মিরপুরের চেয়ে স্মার্ট বোলিং করতে হবে বিশ্বকাপে: হেরাথ
আরিফুল ইসলাম রনি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 20 Sep 2021 05:53 PM BdST Updated: 20 Sep 2021 09:50 PM BdST
সাক্ষাৎকার দেওয়ার কথা দিয়েও অনেক দিন অপেক্ষায় রাখায় বারবার দুঃখপ্রকাশ করে রঙ্গনা হেরাথ বললেন, “আসলে দীর্ঘদিন পর বাড়ি ফিরে কয়েকটা দিন পরিবারের সঙ্গে কাটালাম।” টানা তিনটি সিরিজ দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশের স্পিন পরামর্শক এখন ছুটিতে শ্রীলঙ্কায়। টেস্ট ইতিহাসের সফলতম বাঁহাতি স্পিনারের সঙ্গে বিসিবির চুক্তি বিশ্বকাপ পর্যন্ত। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে লঙ্কান এই স্পিন গ্রেট কথা বললেন বাংলাদেশ দলের সঙ্গে তার অভিজ্ঞতা, স্পিনারদের শক্তি-দুর্বলতা, আগামী মাসের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও সামগ্রিক আরও অনেক কিছু নিয়ে।
বাংলাদেশের দায়িত্ব নেওয়ার আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোচিংয়ের অভিজ্ঞতা ছিল না আপনার। বাংলাদেশ দলে এই কয়েক মাস কেমন কাটল?
রঙ্গনা হেরাথ: ঘরোয়া ক্রিকেটে তামিল ইউনিয়ন ক্রিকেট ক্লাব আর এলপিএলে কিছুটা কোচিংয়ের অভিজ্ঞতা ছিল আমার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশই প্রথম। বিসিবির প্রতি কৃতজ্ঞতা। আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা না থাকার পরও তারা আমার ওপর আস্থা রেখেছে, সুযোগ দিয়েছে। আমাকে উপযুক্ত মনে করার জন্য ধন্যবাদ জানাই।
তিনটি সিরিজ আমি দলের সঙ্গে থাকলাম। সময়টা উপভোগ করেছি। সাকিব-তাইজুলের মতো সিনিয়র স্পিনাররা তো বটেই, নাসুম-মেহেদি-নাঈম-মিরাজ, ওরা আমার কাজকে উপভোগ্য করে তুলেছে। সবসময় শিখতে আগ্রহী ওরা। এই তাড়নাটা গুরুত্বপূর্ণ। ওরা অনেক কিছু জানতে চায়, উন্নতি করতে চায়। আমারও তাই দায়িত্বটি ভালো লাগছে।
আপনার এই কদিনের অভিজ্ঞতায় লঙ্কান স্পিনারদের সঙ্গে বাংলাদেশের স্পিনারদের মিল বা পার্থক্য কতটা চোখে পড়েছে?
