৭০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে হাই পারফরম্যান্স (এইচপি) দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ ‘এ’ দলকে জয় এনে দেন মুশফিক।
যদিও সেরা সময়ের কাছাকাছিও ছিল না তার ব্যাটিং। প্রান্ত বদলাতে ভুগতে হয় তাকে বেশ। ৩৫ ও ৪২ রানে সুযোগ দেন দুইবার। ফিফটি ছুঁতে বল লাগে ৭৭টি। তবে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৯১ বলের ইনিংসটি হয়তো তাকে সহায়তা করবে সেরা সময়ে ফিরতে।
এ মাসের শুরুতে নিউ জিল্যান্ড সিরিজে ব্যাট হাতে ব্যর্থতার পর বিশ্বকাপের আগে অনুশীলনের জন্য নিজের তাগিদে ‘এ’ দলের হয়ে দুটি একদিনের ম্যাচ খেলার সিদ্ধান্ত নেন মুশফিক।
মুশফিক রান পেলেও ব্যর্থ বাংলাদেশ বিশ্বকাপ দলের আরেকজন শামীম হোসেন। ভালো ভিত পেয়েও আগ্রাসী এই তরুণ ব্যাটসম্যান এইচপি দলের হয়ে ১২ বলে করেন কেবল ৮ রান। নিজেই দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়ে একটি উইকেট অবশ্য পান তিনি।
এইচপি দলের হয়ে ৮১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম, ফিফটি করেন শাহাদাত হোসেন। জুনে ঢাকা লিগের পর প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে অভিজ্ঞ ইমরুল কায়েস ‘এ’ দলের হয়ে করেন ফিফটি।
বিশ্বকাপ দলে জায়গা না পাওয়া মোসাদ্দেক হোসেন বল হাতে নেন ৪ উইকেট। তবে নিজের আসল কাজ ব্যাটিংয়ে থিতু হয়েও আউট হয়ে যান ২৪ রানে।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে ম্যাচটি ৬ উইকেটে জিতে নেয় বাংলাদেশ ‘এ’ দল।
বড় স্কোরের ভিত গড়েও শেষ দিকে পথ হারিয়ে এইচপি দল গুটিয়ে যায় ২৪৭ রানে। ‘এ’ দল ম্যাচ শেষ করে ১৩ বল বাকি রেখে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা এইচপি দল ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই হারায় পারভেজ হোসেন ইমনকে (৩)। শহিদুল ইসলামের লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে গ্লাভস ছুঁইয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন বাঁহাতি ওপেনার।
সেই ধাক্কা সামাল দিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে দুর্দান্ত জুটি গড়েন তানজিদ ও মাহমুদুল হাসান জয়। দুজনে যোগ করেন ১৩০ রান।
৬২ বলে ৩৮ করে মাহমুদুলের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। দ্বিতীয় স্পেলে ফেরা পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বির লেংথ বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে শর্ট কাভারে ধরা পড়েন মাহমুদুল।
এরপর তৌহিদ হৃদয় (৮) দ্রুত ফেরেন মুশফিকুর রহিমের দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে। দ্রুত সিঙ্গেল নেওয়ার চেষ্টায় থাকা ব্যাটসম্যানকে মিড অন থেকে সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট করেন মুশফিক।
