ইংলিশ সংবাদমাধ্যমে খবরটি ছড়িয়ে পড়ে রোববার। গুঞ্জনকে সত্যি প্রমাণ করে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে আইপিএলে থাকা মইন সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেন অবসরের ঘোষণা।
বিদায় বেলায় টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি অনুরাগের কথা বললেন মইন। ব্যাখ্যা করলেন অবসরের কারণ।
“টেস্ট ক্রিকেট অসাধারণ। (এখানে) একটি ভালো দিন কাটালে অন্য যে কোনো সংস্করণের চেয়ে বেশি ভালো লাগে, বেশি তৃপ্তিদায়ক এবং মনে হয়, সত্যিই এটি অর্জন করে নিতে হয়েছে। টেস্ট ক্রিকেট উপভোগ করেছি, কিন্তু কখনও কখনও লড়াইয়ের তীব্রতা এখানে অনেক বেশি এবং আমার মনে হয়, যথেষ্ট করেছি এবং যা করেছি, তা নিয়ে আমি খুশি ও সন্তুষ্ট।”
“আমার বয়স এখন ৩৪, যতদিন সম্ভব খেলে যেতে চাই ও নিজের ক্রিকেট স্রেফ উপভোগ করতে চাই। ছেলেদের সঙ্গে মাঠে নামা, স্নায়ুর চাপকে সঙ্গী করে বিশ্বের সেরাদের বিপক্ষে লড়াই আমি মিস করব। বোলিংয়ের দিক থেকে, নিজের সেরা বলে যে কাউকে আউট করতে পারব, এই অনুভূতিটাকে মিস করব।”
ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফোর যদিও খবর, কোভিড পরিস্থিতিতে লম্বা সময় পরিবার থেকে দূরে থাকার ব্যাপারটি তার টেস্ট অবসরের ভাবনাকে প্রভাবিত করেছে। এখন তিনি জৈব সুরক্ষা বলয়ে আইপিএল খেলছেন, এরপরই আছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। অ্যাশেজ দলে থাকলে লম্বা সময় অস্ট্রেলিয়ায় সফরেও থাকতে হবে বিশ্বকাপের পরই। সব ভেবেই তার এই সিদ্ধান্ত।
৬৪ ম্যাচে ২ হাজার ৯১৪ রান ও ১৯৫ উইকেট নিয়ে শেষ হলো মইনের টেস্ট ক্যারিয়ার। ইংল্যান্ডের ইতিহাসের তৃতীয় সফলতম স্পিনার তিনি। পেয়েছেন টেস্ট হ্যাটট্রিকের স্বাদও।
এ মাসের শুরুতে ভারতের বিপক্ষে ওভাল টেস্টই হয়ে রইল তার ক্যারিয়ারের শেষ। ওই টেস্ট একদিক থেকে ফুটিয়ে তোলে তার ক্যারিয়ারের ছবিও। প্রথম ইনিংসে দুর্দান্ত কিছু শট খেলে ৩৫ রান করার পর আউট বাজে এক শটে। তার ক্যারিয়ারও এরকমই, খুব খারাপ নয়, তবে সম্ভাবনা ছিল আরও অনেক ভালো কিছুর!