হেরাথ: দুটি ব্যাপার আছে, প্রতিভা আর স্কিল। প্রতিভায় আমি দুই দেশের খুব পার্থক্য দেখি না। অনেক প্রতিভাবান স্পিনার আছে দুই দলেই। স্কিলের ব্যাপার কিছু থাকে সহজাত, কিছু শিখতে হয়। শিখতে কারও সময় বেশি লাগে, কারও কম।
গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, ম্যাচের পরিস্থিতি। কঠিন সময়ে কে কতটা মানিয়ে নিতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ঠিক সিদ্ধান্তগুলি নিতে হয়। এই জায়গায় সত্যি বলতে, দুই দেশেরই স্পিনারদের উন্নতি প্রয়োজন। এমন নয় যে, ওরা পারছে না। তবে আরও ধারাবাহিকভাবে করতে শিখতে হবে।
আপনি মানসিক দিকের কথা বললেন, কিন্তু স্কিলের কথা যদি বলা হয়, টার্ন করানোর কথাই ধরলে, লঙ্কান স্পিনারদের অনেকেই অনেক টার্ন করাতে পারেন। বাংলাদেশে বড় টার্ন করানোর মতো স্পিনার কখনোই খুব বেশি আসেনি…
হেরাথ: টার্ন আসলে স্পিনারদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শেন ওয়ার্ন, মুত্তিয়া মুরালিধরনরা কিংবদন্তি হয়েছেন এত টার্ন করাতে পারতেন বলেই, এরপর অন্যান্য স্কিলের ব্যাপার। টার্ন করানোর ক্ষেত্রে উইকেটের ভূমিকা তো কিছু থাকেই। আমাদের স্পিনাররা অনেকেই টার্নিং উইকেটে খেলে বেড়ে ওঠে।
টেকনিক্যাল দিক থেকে, টার্ন করানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বোলিং অ্যাকশন। উপযুক্ত অ্যাকশন থাকতে হবে। আরেকটা হলো, বলের রোটেশন। শেন ওয়ার্ন যেমন ছিলেন, তার বলে অনেক রোটেশন ছিল বলে টার্ন করত অনেক। মুরালিধরনের বলেও অনেক রোটেশন ছিল, তবে তাকে তো প্রথাগত স্পিনারদের মধ্যে রাখা যাবে না। সে আলাদা ধরনের, অনেকটাই ফ্রিক। রোটেশন বেশি করাতে না পারলে টার্নের জন্য যথোপযুক্ত ও মসৃণ অ্যাকশন জরুরি। সঙ্গে আর্ম স্পিডও গুরুত্বপূর্ণ।
দেখুন, উন্নতির সুযোগ সবসময়ই আছে। বাংলাদেশের স্পিনাররা অনেক দিক থেকেই কার্যকর। টার্ন বেশি করানো ও সব দিকে আরও উন্নতি করানোয় আমরা কাজ করছি।
শ্রীলঙ্কা একজনের পর আরেকজন রহস্য স্পিনার বের করে আনছে। অজন্তা মেন্ডিস থেকে শুরু করে আকিলা দনাঞ্জয়া, এখন মাহিশ থিকশানা। এত রহস্য স্পিনার আপনারা কিভাবে পান? বাংলাদেশ কেন একজনও পায় না!
হেরাথ: (হাসি) খুব ভালো প্রশ্ন। এই ধরনের স্পিনার কিন্তু বানানো বা গড়ে তোলা যায় না। তারা প্রকৃতিগতভাবেই ওরকম, স্বয়ংক্রিয়ভাবেই আসে। ইচ্ছে করে বা কোনো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে রহস্য স্পিনার বের করা যায় না। মুস্তাফিজুর রহমানের কথাই ধরুন। ইউনিক ধরনের পেসার, স্পেশাল ঘরানার প্রতিভা। তার মতো অমন ফ্লেক্সিবল কবজি কি চেষ্টা করেও কারো বানানো যাবে?
