ক্রিকেটাররা প্রচণ্ড ভয় পেয়েছিল, টেস্ট বাতিল নিয়ে সৌরভ

ইংল্যান্ড ও ভারতের পঞ্চম টেস্ট বাতিল হওয়া নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড-বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলি জানালেন, তাদের খেলোয়াড়রা চায়নি বলেই ম্যাচটি খেলা সম্ভব হয়নি। তবে এজন্য কোনোভাবেই ক্রিকেটারদের দোষ দিতে চান না তিনি। বললেন, দলে কোভিড-১৯ রোগের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল খেলোয়াড়রা। 

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Sept 2021, 01:18 PM
Updated : 13 Sept 2021, 01:18 PM

গত শুক্রবার ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা দুয়েক আগে বাতিল হয়ে যায় ম্যানচেস্টার টেস্ট। ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) বিবৃতি দিয়ে জানায়, ক্যাম্পের ভেতরে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কায় ভারত দুঃখজনকভাবে দল মাঠে নামাতে পারছে না। তাই দু-পক্ষের মধ্যে আলোচনার পর পঞ্চম টেস্ট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পরে বিসিসিআই জানায়, বাতিল হওয়া ম্যাচটি ভবিষ্যতে পুনরায় আয়োজনের জন্য ইসিবিকে প্রস্তাব দিয়েছে তারা। এর জন্য উভয় বোর্ডই একটি সূচি খোঁজার জন্য কাজ করবে।

ভারতীয় দলে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার জন্য অনেকে দায়ী করছেন প্রধান কোচ রবি শাস্ত্রীকে। মূলত শাস্ত্রীর একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের পরই ঘটে বিপত্তি। সেখানে উপস্থিত ছিলেন দলের আরও কিছু সদস্য। পরে শাস্ত্রীসহ আক্রান্ত হন বেশ কয়েকজন। তবে কলকাতা ভিত্তিক টেলিগ্রাফের সঙ্গে আলাপচারিতায় কোচের পাশেই দাঁড়ালেন সৌরভ। সঙ্গে এটাও জানিয়ে দিলেন, ম্যাচটি পরবর্তীতে হলেও তা আগের সিরিজের অংশ হবে না।

“ওল্ড ট্র্যাফোর্ড টেস্ট বাতিল হয়ে গেছে। তাদের (ইসিবি) অনেক ক্ষতি হয়েছে এবং তাদের জন্য এটা সহজ হবে না। বিষয়গুলো একটু স্থির হতে দিন, তারপর আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারব। পরের বছর যখনই ম্যাচটি হবে, তখন এটা একক ম্যাচ হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। কারণ, এটা আর আগের সিরিজের ধারাবাহিকতা হতে পারে না।”

ওভালে চতুর্থ টেস্ট শুরুর আগের দিন গত ১ সেপ্টেম্বর শাস্ত্রীর বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানটি হয়। টেস্ট চলাকালীন ৫ সেপ্টেম্বর কোভিড-১৯ টেস্টে পজিটিভ ফল আসে শাস্ত্রীর। সতর্কতার অংশ হিসেবে তাকেসহ দলটির বোলিং কোচ ভারত অরুন, ফিল্ডিং কোচ আর শ্রীধর ও ফিজিওথেরাপিস্ট নিতিন প্যাটেলকে আইসোলেশনে পাঠানো হয়। এরপর অরুন ও শ্রীধরেরও ফল পজিটিভ আসে। 

পরে ৯ সেপ্টেম্বর কোভিড-১৯ পজিটিভ হন ভারতের সহকারী ফিজিও ইয়োগেশ পারমারও। একাধিক ভারতীয় খেলোয়াড় এরপর বিসিসিআই ও টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে আলোচনায় পঞ্চম টেস্টে মাঠে নামা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

ইয়োগেশ আক্রান্ত হওয়ার পরই খেলোয়াড়রা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল, বললেন সৌরভ।

“খেলোয়াড়রা খেলতে অস্বীকার জানিয়েছিল, কিন্তু তাদের দোষ দেওয়া যায় না। ফিজিও ইয়োগেশ পারমার খেলোয়াড়দের খুব কাছাকাছি ছিল। নিতিন প্যাটেল আইসোলেশনে যাওয়ার পর কেবল পারমারই দলের সঙ্গে ছিলেন, যিনি খেলোয়াড়দের সঙ্গে অবাধে মিশেছিলেন এবং এমনকি তাদের কোভিড-১৯ পরীক্ষাও করেছিলেন। তাদের শরীর মাসাজও করতেন, খেলোয়াড়দের দৈনন্দিন জীবনের অংশ ছিলেন তিনি।”

“খেলোয়াড়রা যখন জানতে পারে, তিনি (ইয়োগেশ) কোভিড পজিটিভ হয়েছেন, তখন তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল। আশঙ্কা করেছিল, তারা অবশ্যই এই রোগে আক্রান্ত এবং খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল। জৈব-সুরক্ষা বলয়ে থাকা সহজ নয়। অবশ্যই, তাদের ভাবনার প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো উচিত।”

বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান নিয়ে বলতে গিয়ে রোববার মিড-ডের সঙ্গে আলাপচারিতায় অবশ্য নিজের পক্ষেই সাফাই গেয়েছেন শাস্ত্রী, “পুরো দেশটাই (ইংল্যান্ড) তো খোলা। প্রথম টেস্ট থেকেই যেকোনো কিছু হতে পারত।”

শাস্ত্রী বা অন্য কারও কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য অনুমতি চাওয়া হয়নি বলে জানালেন সৌরভ। তবে তাদের দোষ দেখছেন না সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক।

“আপনি কতক্ষণ আপনার হোটেলের কক্ষে বন্দি থাকতে পারেন? আপনি কি আপনার বাড়িতে দিনরাত বন্দি থাকতে পারেন? আপনি এমন কোনো জীবনে নিজেকে সীমাবদ্ধ করতে পারবেন না যেখানে আপনি কেবল হোটেল থেকে মাঠে যাবেন আর মাঠ থেকে হোটেলে ফিরবেন। মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।”

পুনরায় শুরু হতে যাওয়া আইপিএলের জন্য আগেভাগে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যেতে ভারতের ক্রিকেটাররা পঞ্চম টেস্ট খেলতে অস্বীকৃতি জানায় বলে যে গুঞ্জন উঠেছে, সেটিও উড়িয়ে দিয়েছেন ভারতের বোর্ড প্রধান।

“আপনি চিরকাল জৈব সুরক্ষা বলয়ে থাকতে পারবেন না। এই খেলোয়াড় এবং সাপোর্ট স্টাফরা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বলয়ে আছে। এটা কোনো রসিকতা নয়। শারীরিক ও মানসিকভাবে এটা খুবই কঠিন। তারা মানুষ এবং এটা দুঃখজনক। যুক্তরাজ্য থেকে খেলোয়াড়রা এরই মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতে (আইপিএলের জন্য) আরেকটি জৈব সুরক্ষা বলয়ে ঢুকেছে। এরপর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য তাদের আবার বলয়ে থাকতে হবে। এটা সহজ নয়।”