আম্পায়ারের আঙুল তুলে না দেওয়া ছাড়া উপায় রইল না। হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন দুই প্রান্তের ব্যাটসম্যানরা। আফগানরা মেতে উঠল উল্লাসে। ‘মানকাড’ আউট করে শেষ উইকেট নিয়ে তারা পেল সফরে প্রথম জয়ের দেখা।
যুব ওয়ানডে সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচ জয়ের পর এবার হারল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। চতুর্থ ম্যাচে আফগানিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দলের জয় ১৯ রানে।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুক্রবার আফগানদের ২১০ রানে আটকে রান তাড়ায় বাংলাদেশ পড়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে। তাহজিবুল যখন উইকেটে যান, ১০৭ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে তখন ধুঁকছে দল।
আটে নামা তাহজিবুল সেখান থেকেই অদম্য মানসিকতায় চালিয়ে যান লড়াই। লোয়ার অর্ডারদের নিয়ে এগিয়ে নেন দলকে। শেষ ব্যাটসম্যান মুশফিক যখন ক্রিজে যান, জয় তখনও ৪৬ রান দূরে। অসাধারণ ব্যাটিংয়ে তাহজিবুল জিইয়ে রাখেন দলের সম্ভাবনা।
স্ট্রাইক ধরে রেখে খেলতে থাকেন তিনি। জুটিতে রান আসে ২৬। মুশফিক খেলেন কেবল একটি ডেলিভারি। তবু শেষ রক্ষা হয়নি শেষটা অমন অপ্রত্যাশিত হওয়ায়। মুহূর্তের অমনোযোগিতায় নন স্ট্রাইক প্রান্তে রান আউট মুশফিক। ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৫০ রান করে অপরাজিত থেকেও তাহজিবুলকে মাঠ ছাড়তে হয় হতাশায়।
দিনের শুরুতে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা আফগানিস্তান ৪৭ রান তুলতে হারায় দুই উইকেট। বিলাল সায়েদি এলবিডব্লিউ মুশফিক হাসানের বলে, আল্লাহ্ নুরের স্টাম্প এলোমেলো করে দেন মেহরাব হাসান।
সেখান থেকে দলকে কিছুক্ষণ টানেন ওপেনার সুলিমান আরবজাই ও চারে নামা বিলাল আহমাদ। তবে তাদের জুটিও স্থায়ী হয়নি বেশিক্ষণ। ৪ চার ও এক ছক্কায় ৪৩ রান করা সুলিমানকে ফিরিয়ে দেন আইচ মোল্লা।
সেখান থেকে আফগানরা দুই পেরোতো পারে মূলত নানগেয়ালিয়া খারোটের সৌজন্যে। ৩৬ বলে ২৭ রান করে অপরাজিত থাকেন আফগান অধিনায়ক।
বাংলাদেশের পাঁচ বোলার নেন একটি করে উইকেট। দুটি উইকেট নেন কেবল পেসার মহিউদ্দিন তারেক। তবে সবচেয়ে খরুচেও ছিলেন তিনিই (৯ ওভারে ৫৯)।
রান তাড়ায় বাংলাদেশের শুরুটা ছিল বেশ ভালো। মাহফিজুল ইসলাম ও ইফতিখার হোসেনের উদ্বোধনী জুটিতে ফিফটি পার করে দল। তবে থিতু হয়েও কেউ খেলতে পারেননি বড় ইনিংস।
১৮ রান করে ফিরে যান ইফতিখার, ২৬ রান করা মাহফিজুলকে এলবিডব্লিউ করে দেন ইজহারুল হক নাভিদ।
আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান আইচ এবার খুলতে পারেননি রানের খাতা। ইয়ামা আরাবের ভেতরে ঢোকা বল লেগ সাইডে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন তিনি। যদিও আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে খুশি হতে পারেননি, ইশারায় দেখাচ্ছিলেন ব্যাটে ছুঁয়েছে বল।
এরপর অধিনায়ক মেহরব হাসান ও নাইমুর রহমান ফেরেন দু অঙ্ক ছোঁয়ার আগে। এই দুজনের মধ্যে বিদায় নেন ২৩ রান করা খালিদ হাসানও। বাংলাদেশ তখন বড় হারের শঙ্কায়।
খাদের কিনারা থেকে দলকে উদ্ধার করেন তাহজিবুল। আবদুল্লাহ আল মামুন, শামসুল ইসলামদের নিয়ে তিনি কমাতে থাকেন ব্যবধান। এক পর্যায়ে জয়টাও মনে হচ্ছিল খুবই সম্ভব।
আগামী রোববার সিরিজের শেষ যুব ওয়ানডেতে মুখোমুখি হবে দুই দল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দল: ৫০ ওভারে ২১০/৮ (আরবজাই ৪৩, সায়েদি ১২, নুর ১১, বিলাল ৬০, নাজিবউল্লাহ ১২, জাহিদউল্লাহ ১৫, খারোটে ২৭*, নাভিদ ১০, আহমাদজাই ৬, হাসানি ০*; মুশফিক ১০-১-৩২-১, তারেক ৯-০-৫৯-২, মেহরব ৬-২-১৮-১, শামসুল ৫-১-২৭-০, আইচ ৫-১-২২-১, নাইমুর ১০-১-৩২-১, মামুন ৫-০-১৫-১)।
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল: ৪৪.২ ওভারে ১৯১ (মাহফিজুল ২৬, ইফতিখার ১৮, খালিদ ২৩, আইচ ০, মেহরব ৪, নাইমুর ৯, মামুন ২১, তাহজিবুল ৫০*, শামসুল ১২, তারেক ১, মুশফিক ০; আরব ৮-০-৪৪-১, আহমাদজাই ৮-১-২৯-১, খারোটে ৮.২-০-৩১-২, নাভিদ ১০-২-৩৫-২, নাজিবউল্লাহ ৫-১-২১-১, হাসানি ৫-০-১৯-২)।
ফল: আগানিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দল ১৯ রানে জয়ী।
সিরিজ: ৫ ম্যাচের সিরিজ ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে বাংলাদেশ যুবারা।
ম্যান অব দা ম্যাচ: বিলাল আহমাদ।