শ্রীলঙ্কার সৌভাগ্য, এরকম অনেককে পাওয়া যাচ্ছে। একটা কারণ হলো, সফট বল বা টেনিস বল ক্রিকেট। আমাদের এখানে, কিংবা বাংলাদেশ বা ভারত-পকিস্তানেও প্রচুর সফট বল ক্রিকেট হয়। এখানে ব্যাটসম্যানরা প্রচুর মারে। বোলাররা তাই ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করে। সেসব করতে গিয়েই অনেকে ব্যতিক্রমি কিছু শেখে এবং বৈচিত্রময় কিছু করার চেষ্টা করে আমাদের এখানে। আমি নিজেও একসময় সফট বলে খেলতাম, তখন নানা কিছু করার চেষ্টা করেছি।
এই মুহূর্তে আমি বাংলাদেশ দলে বা আশেপাশে তেমন কাউকে দেখছি না। তবে পরের পর্যায়ে নিশ্চয়ই থাকতে পারে বা ভবিষ্যতে উঠে আসতে পারে।
ক্রিকেট সংস্কৃতিরও তো একটা ব্যাপার থাকে! অনেক দেশেই ব্যতিক্রমী কাউকে পেলেও প্রথাগত ট্রেনিংয়ে পড়ে স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলে। শ্রীলঙ্কা নিয়ে যতদূর জানা যায়, আপনাদের ওখানে সহজাত প্রতিভাকে কখনোই অতি কোচিং দিয়ে নষ্ট করা হয় না, বরং তার প্রকৃতিগত প্রতিভাকে আরও শাণিত করার চেষ্টা করা হয়…
হেরাথ: হ্যাঁ, এটা একটা ব্যাপার বটে। প্রতিভা তো আসেই। তাদেরকে পাওয়ার পরই আসল কাজ শুরু। নিশ্চিত করতে হয় যেন তাদের স্বকীয়তা হারিয়ে না যায়। আমাদের এখানে তৃণমূল থেকে ওপরের পর্যায় পর্যন্ত কোচিংয়ে এটায় খেয়াল রাখা হয় যেন আধুনিক কোচিং দিয়ে সহজাত প্রতিভা নষ্ট না করা হয়। মুরালি, মালিঙ্গা, মেন্ডিসরা এ কারণেই উঠে আসে।
বাংলাদেশের স্পিনাদের প্রসঙ্গে আসা যাক। সাকিবের মতো একজনের সঙ্গে কাজ করছেন আপনি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যার ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা। তাকে আসলে কতটুকু শেখাতে হয় বা তার সঙ্গে কোন দিক নিয়ে কাজ করা হয় আপনার?
হেরাথ: সাকিব এমন অসাধারণ এক ক্রিকেটার, তার রেকর্ড-পরিসংখ্যান, আইসিসি র্যাঙ্কিং, সবকিছুতেই তা ফুটে ওঠে। সব ধরনের ক্রিকেটেই সে দারুণ করে আসছে। বিশেষ করে সীমিত ওভারে খুবই কার্যকর একজন। টেস্ট রেকর্ডও দারুণ।
তার মতো একজন ক্রিকেটার সব দলেই থাকা গুরুত্বপূর্ণ, দলে সার্বিক প্রভাবের জন্য। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পাশাপাশি আইপিএল ও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে এত অভিজ্ঞতা তার, এত কিছু জানে, সেগুলো দলের সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করায় দল উপকৃত হয়। এমনকি কোচ হিসেবে আমিও অনেক কিছু জানতে পারি তার কাছ থেকে, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের এত অভিজ্ঞতা তো আমার নেই। ক্রিকেটার হিসেবে সাকিব এমনই উচ্চতার ও সামর্থ্যের।
এমনিতে সাকিব কি আপনাকে অনেক প্রশ্ন করে? টেকনিক্যাল দিক থেকে বেশি কথা হয় নাকি ম্যাচ পরিকল্পনা বা ব্যাটসম্যানদের পড়তে পারা নিয়ে?
হেরাথ: টেকনিক্যাল ও মানসিক সব দিক থেকেই সে বেশ পরিপক্ক। আর, খেলাটা এখন এত দ্রুত এগোচ্ছে এবং প্রতিদিনই এত বেশি বদলাচ্ছে, সেসবের সঙ্গে তাল মেলানো জরুরি। সাকিব এসব নিয়ে কথা বলতে সবসময়ই আগ্রহী। টেকনিক্যাল দিক নিয়ে যেমন আলোচনা হয়, এই পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে মানসিকভাবে মানিয়ে নেওয়া নিয়েও কথা হয় অনেক।
সাকিব একসময় বেশ টার্ন করাতে পারতেন। তার আর্ম ডেলিভারি ছিল ভয়ঙ্কর। এখন সহায়ক উইকেট ছাড়া টার্ন অতটা পান না, আর্ম ডেলিভারি খুব একটা দেখা যায় না। এখনও তিনি যথেষ্ট চতুর ও কার্যকর স্পিনার অবশ্যই। তবে অনেক সময়ই একটু জোরে বল করেন। অনেক টি-টোয়েন্টি খেলার কারণেই কি তার বোলিংয়ে এই পরিবর্তন?