সাদা চোখে টেস্ট পরিসংখ্যান তার ভালোই। তবে ২ হাজার রান ও ১০০ উইকেটের ডাবল তিনি পূর্ণ করেছিলেন স্যার ইয়ান বোথাম, স্যার গ্যারি সোবার্স, ইমরান খানদের মতো অলরাউন্ডারদের চেয়েও দ্রুতগতিতে। আরও ভালো কিছু প্রত্যাশা ছিল তার কাছে।
ব্যাট হাতে ফর্মে থাকলে তিনি ছন্দময়, নান্দনিক ও প্রতিপক্ষের কাছ থেকে ম্যাচ বের করে নেওয়ার মতো একজন। বল হাতে ছন্দে থাকলে দুর্দান্ত এক স্পিনার। কিন্তু সম্ভাবনার সবকিছুর পূর্ণতা তিনি দিতে পারেননি।
ক্যারিয়ারের শুরুটা ছিল তার মূলত ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসেবে। ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে লর্ডসে অভিষেক, পরের টেস্টেই হেডিংলিতে করেন সেঞ্চুরি। ক্যারিয়ারের পঞ্চম টেস্টে পান প্রথমবার পাঁচ উইকেট শিকারের স্বাদ, ভারতের বিপক্ষে সাউথ্যাম্পটনে।
ব্যাট হাতে তার সেরা সময় কাটে ২০১৬ সালে। ক্যারিয়ারের ৫ টেস্ট সেঞ্চুরির ৪টিই করেন ওই বছর। ওই বছর রান করেন হাজারের বেশি, উইকেট নেন ৩৭টি। এক পঞ্জিকাবর্ষে হাজার রান করাদের মধ্যে এর চেয়ে বেশি উইকেট টেস্ট ইতিহাসেই আছে কেবল আর বোথামের (৪৭ উইকেট, ১৯৮২ সালে)।
তখন তিনি স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবেই দলে জায়গা পাওয়ার মতো। কিন্তু সেই ধারাবাহিকতা আর ধরে রাখতে পারেননি। তাই থিতু হতে পারেননি কোনো পজিশনে। ১ থেকে শুরু করে ৯ পর্যন্ত সব পজিশনেই তিনি ব্যাট করেছেন। ক্যারিয়ার শেষ ব্যাটিং গড় ২৮.২৯, যা তার প্রতিভার সঙ্গে খুবই বেমানান।
২০১৬ সালের পর ব্যাট হাতে ধারাবাহিকতা হারিয়ে ক্রমে হয়ে ওঠেন তিনি বোলিং অলরাউন্ডার। ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৪ টেস্টে নেন ২৫ উইকেট। ওভাল টেস্টে করেন হ্যাটট্রিক, যা ছিল ৭৯ বছরের মধ্যে ইংলিশ কোনো স্পিনারের প্রথম টেস্ট হ্যাটট্রিক। ২০১৮-১৯ মৌসুমে শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ৬ টেস্টে নেন ৩২ উইকেট।
তবে বোলিংয়েও ধারাবাহিকতা অভাব ছিল অনেক সময়। ভালো হয়নি তার শেষটাও। ভারতের বিপক্ষে সিরিজে এবার ৩ টেস্ট খেলে উইকেট নেন ৬টি, করতে পারেননি কোনো ফিফটি।
বিদায় বেলায় কোচ, অধিনায়কদের পাশাপাশি মইন কৃতজ্ঞতা জানালেন পরিবারের প্রতিও।
“পিটার মুরস ও ক্রিস সিলভারউডকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি কোচ হিসেবে থাকার জন্য, বিশেষ করে পিটার আমাকে অভিষেকের সুযোগ দিয়েছিল। কুকি (অ্যালেস্টার কুক) ও রুটির (জো রুট) নেতৃত্বে খেলে উপভোগ করেছি, আশা করি তারাও আমার খেলায় খুশি হয়েছে।”
“আমার বাবা-মা আমার কাছে এক নম্বর। তাদের পাশে না পেলে কোনোভাবেই এটা করতে পারতাম না। আমার প্রতিটি ম্যাচই তাদের জন্য এবং আমি জানি, আমাকে নিয়ে তারা গর্বিত। আমার ভাই-বোনেরা, খারাপ সময়ে তাদেরকে সবার আগে পাশে পেয়েছি। আমার স্ত্রী ও বাচ্চারা…স্ত্রীর ত্যাগ ও ধৈর্যর জন্য কৃতজ্ঞতা। আমার এই ভ্রমণে তারা ছিল অসাধারণ। আমি যা কিছু করেছি, তাদের জন্যই করেছি।”