজনে গড়েন ১০১ রানের অসাধারণ এক জুটি। যেখানে অগ্রণী এই ম্যাচে এইচপি দলকে নেতৃত্ব দেওয়া হৃদয়ই।

৩ চার ও ২ ছক্কায় ৫৪ বলে ফিফটি তুলে নেন হৃদয়। এইচপি দল এগিয়ে যেতে থাকে লক্ষ্যের দিকে। রেজাউরকে ফিরিয়ে জমে যাওয়া জুটি ভাঙেন রকিবুল। বাঁহাতি স্পিনারের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান ২ চার ও এক ছক্কায় ৩৩ রান করা রেজাউর।

শেষ ওভারে ১৭ রানের সমীকরণ মেলাতে পারেননি হৃদয় ও মুকিদুল। ৭৯ বলে ৩ ছক্কা ও ৪ চারে ৯৩ রানে অপরাজিত ছিলেন হৃদয়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ‘এ’ দল: ৪৪ ওভারে ২২২/৯ (মুমিনুল ২৭, সাদমান ৪৭, শান্ত ১০, ইমরুল ৩৭, মিঠুন ০, ইয়াসির ২০, মোসাদ্দেক ২০, ইরফান ৯, তাইজুল ১, রাকিবুল ১২*, খালেদ ২৫*; তানজিম ৭-১-৪০-০, মুকিদুল ৮-০-৪১-০, রেজাউর ৯-০-৫৫-২, মুরাদ ৯-০-৩০-৪, হৃদয় ৫-০-২৩-১, তানভির ৬-০-৩১-১)।

বাংলাদেশ এইচপি দল: ৩৩ ওভারে ১৮৯/৮ (মুনিম ০, তানজিদ ১৩, পারভেজ ১৮, শাহাদাত ৮, হৃদয় ৯৩*, আনিসুল ৬, ইমরান ০, তানজিম ০, রেজাউর ৩৩, মুকিদুল ৯*; মোসাদ্দেক ৭-০-২৫-৩, আবু জায়েদ ৬-০-৫২-০, খালেদ ৬-০-৪৭-১, তাইজুল ৭-০-৩৬-১, রাকিবুল ৭-০-২৬-৩)।

ফল: ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে ‘এ’ দল ৪ রানে জয়ী।