হেরাথ: হতে পারে। এখনকার ক্রিকেটে সেটা অস্বাভাবিক নয়। আর ১৫ বছর ধরে খেলে গেলে বোলিংয়ে কিছু পরিবর্তন আসবেই। সময়ের সঙ্গে তাল মেলানোর ব্যাপারও থাকে। সব ধরনের ক্রিকেটে মানিয়ে নেওয়ার আলাদা পথ আছে। এখন এক সংস্করণ থেকে আরেক সংস্করণে খুব দ্রুত শিফট করতে হয়। সাকিবের ব্যাপারে আমি বলব, সে কিন্তু সব সংস্করণে যথেষ্টই ভালো মানিয়ে নিতে পারে।

টেস্ট ইতিহাসের সফলতম বাঁহাতি স্পিনার আপনি। ড্যানিয়েল ভেটোরিও দারুণ সফল। আপনাদের আগে ডেরেক আন্ডারউড, বিষেন সিং বেদির মতো কিংবদন্তিরা ক্রিকেট রাঙিয়েছেন। বাঁহাতি স্পিনের এই গ্রেটদের মধ্যে সাকিবকে কোথায় রাখবেন?
হেরাথ: বোলার সাকিবের আগে ক্রিকেটার সাকিবের কথা বলি। আমার মতে, সে ক্রিকেট ইতিহাসেই বিরল একজন। ব্যাটিং-বোলিং দুটোই প্রায় সমান এবং দুটির যে কোনো একটি দিয়েই দলে আসতে পারেন, এরকম ক্রিকেটার খুব কমই খুঁজে পাবেন ইতিহাসে।
জ্যাক ক্যালিসের কথা বলতে পারেন। তিনি ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন। বেশ ভালো বোলার। কিন্তু আমি নিশ্চিত নই, বোলিং দিয়ে তিনি টেস্ট দলে আসতে পারতেন কিনা। সাকিব এখানে ব্যতিক্রম। তার ব্যাটিং-বোলিংয়ের একটিকে এগিয়ে বা পিছিয়ে রাখা কঠিন। আরেকটা ব্যাপার, সাকিব খুবই স্মার্ট ক্রিকেটার।
তার স্পিন বোলিংয়ের কথা বললে, আমাদের কারও সঙ্গে তুলনায় যাব না। তবে তার রেকর্ডই তার হয়ে কথা বলবে।
একটা ব্যাপার হলো, অনেক বছর ধরে খেললেও খুব বেশি টেস্ট সে খেলেনি (১৪ বছরে মাত্র ৫৮টি)। বাংলাদেশ যদি আরও বেশি টেস্ট খেলতে পেত, সাকিব হয়তো আমার বা ড্যানের (ভেটোরি) উইকেট সংখ্যা ছাড়িয়ে যেতে পারত। সেই সামর্থ্য তার ছিল বা আছে।
এই সময়ের একটা ব্যাপার হলো, অনেক বেশি ক্রিকেট হয় এখন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ও ফ্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট। ওদের কাজটা তাই কঠিন। তারপরও, যদি বাংলাদেশ আরও বেশি ও নিয়মিত টেস্ট খেলত, অবশ্যই তার উইকেট অনেক বেশি থাকত।
নাসুম আহমেদের সঙ্গে অনেক কাজ করতে দেখা যায় আপনাকে। তার সম্ভাবনা কেমন দেখছেন?