ষষ্ঠ উইকেটে শাহাদাত হোসেন ও আকবর আলি গড়েন আরেকটি কার্যকর জুটি। শাহাদাত রান বাড়াচ্ছিলেন এক-দুই করে, আকবর উইকেট গিয়েই খেলতে থাকেন দারুণ সব শট। ৫১ রানের জুটি হয় দুজনের।
৪০ ওভার শেষে এইচপির রান ৫ উইকেটে ২০৭। দৃষ্টিসীমায় তখন অন্তত ২৮০ রান। কিন্তু ২৪ বলে ২৮ করে আকবর আউট হওয়ার পর একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে তারা। শহিদুলের বাইরের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন আকবর। ৬৪ বলে ৫১ করে শাহাদাতও অনেকটা একইভাবে আউট রুবেল হোসেনের বলে।
ঝড় তোলার সামর্থ্য আছে যার, সেই শামীম হোসেন আউট হন মোসাদ্দেকের শর্ট বল সরাসরি স্কয়ার লেগ ফিল্ডারের হাতে তুলে দিয়ে। শেষ দিকে আরও দুটি উইকেট নেন মোসাদ্দেক। এইচপি দল শেষ ৫ উইকেট হারায় ৩৬ রানের মধ্যে।
রান তাড়ায় ‘এ দলকে গতিময় শুরু এনে দেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ৪ ওভারেই দল তোলে ৩৫ রান, তাতে শান্ত করেন ১৭ বলে ২৭। আউটও হন তিনি আগে। দুই বাঁহাতি ওপেনারের জুটি ভাঙতে পঞ্চম ওভারেই অফ স্পিনার শামীমকে আক্রমণে আনেন এইচপি অধিনায়ক আকবর। নিজের প্রথম বলেই শামীম বাঁদিকে দুর্দান্ত ডাইভিং ক্যাচে আউট করেন শান্তকে।
তবে ‘এ’ দল এরপরও এগিয়ে যায় অনায়াসে। আরেক ওপেনার মুমিনুল হক ও ইমরুল কায়েস দ্বিতীয় উইকেটে যোগ করেন ৫৮ রান। সুমন খানের বলে সীমানায় রেজাউর রহমানের অসাধারণ ক্যাচে অধিনায়ক মুমিনুল থামেন ২৯ রান করে।
এরপর দলকে এগিয়ে নেন ইমরুল ও মুশফিক। রান রেটের চাপ না থাকায় ধীরস্থির ব্যাটিংয়ে এগিয়ে যান দুজন। গড়ে ওঠে আরেকটি অর্ধশত রানের জুটি।
লেগ স্পিনার আমিনুল হোসেন বিপ্লবকে স্লগ করে ইমরুল আউট হন ৮১ বলে ৬০ করে। মোসাদ্দেক উইকেটে যাওয়ার পরপরই আমিনুলকে ছক্কা মেরে শুরু করেন। পরে ২৪ রান করে তিনি বিদায় নেন সুমনকে শাফল করে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে।
আউট হতে পারতেন মুশফিকও। ৩৫ রানে পয়েন্টে তার ক্যাচ নিতে পারেননি মাহমুদুল, ৪২ রানে গালিতে শামীম। দুটিই অবশ্য কঠিন ছিল। পরে মোহাম্মদ মিঠুনকে নিয়ে দলকে জিতিয়ে ফেরেন মুশফিক।
চার দিনের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা মিঠুন এবার অপরাজিত থাকেন ২৩ বলে ২৮ রান করে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ এইচপি: ৪৮.৫ ওভার ২৪৭ (তানজিদ ৮১, পারভেজ ৩, মাহমুদুল ৩৮, শাহাদাত ৫১, হৃদয় ৮, আকবর ২৮, শামীম ৮, আমিনুল ৮, সুমন ১, রেজাউর ১, তানভির ১*; রুবেল ৯.৫-১-৩২-২, শহিদুল ৮-০-৫০-২, কামরুল রাব্বি ৮-০-৪৪-১, তাইজুল ১০-০-৫৭-০, নাঈম ৬-০-২৯-০, মোসাদ্দেক ৭-০-৩১-৪)।
বাংলাদেশ ‘এ’: ৪৭.৫ ওভারে ২৫২/৪ (মুমিনুল ২৯, শান্ত ২৭, ইমরুল ৬০, মুশফিক ৭০*, মোসাদ্দেক ২৪, মিঠুন ২৮*; মুকিদুল ৭-০-৫০-০, সুমন ৯-০-৫২-২, শামীম ৮-০-৩৪-১, রেজাউর ৮-০-৩৯-০, তানভির ১০-১-৩৯-০, আমিনুল ৫.৫-০-৪৬-১)।
ফল: বাংলাদেশ ‘এ’ দল ৬ উইকেটে জয়ী।