ড্রেকসের বীরত্বে নাটকীয় জয়ে সিপিএল চ্যাম্পিয়ন সেন্ট কিটস

ক্রিস গেইল আউট প্রথম ওভারেই। আগের দুই ম্যাচে ১৯ ছক্কার পর এভিন লুইসের ব্যাটও এবার শান্ত। বিখ্যাত দুই বাঁহাতির নিষ্প্রভ থাকার দিনে জ্বলে উঠলেন প্রায় অখ্যাত এক বাঁহাতি। যার মূল কাজ বোলিং, সেই ডমিনিক ড্রেকস নিজেকে চেনালেন ব্যাট হাতে। পরাজয়ের চোখ রাঙানি থেকে তিনি অসাধারণ ব্যাটিংয়ে সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসকে নিয়ে গেলেন জয়ের ঠিকানায়।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Sept 2021, 07:52 PM
Updated : 15 Sept 2021, 09:42 PM

শেষ বলের ফয়সালায় সেন্ট লুসিয়া কিংসকে হারিয়ে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (সিপিএল) শিরোপা জিতল সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস প্যাট্রিয়টস।

দুই দলের সামনেই এবার ছিল প্রথম শিরোপার হাতছানি। তাতে ড্রেকসের সৌজন্যে শেষ হাসি সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসের।

রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে বুধবার সেন্ট লুসিয়াকে ৩ উইকেটে হারায় সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস। নিজের ৫০০তম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে স্মরণীয় জয়ে ট্রফি উঁচিয়ে ধরেন অধিনায়ক ডোয়াইন ব্রাভো।

নিজেদের মাঠে ১৬০ রান তাড়ায় সেন্ট কিটসের সম্ভাবনা এক পর্যায়ে কমে গিয়েছিল অনেকটাই। শেষ ৬ ওভারে তাদের প্রয়োজন পড়ে ৬৫ রান। সেখান থেকেই চোখধাঁধানো সব শটের মহড়ায় দলকে জয়ের দিকে এগিয়ে নেন ড্রেকস।

শেষ ওভারে যখন প্রয়োজন ৯ রান, দারুণ বোলিংয়ে প্রথম চার বলে কেবল চার রান দেন কেসরিক উইলিয়ামস। পঞ্চম বলে এক্সট্রা কাভার দিয়ে চার মেরে দেন ড্রেকস।

শেষ বলটি উইলিয়ামস করেন ইয়র্কার। ড্রেকস ঠেকিয়ে দেন কোনোরকমে। ব্যাটের কানায় লেগে বল যায় শর্ট ফাইন লেগে। কাঙ্ক্ষিত একটি রান হয়ে যায় অনায়াসেই। বাঁধনহারা উল্লাসে মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসের ক্রিকেটাররা।

এই ম্যাচের আগে ১৮ টি-টোয়েন্টি খেলে ড্রেকসের ব্যাটিং গড় ছিল ১৫, সর্বোচ্চ ছিল ৩৪। মূলত বাঁহাতি পেস বোলিংয়ের কারণে তিনি দলে। সেই তিনিই তিনটি করে চার ও ছক্কায় ২৪ বলে অপরাজিত ৪৮ রান করে ফাইনালের নায়ক।

সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে ১৬০ রান তাড়ায় প্রথম ওভারেই রোস্টন চেইসের জোরের ওপর করে ডেলিভারিতে শূন্য রানেই বোল্ড গেইল। দ্রুতই তাকে অনুসরণ করেন লুইস। আগের দুই ম্যাচে ১০২ ও ৭৭ রানের অপরাজিত দুটি ইনিংসের পর এবার তিনি ফেরেন স্রেফ ৬ রানে।

এরপর জশুয়া দা সিলভা (৩২ বলে ৩৭) ও শেরফেইন রাদারফোর্ড (২২ বলে ২৫) রান পেলেও টিকতে পারেননি লম্বা সময়। অধিনায়ক ব্রাভো ফেরেন ১১ বলে ৮ করেই। দলের সম্ভাবনাও যায় মিইয়ে।