হেরাথ: নাসুমের অ্যাকশন বেশ ভালো। টেকনিকও ভালোই। ট্যাকটিকাল ও মানসিক দিকগুলোয় আরও উন্নতি করতে হবে। সেসব নিয়েই আমি বেশি কাজ করছি। ম্যাচ পরিস্থিতিতে, বিশেষ করে দলের প্রয়োজনের সময় বা কঠিন সময়ে ঠিকভাবে সাড়া দিতে পারা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমি সবসময় বিশ্বাস করি, যখন মাথা পরিষ্কার থাকে, কঠিন সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া তখন সহজ হয়। এই চ্যালেঞ্জ নাসুমকে জয় করতে হবে।
অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ড সিরিজে বেশিরভাগ দিক সে ঠিকঠাক করেছে। আর যে জায়গাগুলো বললাম, সেসব নিয়ে কাজ চলমান আছে।
এই দুই সিরিজে উইকেট তো খুবই সহায়ক ছিল। নাসুম বোলিং ভালোও করেছেন। তবে প্রায়ই দেখা গেছে, হুটহাট শর্ট বল করে বা জায়গা নিয়ে বাউন্ডারি হজম করেছেন কিংবা ব্যাটসম্যানের চাপ আলগা করে দিয়েছেন। ভালো ব্যাটিং উইকেটে ভোগান্তির শঙ্কা থেকে যায় না তাতে?
হেরাথ: আপনি খুবই সত্যি বলেছেন। তার এই চ্যালেঞ্জের কথাই আমি বলেছি। ব্যাপারটা ট্যাকটিকাল ও মানসিক। আগেই বলেছি, তার অ্যাকশন মসৃণ, টেকনিক ভালো। কিন্তু কখনও কখনও বোলাররা ভিন্ন কিছু করতে গেলে, মানসিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। ভিন্ন কিছু ভাবা বা করা অবশ্যই জরুরি। কিন্তু সেটা নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে।
এজন্যই ভাবনার স্বচ্ছতা, মাথা পরিষ্কার থাকার কথা বলেছি। এটা নাসুম শিখবে, অভিজ্ঞতার সঙ্গে আরও বেশি জানবে।
আপনি শর্ট বলগুলির কথা বলেছেন। এরপর নাসুম কীভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, এটাও ভাবতে হবে! ভুল হয়ই সবার, সেখান থেকে ফিরে আসা গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আমি নাসুমকে আরও বেশি কৃতিত্ব দেই। বাউন্ডারি খেলে বা আলগা বল দিলে সে পরের বলেই শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করে।
আরেক বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামকে এখনও ম্যাচে দেখতে পারেননি আপনি। তবে দলের সঙ্গে তিনি ছিলেন পুরো সময়টায়। নেটে দেখে ধারণা কতটুকু পেয়েছেন তার সম্পর্কে?
হেরাথ: দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই তিনি সিরিজে একটি ম্যাচেও তার খেলার সুযোগ হয়নি। যে কোনো ক্রিকেটারের জন্যই এটা কঠিন যে, টানা আড়াই-তিন মাস দলের সঙ্গে থেকেও খেলতে পারেনি। কিন্তু তারপরও আমার যেটা অসাধারণ লেগেছে, সে অনুশীলনে একটুও ঢিল দেয়নি। কঠোর পরিশ্রম করে গেছে।
তারও শেখার তাড়না অনেক ও দ্রুত শেখে। নতুন কিছু শিখতে ও করতে মুখিয়ে থাকে সে।

‘লাল বলের ক্রিকেটে বেশি কার্যকর’, এই ধারণার কারণেই কি সীমিত ওভারে বেশি সুযোগ মিলছে না তার নাকি কম্বিনেশন বা অন্য কারণে?
হেরাথ: তার রেকর্ডই তো বলছে যে টেস্টে সে কতটা ভালো। ১৩০টির বেশি (১৩৪) টেস্ট উইকেট তার, বেশ ভালো রেকর্ড। সবশেষ টেস্টেও সম্ভবত ৫ উইকেট নিয়েছে (শ্রীলঙ্কায়)।
তাইজুল আসলে এই দলের প্রথাগত স্পিনারদের একজন। দারুণ অ্যাকশন, টার্ন ও ড্রিফট ভালো পায়। তার মানে এই নয় যে সাদা বলে কার্যকর হতে পারবে না। সুযোগ পেলে আশা করি দেখাবে।
দেশের মাঠে মেহেদী হাসান মিরাজের রেকর্ড দুর্দান্ত, বিদেশে বা ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে ততটা ভালো নয়। তার উন্নতি ও বৈচিত্র যোগ করা কতটা জরুরি?
