শেষের হারে ম্লান সিরিজ জয়ের স্বস্তি

মূল বোলারদের চারজন বাইরে, মাঠে নতুন চেহারার বোলিং লাইনআপ। উইকেটও তরতাজা। তারপরও বোলিংটা খারাপ হলো না বাংলাদেশের। দলে পরিবর্তন এলেও ব্যাটিংয়ে শক্তি কমেনি খুব একটা। কিন্তু এই বিভাগেই ভুগতে হলো সবচেয়ে বেশি। স্বাগতিকদের ব্যাটিং দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে খেলা হচ্ছে তুলনামূলক ভালো উইকেটে। বাজে শটের মহড়ায় নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে বড় ব্যবধানেই হারল মাহমুদউল্লাহর দল।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Sept 2021, 02:44 PM
Updated : 10 Sept 2021, 04:10 PM

মিরপুর শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুক্রবার পঞ্চম ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে ২৭ রানে জিতেছে নিউ জিল্যান্ড। বিশ্বকাপের আগে সবশেষ ম্যাচে হারলেও ৩-২ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ।

নিউ জিল্যান্ডের ১৬১ রান তাড়ায় ৮ উইকেটে বাংলাদেশ করতে পারে ১৩৪।

মন্থর ও অসমান বাউন্সের টার্নিং উইকেটে একের পর এক জয় পেলেও আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি কতটা হচ্ছে, সেই প্রশ্ন ছিলই। ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো উইকেট পেয়েও ব্যাটসম্যানদের বাজে শটের মহড়ায় সেই দুর্ভাবনা বাড়ল আরও।

বিশ্বকাপের চূড়ান্ত দল গঠনের পর এটাই বাংলাদেশের প্রথম ও শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। ছিলেন না সাকিব আল হাসান, মুস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন ও মেহেদি হাসান।

আগের চার টি-টোয়েন্টিতে একই একাদশ নিয়ে খেলা বাংলাদেশ এবার খেলায় বিশ্বকাপ দলে থাকা সৌম্য সরকার, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম ও শামীম হোসেনকে। তাসকিন ছাড়া বাকিরা ছিলেন বিবর্ণ।

টস হেরে বোলিংয়ে নেমে ফিন অ্যালেন ও রাচিন রবীন্দ্রর তোপের মুখে বাংলাদেশ। ১০ ম্যাচের মধ্যে প্রথমবারের মতো কোনো পেসার হিসেবে নতুন বলে বোলিং করা তাসকিনই কেবল একটু বেঁধে রাখতে পেরেছিলেন ব্যাটসম্যানদের।

বাজে এক ডেলিভারির পরও ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে উইকেট পেতে পারতেন নাসুম আহমেদ। তবে শামীমের ব্যর্থতায় বেঁচে যান রাচিন। তার সঙ্গে জুটি গড়ে তোলেন অ্যালেন।

বিস্ফোরক এই ব্যাটসম্যানের ঝড়ের সবচেয়ে বড় ঝাপটা যায় শরিফুলের ওপর দিয়ে। শেষ পর্যন্ত বাঁহাতি এই পেসারই তিন বলের মধ্যে বিদায় করেন দুই ওপেনারকে। ভাঙেন ৫৮ রানের উদ্বোধনী জুটি। ২৪ বলে তিন ছক্কা ও চারটি চারে ৪১ রান করেন অ্যালেন।

পাওয়ার প্লেতে ৬ ওভারে ৫৮ রান তোলা নিউ জিল্যান্ড শেষ ৬ ওভারে তোলে ৬৫ রান। দ্রুত চার উইকেট হারানোয় মাঝের ৮ ওভারে আসে ৩৮ রান।

বোলিংয়ে এসেই উইল ইয়াংকে বিদায় করেন আফিফ হোসেন। কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকে বিদায় করেন নাসুম। দ্রুত ৪ উইকেট হারানো সফরকারীরা প্রতিরোধ গড়ে টম ল্যাথাম ও হেনরি নিকোলসের ব্যাটে। তাদের জুটিতে এগিয়ে যায় নিউ জিল্যান্ড।

তাসকিনের বলে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নিয়ে নিকোলসকে বিদায় করেন নুরুল হাসান সোহান। অবিচ্ছিন্ন ষষ্ঠ উইকেটে কোল ম্যাকনকির সঙ্গে ২১ বলে ৪৩ রানের জুটিতে সিরিজে প্রথম দেড়শ রানের সংগ্রহ এনে দেন ল্যাথাম।

নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক কার্যকর ব্যাটিংয়ে অপরাজিত থাকেন ৩৭ বলে ৫০ রান করে। এই সিরিজে ও আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে যা তার দ্বিতীয় ফিফটি।

রান তাড়ায় মন্থর শুরু করা বাংলাদেশ দিক হারায় ব্যাটসম্যানদের একের পর এক ভুলে। পরে আফিফের দারুণ চেষ্টার পরও আর কক্ষপথে ফিরতে পারেনি।

পঞ্চম ওভারে এজাজ প্যাটেলের বলে স্কট কুগেলাইনের দারুণ ক্যাচে ফিরেন লিটন দাস। ফেরার ম্যাচে ব্যাট হাতে ব্যর্থ সৌম্য। বাজে শটে তিনি ফিরেন ৪ রান করে। বাংলাদেশের অনেক বিপদের ত্রাতা মুশফিকুর রহিম এবার বিপদ বাড়িয়ে আউট ৩ রান করে।

অনেকটা সময় ক্রিজে থাকলেও রানের গতিতে দম দিতে পারেননি মোহাম্মদ নাঈম শেখ। থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে না পারার ধারা ধরে রেখে জোর করে শট খেলার চেষ্টায় ক্যাচ দিয়ে ফিরেন বাঁহাতি এই ওপেনার।

‌১৩ রানে জীবন পাওয়া মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে আফিফের জুটিতে আশা জাগে বাংলাদেশের। সিরিজের আগের ম্যাচগুলোতে তেমন কিছু করতে না পারা আফিফ এই ম্যাচে ব্যাট হাতে ছিলেন দুর্দান্ত। কাভার ড্রাইভ, ফ্লিকসহ খেলেন চমৎকার কিছু শট।

১৪ ওভার শেষে দুই দল ছিল প্রায় সমতায়। নিউ জিল্যান্ডের রান ছিল ৪ উইকেটে ১০৭, বাংলাদেশের সমান উইকেটে ১০৬। ক্রিজে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ ও আফিফের মতো থিতু ও আক্রমণাত্মক দুই ব্যাটসম্যান।

কিন্তু বেশিদূর এগোতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। কুগেলাইনকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় থামেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

সিরিজে প্রথমবার সুযোগ পেয়ে ব্যর্থ শামীম। বোল্ড হয়ে ফেরেন ২ রানে। দেশের মাটিতে টি-টোয়েন্টিতে চার ইনিংস মিলিয়ে তার রান কেবল ১২

এরপর আর পেরে উঠেনি বাংলাদেশ। ৩৩ বলে তিন ছক্কা ও দুই চারে ৪৯ রানে অপরাজিত থাকেন আফিফ। তার ব্যাটের আলোয় চাপে পড়েনি বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের দুর্দশা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের যে দশা, তাতে উবে যেতে বসেছে টানা তিন সিরিজ জয়ের উচ্ছ্বাস।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ স্কোয়াডের একজন খেলোয়াড়ও না থাকা উপমহাদেশের বাইরের একটি দলের বিপক্ষে এই পারফরম্যান্সে প্রশ্ন জাগিয়ে রেখেই সিরিজ শেষ করল বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউ জিল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৬১/৫ (অ্যালেন ৪১, রবীন্দ্র ১৭, ল্যাথাম ১৮, ইয়াং ৬, ডি গ্র্যান্ডহোম ৯, নিকোলস ২১, ম্যাকনকি ০, ব্রেসওয়েল ৫, এজাজ ৩, টিকনার ৩*, ডাফি ৩; তাসকিন ৪-০-৩৪-১, নাসুম ২-০-৫-২, শরিফুল ৪-০-৪৮-২, মাহমুদউল্লাহ ৩-০-১৭-০, সৌম্য ২-০-১৪-০, আফিফ ৩-০-১৮-১, শামীম ১-০-৪-০)

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৩৪/৮ (নাঈম ২৩, লিটন ১০, সৌম্য ৪, মুশফিক ৩, আফিফ ৪৯*, মাহমুদউল্লাহ ২৩, সোহান ৪, শামীম ২, তাসকিন ৯, নাসুম ৩*; ডাফি ৪-০-২৫-১, এজাজ ৪-০-২১-১, কুগেলাইন ৩-০-২৩-২, ম্যাকনকি ৩-০-২৫-১, সিয়ার্স ৩-০-২১-১, রবীন্দ্র ৩-০-১৯-১)

ফল: নিউ জিল্যান্ড ২৭ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: টম ল্যাথাম

ম্যান অব দা সিরিজ: টম ল্যাথাম ও নাসুম আহমেদ