‘ওয়েস্টার্ন ব্লক’ নিয়ে ক্ষুব্ধ রমিজ প্রতিশোধ চান মাঠে

নিউ জিল্যান্ডের সিদ্ধান্ত বিস্ময়কর হয়ে এলেও ইংল্যান্ডের সফর বাতিল করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাশিতই ছিল রমিজ রাজার কাছে। হতাশা ও ক্ষোভ অবশ্য কম নয় তার, বরং বেড়েছে আরও। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) চেয়ারম্যানের দাবি, ক্রিকেটের ওয়েস্টার্ন ব্লক একজোট হয়ে পাকিস্তানকে বিপাকে ফেলার আয়োজন করছে। বিশ্বকাপে মাঠের ক্রিকেটে হারিয়েই এই জোটকে জবাব দিতে চান তিনি।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Sept 2021, 05:25 AM
Updated : 21 Sept 2021, 08:49 AM

গত শুক্রবার রাওয়ালপিন্ডিতে ওয়ানডে সিরিজ শুরুর ঠিক আগে নিউ জিল্যান্ড জানায়, নিরাপত্তা হুমকির কারণে সিরিজ না খেলে দেশে ফিরবে তারা। এরপর থেকে শঙ্কায় ঝুলছিল আগামী মাসে ইংল্যান্ডের পাকিস্তান সফরও। অবশেষে সোমবার ইংল্যান্ডের বোর্ড জানায়, তারাও যাচ্ছে না পাকিস্তানে।

ইংলিশ বোর্ড তাদের বিবৃতিতে নিরাপত্তা শঙ্কার কথা সরাসরি উল্লেখ করেনি। বরং তারা বলেছে এই অঞ্চলে ভ্রমণ নিয়ে দুর্ভাবনা ও কোভিড পরিস্থিতিতে ক্রিকেটারদের মানসিক চাপ না বাড়ানো।

এটিই পিসিবি কর্তাদের ক্ষুব্ধ করেছে আরও। মহামারী শুরুর পর এর মধ্যেই দুই দফায় ইংল্যান্ড সফর করে এসেছে পাকিস্তান। কিন্তু প্রাপ্য প্রতিদান থেকে তাদের বঞ্চিত করা হলো বলে মনে করছে পিসিবি।

পিসিবির এক ভিডিও বার্তায় সেই ক্ষোভ উগড়ে দিলেন রমিজ রাজা।

“ইংল্যান্ড সফর বাতিল করায় আমি ভীষণ হতাশ, তবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। কারণ দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওয়েস্টার্ন ব্লক এসব ক্ষেত্রে একজোট হয়ে পরস্পরের পাশে থাকে। নিরাপত্তা হুমকি ও শঙ্কার কথা বলে আসলে যে কোনো সিদ্ধান্তই নেওয়া যায়। আমাদের ক্ষুব্ধ হওয়ার একটা কারণ, নিরাপত্তা শঙ্কার ধরণ নিয়ে কোনো তথ্য নিউ জিল্যান্ড আমাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেনি। এরপর ইংল্যান্ডের ঘোষণা অনুমিতই ছিল, কারণ ওয়েস্টার্ন ব্লক এসবই করে।”

“আমাদের জন্য এটা শিক্ষা। আমরা তাদেরকে সেবা দিতে নিজেদের সীমা ছাড়িয়ে চেষ্টা করি, তাদের চাওয়াকে মাথায় তুলে রাখি। আমরা দুনিয়ার সেরা অতিথিপরায়ণ। অথচ আমরা ওদের দেশে গিয়ে কোয়ারেন্টিনের সব নিয়ম মানি, অনেক অপমান করা হলেও সহ্য করি। এখানেই শিক্ষা নেওয়ার আছে যে, এখন থেকে আমরা ততটাই করব, যতটায় আমাদের লাভ আছে।”

রমিজ পিসিবি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে এমন বড় দুটি ধাক্কা হজম করতে হচ্ছে পাকিস্তানের ক্রিকেটকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবার একঘরে হয়ে পড়ার শঙ্কা তো আছেই, পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতিও হচ্ছে প্রচুর। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, দেড় থেকে আড়াই কোটি মার্কিন ডলার আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পিসিবি।

রমিজের আশঙ্কা, এই দুই সিরিজ বাতিলের প্রভাব অন্যান্য সিরিজের ওপরও পড়তে পারে।

“ক্রিকেট সমাজ যদি এসবের খেয়াল না রাখে, তাহলে আর কী লাভ! বিপদের সময়ই তো পরস্পরের পাশে থাকা উচিত। নিউ জিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড সফর বাতিল করল, সামনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ, অস্ট্রেলিয়া-এসবও হুমকিতে পড়তে পারে। কারণ, অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ড, ইংল্যান্ডের ব্লক একই।”

“অভিযোগ কাকে করব? তারা তো আপন। যদিও তারা আমাদের আপন করেনি এবং নানা অজুহাত খোঁজে সফর না করার।”

নিউ জিল্যান্ডের কাছ থেকে ‘ক্ষতিপূরণ’ আদায়ে আলোচনা শুরু হয়েছে বলেও জানান রমিজ। তবে সেটা আর্থিক নাকি নতুন সিরিজ আয়োজন, সেসবের বিস্তারিত তিনি জানাননি।

বিশ্বকাপের আগে পরপর দুটি সিরিজ বাতিল হওয়ায় পাকিস্তানের প্রস্তুতিতেও বেশ চোট লেগেছে। সেই ঘাটতি পুষিয়ে নিতে জিম্বাবুয়ে, বাংলাদেশের দ্বিতীয় সারির দলের সঙ্গে সিরিজের কথাও পাকিস্তান ভেবেছিল বলে জানান রমিজ। তার দাবি, এই দুই দেশ তৈরিই ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তাড়াহুড়োর পথ তারা বেছে নেননি বলে জানান তিনি।

আপাতত রমিজের চাওয়া, বিশ্বকাপে মাঠের ক্রিকেটেই যেন জবাব দেয় পাকিস্তান।

“আমরা বিশ্বকাপে যাব এবং সেখানে আগে লক্ষ্য ছিল একটি দল, আমাদের প্রতিবেশিরা (চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত), সেখানে এখন আরও দুটি দল যুক্ত হলো-নিউ জিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড। এখান থেকে শক্তিও মিলবে এবং একটা মানসিকতাও গড়ে তুলতে হবে যে, ‘তোমরা আমাদের সঙ্গে ঠিক কাজ করোনি, আমরা তোমাদের কাছে হারব না।’ মাঠের ক্রিকেটেই প্রতিশোধ নিতে হবে।”

আগামী মাসের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের গ্রুপেই আছে ভারত ও নিউ জিল্যান্ড। ইংল্যান্ডের সঙ্গে দেখা হতে পারে কেবল সেমি-ফাইনাল বা ফাইনালে।