হেরাথ: অবশ্যই জরুরি। মিরাজের সঙ্গে আমার একান্তে কথা হয়েছে যে আমাদের সামনে কোন ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে এবং কোন পথে এগোনো যায়। উপমহাদেশের উইকেটে সহায়তা থাকে। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটে স্পিনারদের কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হয়। কিন্তু দেশকে প্রতিনিধিত্ব করলে, বাংলাদেশের হয়ে খেললে শুধু দেশে বা উপমহাদেশে নয়, সব জায়গায় ভালো করতে হবে। সেটা বোঝার মানসিকতা থাকা জরুরি।
মিরাজের ভাবনা ও মানসিকতা বেশ ভালো। কথা বলতে কখনোই পিছপা হয় না সে। সেও জানে যে দেশের বাইরে তাকে ভালো করতে এবং সেই স্কিলে উন্নতি করতে সে মুখিয়ে আছে। সবারই আসলে এরকম মানসিকতাই থাকা উচিত, বিশেষ করে টেস্টের জন্য।
লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লবকেও কেবল নেটেই দেখতে পেরেছেন। বাংলাদেশে আসলে লেগ স্পিনের সংস্কৃতি নেই। ঘরোয়া ক্রিকেটেও লেগ স্পিনাররা নানাভাবে অবহেলিত। বিপ্লবকে ম্যাচ খেলানো কতটা জরুরি?
হেরাথ: ম্যাচ তো আসলে সবার জন্যই খেলা জরুরি। কিন্তু সবাইকে সুযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। তবে হ্যাঁ, লেগ স্পিনার একজন দলে থাকা দরকার। প্রায় সব দলেই এখন লেগ স্পিনার আছে এবং তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কারণ লেগ স্পিনাররা সবসময়ই উইকেট শিকারি।
টি-টোয়েন্টিতে তারা কখনও কখনও খরুচে হতে পারে। কিন্তু দলকে গুরুত্বপূর্ণ উইকেট এনে দেয়। বাংলাদেশেও সেরকম একজন বিকল্প থাকলে অবশ্যই ভালো হয়। তবে একাদশের কম্বিনেশনও ভাবতে হয়।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে রিজার্ভ হিসেবে যাচ্ছে বিপ্লব। এটা ভালো যে অন্তত দলের সঙ্গে সে থাকছে। বোলিং নিয়ে কাজ করার সুযোগ পাবে। আমি যতটুকু দেখেছি, তার ভালো সম্ভাবনা আছে। অবশ্যই উন্নতির অনেক সুযোগ আছে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথা বললেন, মিরপুরের টার্নিং ও মন্থর উইকেট খেলে গিয়ে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের স্পিনারদের জন্য কেমন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে?
হেরাথ: এটা নিয়ে অনেক আলোচনা শুনছি। দেখুন, একটা ব্যাপার তো নিশ্চিত যে মিরপুরের মতো উইকেট কখনোই আরব আমিরাতে পাওয়া যাবে না। তবে, বিশ্বকাপের আগেই ওই মাঠগুলোতে আইপিএল হবে প্রায় এক মাস ধরে। উইকেটগুলো অবশ্যই ক্লান্ত থাকবে। স্পিনারদের জন্য সহায়তা তাই সেখানে থাকবেই। মিরপুরের মতো নয়, তবে অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি সহায়তা থাকবে দুবাই-আবু ধাবি-শারজাহতে। ভারত তো এমনি এমনি তাদের দলে ৫-৬ জন স্পিনার নেয়নি!