কিন্তু ড্রেকস ও ফ্যাবিয়ান অ্যালেন মিলে আবার জাগিয়ে তোলেন আশা। ১৮ বলে ২০ করে অ্যালেন আউট হন শেষের আগের ওভারে। তবে ওয়াহাব রিয়াজের বলে ড্রেকসের ছক্কা ম্যাচ জমিয়ে তোলে আবার। শেষটাও ড্রেকস করেন দারুণ।

ম্যাচের প্রথম ভাগে সেন্ট লুসিয়া ব্যাটিংয়ে নামে টস জিতে। অধিনায়ক আন্দ্রে ফ্লেচার শুরু করেন প্রথম ওভারেই শেলডন কটরেলকে ছক্কা মেরে। প্রথম ওভারেই বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থাকে ৪৫ মিনিটের মতো।

বিরতির পর ফ্লেচারকে হারায় সেন্ট লুসিয়া। তবে আরেক ওপেনার রাকিম কর্নওয়াল খেলেন ৩২ বলে ৪৩ রানের ইনিংস। মিডল অর্ডারে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা রোস্টন চেইস করেন ৪০ বলে ৪৩।

তবে মার্ক ডেয়াল, ডেভিড ভিসা, টিম ডেভিডদের ব্যর্থতায় ভুগতে থাকে সেন্ট লুসিয়া। শেষদিকে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে তাদের স্কোর দেড়শ ছাড়িয়ে নেন কিমো পল। সাতে নামা পেসার ৫ ছক্কায় ২১ বলে ৩৯ রান করে দলকে এনে দেন লড়ার মতো রান।

৫ ছক্কার তিনটিই তিনি মারেন শেষের আগের ওভারে, ড্রেকসের টানা তিন বলে। কে জানত, এই ম্যাচেই দারুণভাবে শোধ তুলবেন ড্রেকস!

এতদিন তার পরিচয় ছিল মূলত বাবার নামে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ১২ টেস্ট ও ৩৪ ওয়ানডে খেলা সাবেক পেসার ভ্যাসবার্ট ড্রেকসের সন্তান হিসেবে। এবার বড় মঞ্চেই ডমিনিক ড্রেকস নিশ্চিত করলেন, এখন তাকে মনে রাখতে হবে তার নামেই!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

সেন্ট লুসিয়া কিংস: ২০ ওভারে ১৫৯/৭ (ফ্লেচার ১১, কর্নওয়াল ৪৩, ডেয়াল ১, চেইস ৪৩, ভিসা ২, ডেভিড ১০, পল ৩৯, ওয়াহাব ২*, রয়্যাল ০*; কটরেল ১-০-১২-০, অ্যালেন ৪-০-১৭-১, ফাওয়াদ ৪-০-৩২-২, নাসিম ৪-১-২৬-২, ড্রেকস ৩-০-৩৮-১, জাগেসার ৪-০-৩৪-১)।

সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস প্যাট্রয়টস: ২০ ওভারে ১৬০/৭ (গেইল ০, লুইস ৬, জশুয়া ৩৭, রাদারফোর্ড ২৫, ব্রাভো ৮, ড্রেকস ৪৮*, অ্যালেন ২০, কটরেল ৫, নাসিম ১*; চেইস ৩-০-১৭-১, ওয়াহাব ৪-০-৩৬-২, জোসেফ ৩-০-২২-১, ভিসা ৩-০-২৭-১, রয়্যাল ২-০-১৯-০, ডেয়াল ১-০-৮-০, উইলিয়ামস ৪-০-২৯-১)।

ফল: সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস প্যাট্রিয়টস ৩ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: ডমিনিক ড্রেকস।

ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট: রোস্টন চেইস (৪৪৬ রান, ১০ উইকেট)