মেয়েদের ক্রিকেট নিয়ে তালেবানের অবস্থানে অনিশ্চয়তায় আফগানিস্তানের টেস্ট

অস্ট্রেলিয়ায় আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক প্রথম টেস্ট এখন অনিশ্চয়তায় ঝুলছে। ‘সবার জন্য খেলা’ নীতিতে বিশ্বাসী ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, তালেবান সরকার আফগানিস্তানে মেয়েদের ক্রিকেট সমর্থন না করলে আফগানদের ছেলেদের দলের সঙ্গেও নিজ দেশে টেস্ট খেলবে না তারা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Sept 2021, 04:58 AM
Updated : 9 Sept 2021, 04:58 AM

কয়েকদিনের গুঞ্জন ও টানাপোড়েনের পর বৃহস্পতিবার বিবৃতি দিয়ে এই সিদ্ধান্ত জানায় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া।

আগামী ২৭ নভেম্বর হোবার্টে শুরু হওয়ার কথা অস্ট্রেলিয়া-আফগানিস্তানের এই টেস্ট। মূলত এটি হওয়ার কথা ছিল গত বছর। তবে কোভিড পরিস্থিতিতে তা পিছিয়ে যায় এক বছর।

ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া জানায়, মেয়েদের ক্রিকেটের অগ্রগামিতার সঙ্গে কোনো ধরনের আপোস তারা করতে ও দেখতে চায় না।

“বৈশ্বিকভাবে মেয়েদের ক্রিকেটের এগিয়ে চলা ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কাছে যারপরনাই গুরুত্বপূর্ণ। ক্রিকেট নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, এই খেলার সবার জন্যই এবং মেয়েদের জন্য সব পর্যায়েই ক্রিকেট আমরা সর্বোতভাবে সমর্থন করি।”

“আফগানিস্তানের মেয়েদের ক্রিকেট চালু থাকবে না বলে সংবাদমাধ্যমের সাম্প্রতিক খবর যদি সত্যি প্রতিপাদিত হয়, তাহলে হোবার্টে প্রস্তাবিত আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচটির আয়োজন বাদ দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। গুরুত্বপূর্ণ এই ব্যাপারে পাশে থাকার জন্য অস্ট্রেলিয়া ও তাসমানিয়া সরকারকে আমরা ধন্যবাদ জানাই।”

আফগানিস্তানে তালেবানের আগের মেয়াদের ক্ষমতায় ক্রিকেট নিষিদ্ধ ছিল ছেলে-মেয়ে সবার জন্যই। এবার গত মাসে কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর ছেলেদের ক্রিকেট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় তারা। তবে মেয়েদের ক্রিকেট নিয়ে অটল থাকে আগের অবস্থানেই।

অস্ট্রেলিয়ার এসবিএস নিউজকে তালবান সরকারের সাংস্কৃতিক কমিশনের মুখপাত্র আহমাদউল্লাহ ওয়াসিক জানান, ধর্মীয় বাধ্যবাধকতার কারণে মেয়েদের ক্রিকেট সম্ভব নয়।

“ক্রিকেট বা এই ধরনের খেলা, যেখানে মেয়েদের উন্মুক্ত হওয়ার সুযোগ আছে, সে ধরনের খেলার অনুমতি নেই ইসলাম ও ইসলামিক আমিরাতে। ক্রিকেটে তারা এমন অবস্থার মুখোমুখি হতে পারে, যেখানে তাদের মুখ ও শরীর ঢাকা থাকবে না। ইসলামে মেয়েদের এভাবে দেখানোর সুযোগ নেই। এটা মিডিয়ার যুগ এবং তাদের ছবি ও ভিডিও থাকবে (ক্রিকেট খেললে), আর লোকে তা দেখবে।”

“আমরা ধর্মের জন্য লড়াই করেছি, যেন ইসলাম অনুসরণ করা হয়। যতই পাল্টা প্রতিক্রিয়া হোক, আমরা ইসলামিক মূল্যবোধকে ক্ষতিগ্রস্থ করব না। ইসলামের আইন ছাড়ব না আমরা।”

আহমাদউল্লাহ ওয়াসিকের এই মন্তব্যের পরই অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল ক্রীড়ামন্ত্রী সিনেটর রিচার্ড কলবেক জানান, তালেবানের অবস্থান না বদলালে আফগানদের ছেলেদের দলকে ভিসা দেওয়ার ব্যাপারটি নিয়ে তারা ভাববেন। আইসিসিকেও শক্ত অবস্থান নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি। সেই ধারাবাহিকতায় এলো ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার এই সিদ্ধান্ত।

আইসিসি পরে বিবৃতিতে জানায়, আফগানিস্তানের পরিস্থিতি তার সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। আগামী মাসের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা নেই। তবে ২০১৭ সালে ছেলেদেরকে দলকে টেস্ট মর্যাদা দেওয়ার সময় এই শর্তও দেওয়া হয়েছিল যে, সেখানে মেয়েদের দল গড়তে হবে এবং মেয়েদের ক্রিকেটের উন্নয়নে কাজ করতে হবে।

কোনো দেশের টেস্ট মর্যাদা কেড়ে নিতে হলে ১৭ সদস্যের আইসিসি বোর্ডের দুই-তৃতীয়াংশ ভোট প্রয়োজন।

আফগানিস্তানে মেয়েদের দল গড়া হলেও তারা কোনো আনুষ্ঠানিক ম্যাচ এখনও খেলেনি। আগামী মাসেই ওমানের বিপক্ষে মাঠে নামার কথা ছিল আফগান মেয়েদের। তার আগেই এলো এই পালাবদল।