আমাদেরকে যেটা করতে হবে, মাথা খাটিয়ে বল করতে হবে। মিরপুরের চেয়ে স্মার্ট বোলিং করতে হবে সেখানে।
প্রথম রাউন্ডে ওমানে আমি মনে করি, উইকেট যেমনই হোক, আমরা ভালো বোলিং করব।
তার মানে, বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভালো সম্ভাবনাই দেখছেন?
হেরাথ: অবশ্যই। আমাদের সাম্প্রতিক জয়গুলি দেখুন, আমি জানি যে উইকেট নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে… কিন্তু দলের আচরণ, মানসিকতা, দল হিসেবে পারফরম্যান্স দেখুন। দলটা সাফল্যের জন্য ক্ষুধার্ত, লক্ষ্য ধরে এগোচ্ছে। এই ধরনের শরীরী ভাষা, ইতিবাচক মানসিকতা যখন থাকে, সেই দলের ভালো করার সুযোগ থাকে। এই মানসিকতা ধরে রাখতে পারলে আমি নিশ্চিত, বিশ্বকাপে আমরা ভালো করব।
বাংলাদেশের সঙ্গে আপনার চুক্তি শেষ বিশ্বকাপ দিয়েই। এরপরও কাজ করতে চাইবেন?
হেরাথ: বিসিবির সঙ্গে এটা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আমার দিক থেকেও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। আমি একটা ব্যাংকে কাজ করি। আরও কিছু ব্যস্ততা আছে। আমি তাই ঠিক নিশ্চিত নই। বিসিবি যদি চায়, যদি ফ্লেক্সিবল থাকে তারা, ছাড় পাওয়া যায় এবং আমার সুযোগ থাকে, তখন হতেও পারে!
মুরালিধরনের সঙ্গে কথা হয়? আপনাদের আলোচনায় স্পিন বোলিং কতটা থাকে?
হেরাথ: ইদানিং খুব একটা হয় না কথা। সে এখন আইপিএলে। আমি তো বাংলাদেশ দলের সঙ্গে। আগে অনেক কথা হতো এবং স্পিন নিয়েও হতো। তার সঙ্গে স্পিন নিয়ে কথা বলা সবসময়ই আনন্দদায়ক।
-
ধনাঞ্জয়াকে ফেরালেন সাকিব
-
মিরপুর টেস্টেও মিরাজকে পাচ্ছে না বাংলাদেশ
-
আবার মাঠের বাইরে শরিফুল
-
‘দল আমার কাছে অনেক কিছু চায়, আমাকে মূল্যবান মনে করে’
-
‘বাংলাদেশে আসলে অভিজ্ঞতার দাম নেই’
-
শেষের নাটকীয়তায় হেরে কলকাতার বিদায়
-
আবার রিভার্স সুইপ করতে ভয় করবেন না মুশফিক
-
ফারজানা-নিগারের ব্যাটে রূপালী ব্যাংকের বড় জয়
সর্বাধিক পঠিত
- বিদায়ের ইঙ্গিত দিলেন স্ত্রী, মুশফিক বললেন ‘এমন ভাবনা নেই’
- ‘বাংলাদেশে আসলে অভিজ্ঞতার দাম নেই’
- শেষ বেলার ২ উইকেটে এগিয়ে বাংলাদেশ
- ফেনীতে গাড়ি তল্লাশি নিয়ে র্যাব-পুলিশের ‘হাতাহাতি’, আহত ৪
- ‘সালিশে ক্ষুব্ধ’: চেয়ারম্যানের ছেলেকে ‘হত্যার পর আত্মহত্যা’
- ডলারের তেজ খানিকটা কমল
- নয় সচিব পদে রদবদল, পদোন্নতি
- শেষের নাটকীয়তায় হেরে কলকাতার বিদায়
- আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরকারের ভাবনায় রাইস ব্র্যান ও সরিষার তেল
- টিসিবির পণ্য আর ট্রাকে মিলবে না, ইঙ্গিত বাণিজ্যমন্ত্রীর