‘নতুন মেন্ডিসকে’ দেখে নিজেকে মনে পড়ছে ‘আসল’ মেন্ডিসের

প্রথম বলেই উইকেট। দুর্দান্ত সেই শুরুটা স্বপ্নময় হয়ে উঠল পরের সময়টায়। আরও তিন উইকেট নিয়ে মাহিশ থিকশানা স্মরণীয় করে রাখলেন অভিষেক। শ্রীলঙ্কার ‘নতুন মেন্ডিস’ যখন রাঙাচ্ছেন তার প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ, ‘আসল’ মেন্ডিস তখন স্মৃতির ডানায় ভর করে ফিরে গেলেন ১৩ বছর আগে। স্মৃতিকাতর অজান্তা মেন্ডিস স্তুতিতে ভাসালেন থিকশানাকে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Sept 2021, 05:10 AM
Updated : 8 Sept 2021, 09:24 AM

লঙ্কান ক্রিকেটে থিকশানার নিজের নাম হারিয়ে যায় প্রায়ই। সাবেক রহস্য স্পিনার অজান্তা মেন্ডিসের সঙ্গে মিলিয়ে বেশ কিছু দিন থেকেই তাকে বলা হচ্ছে শ্রীলঙ্কার ‘নতুন মেন্ডিস।’ দুজনের বোলিং অ্যাকশনে মিল আছে খানিকটা। আরও বেশি মিল বোলিংয়ে।

প্রায় একইরকম ক্যারম বল দুজনের। গুগলি, অফ স্পিন ও আঙুলের টোকায় নানা কারিকুরি করে বিভ্রান্ত করেন ব্যাটসম্যানদের। অফ স্পিনার ক্যাটাগরিতে ফেললেও আসলে বোঝা কঠিন, কোন ধরনের স্পিনার। তাই পরিচয় তাদের ‘রহস্য স্পিনার।’

ওয়ানডে অভিষেকে মঙ্গলবার ৩৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিংয়ে ধস নামান থিকশানা। শ্রীলঙ্কার হয়ে অভিষেকে ৪ উইকেট শিকারি প্রথম স্পিনার তিনিই। উইকেটের স্বাদ পান তিনি ক্যারিয়ারের প্রথম বলেই।

২০০৮ সালে অজান্তা মেন্ডিস ওয়ানডে অভিষেকে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। তবে ক্রিকেটবিশ্বে তোলপাড় ফেলে দিয়েছিলেন তিনি মূলত নিজের দ্বিতীয় আসরে। ২০০৮ এশিয়া কাপে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ৫ উইকেট নেওয়ার পর পাকিস্তানের বিপক্ষে নেন ৪ উইকেট, বাংলাদেশের বিপক্ষে ২ উইকেট। ফাইনালে ১৩ রানে ৬ উইকেট নিয়ে গুঁড়িয়ে দেন তিনি ভারতের ব্যাটিং।

দুর্বোধ্য বোলিং দিয়ে এরপর তিনি ক্রিকেট বিশ্বে রাজত্ব করেন কিছুদিন। এশিয়া কাপের পরপর ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে আরও একবার ব্যাটসম্যানদের নাকানি-চুবানি খাইয়ে নেন ১৩ উইকেট। টেস্টে অভিষেক সিরিজেই ভারতের বিখ্যাত ব্যাটিং লাইন আপের বিপক্ষে ৩ টেস্টে নেন ২৬ উইকেট।

পরে টি-টোয়েন্টিতে নিজের প্রথম দুই ম্যাচেই নেন চারটি করে উইকেট। প্রথম ৫ ম্যাচে নেন ১৬ উইকেট!

মঙ্গলবার থিকশানাকে দেখে মেন্ডিসের মনে পড়ল নিজের ক্যারিয়ারের সেই সোনালি সময়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থিকশানার ছবি দিয়ে তিনি শুভ কামনা জানালেন উত্তরসূরিকে।

“অভিনন্দন… কঠিন পরিশ্রমের ফল মিলেছে। ২০ বছর বয়সী তরুণের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স এবং দারুণ প্রাপ্য অর্জন। অনেক বছর আগে নিজের অভিষেকের পারফরম্যান্স মনে পড়ছে আমার। ঘাম ঝরিয়ে যাও নীরবে, সাফল্যই তুলবে শোরগোল। মনোযোগ ধরে রাখো।”

শ্রীলঙ্কার স্কুল ক্রিকেট ও ঘরোয়া ক্রিকেটে আলোচনায় উঠে আসার পর থিকশানা আরও বড় পরিসরে নজর কাড়েন গত লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগ ও আবু ধাবিতে টি-টেন টুর্নামেন্ট দিয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চলতি সিরিজে মূলত টি-টোয়েন্টির জন্যই ভাবনায় ছিলেন তিনি। কিন্তু তাকে ওয়ানডে খেলিয়ে দেওয়ার প্রেক্ষাপট ম্যাচ শেষে জানালেন অধিনায়ক দাসুন শানাকা।

“সত্যি বলতে, আমি তাকে দলে এনেছিলাম টি-টোয়েন্টিগুলো খেলানোর জন্য। কিন্তু (শেষ ওয়ানডেতে) এমন টার্নিং উইকেট দেখে মনে হলো, থিকশানাকে হাত দেখে পড়ে ফেলা কঠিন হবে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য। অধিনায়ক হিসেবে ঝুঁকিটা আমি নেই। কোচ ও নির্বাচকরা সমর্থন করেন। এটিই আমাদের বড় কাজে দেয়।”

অজান্তা মেন্ডিস অমন চোখধাঁধানো শুরুর পর একটা সময় পথ হারান। মূলত চোটই বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আঙুল ও কাঁধের অস্ত্রোপচারের পর আগের সেই মেন্ডিসকে ফিরে পাওয়া যায় সামান্যই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাকে শেষবার দেখা গেছে ২০১৫ সালে। এখন তার বয়স ৩৬, কিন্তু সব ধরনের ক্রিকেট থেকে বিদায় নিয়ে ফেলেছেন আরও বছর দুয়েক আগেই।

২১ বছর বয়সী থিকশানার ক্যারিয়ার কোন পথে এগোবে, সেটা সময়ই বলবে। তবে শানাকার বিশ্বাস, এখন থিকশানার বোলিং সামলানো হয়ে উঠবে প্রতিপক্ষের জন্য কঠিন।

“তাকে পড়া সহজ নয়, কারণ অফ স্পিনের পাশাপাশি এখন তার গুগলি ও ক্যারম বলও আছে। এত বৈচিত্র্য থাকায় কোনো দলের জন্যই তাকে বুঝে ফেলা সহজ হবে না। এরকম স্কিল আছে বলেই তাকে আমরা খেলিয়েছি। তাকে বোঝা কঠিন, এটিই কেবল তার বিশেষত্ব নয়, তার স্কিলও আছে।”