বাংলাদেশের সিরিজ জয় কিংবা নিউ জিল্যান্ডের সমতা

উইকেট পেলেও মনে হয় এতটা খুশি হন না তাসকিন আহমেদ। খ্যাপাটে দৌড়ে ছুটতে থাকা পেসারকে আটকাতেই পারছিলেন না কেউ। অমন উচ্ছ্বাসের কারণ, তার দল গোল করেছে! মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার দুপুরে গা গরমের ফুটবল ম্যাচে দেখা গেল এমন গোল আর হাসি-মজার জোয়ার। কিন্তু অনুশীলনের এই প্রাণের উৎসব কতটা দেখা যাবে মূল লড়াইয়ে?

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Sept 2021, 02:14 PM
Updated : 7 Sept 2021, 02:14 PM

এক ম্যাচ আগেও সংশয়ের জায়গা খুব একটা ছিল না। কিন্তু তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে নিউ জিল্যান্ড এমনভাবে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের ব্যাটিং, সিরিজের আবহও তাতে বদলে গেছে পুরোপুরি। মিরপুরের এই মন্থর ও টার্নিং উইকেটে অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে দিতে পারলেও নিউ জিল্যান্ড ঠিকই দেখিয়েছে তাদের ধার, মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা ও শক্তির গভীরতা। খর্বশক্তির দল নিয়ে এসেও তারা শক্ত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে বাংলাদেশকে।

সেই চ্যালেঞ্জের নতুন অধ্যায় বুধবার। এই ম্যাচ জিতলে সিরিজ জয় নিশ্চিত হবে বাংলাদেশের। তবে নিউ জিল্যান্ড এই বার্তা দিতে পেরেছে, সিরিজে ২-২ সমতা ফেরানো তাদের পক্ষে খুবই সম্ভব। বাংলাদেশকে তাই কঠিন পরীক্ষাই দিতে হবে।

আগের ম্যাচে মুখ থুবড়ে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং। লক্ষ্য ছিল ১২৯, উইকেট মন্থর হলেও যা খুব কঠিন নয়। বিশেষ করে, ক্যারিয়ারজুড়ে যারা মিরপুরের এই মাঠেই খেলছে, সেই ব্যাটিং লাইন আপের জন্য তো এখানকার রসায়ন বুঝতে সমস্যা হওয়ার কথাই নয়। কিন্তু নিউ জিল্যান্ডের অনভিজ্ঞ স্পিনারদের সামনেই ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং।

শুরুর দিকে দ্রুত রান তুলতে গিয়েই সেদিন হয় মূল বিপত্তি। বাংলাদেশের ব্যাটিং পরামর্শক অ্যাশওয়েল প্রিন্সের মতে, দলের ব্যাটিং সামর্থ্যে কোনো সমস্যা নেই। তিনি গুরুত্ব দিলেন, উইকেটের ধরন বুঝে দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার দিকে।

“জিম্বাবুয়েতে আমরা খুব ভালো রান তাড়া দেখেছি এই দলের। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজেও একটি ম্যাচে আফিফ ও সোহান দারুণ জুটি গড়ে ম্যাচ জিতিয়েছে। দলে এমন ব্যাটসম্যান আছে, যারা প্রান্ত বদলাতে পারে এবং বাউন্ডারি মারতে পারে। এমন ব্যাটসম্যানও আছে, যারা প্রয়োজনে ইনিংসের শেষ দিকে ওভারপ্রতি ৯-১০ রান তুলতে পারে, যদি উইকেট সহায়ক হয়।”

“আমার মনে হয়, দুই ধরনের ব্যাটসম্যানদের ভালো সমন্বয় আছে আমাদের। তবে প্রতিটি উইকেটই ভিন্ন। তাই গুরুত্বপূর্ণ হলো, নির্দিষ্ট দিনে উইকেট পড়তে পারা এবং উইকেটের ধরন অনুযায়ী নিজের খেলা মানিয়ে নেওয়া।”

এই মানিয়ে নেওয়ার কাজটি দারুণভাবে করতে পেরেছে নিউ জিল্যান্ড। প্রথম ম্যাচে মাত্র ৬০ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর খুব দ্রুতই তারা বুঝে নেয়, এই উইকেটে কীভাবে ব্যাট করতে হবে। দ্বিতীয় ম্যাচেই তাদের ব্যাটিংয়ে দেখা যায় বড় পরিবর্তন। সেদিন শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করে তারা হেরে যায় একটুর জন্য।

সবশেষ ম্যাচে আবার তারা প্রমাণ রাখে এখানকার উইকেটে মানিয়ে নেওয়ার। হেনরি নিকোলস ও টম ব্লান্ডেলের জুটি উইকেট ও পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে দলকে গড়ে দেয় জয়ের ভিত।

নিউ জিল্যান্ডের এই সফরের কোচ গ্লেন পকন্যাল কোচ হিসেবে প্রথম জয়টি পেয়ে যেমন উচ্ছ্বসিত, তেমনি দারুণ গর্বিত দলের ক্রিকেটারদের নিয়েও। এখন তিনি আশায় চতুর্থ ম্যাচ জিতে সমতা ফেরানোর।

“এটা দারুণ অনুভূতি, কারণ ছেলেরা কঠোর পরিশ্রম করছে এবং দলে খুব ভালো আলোচনা হয়েছে, কীভাবে আমরা খেলতে চাই। যা আলোচনা হয়েছে, সবকিছু বাস্তবায়ন করতে পারা দারুণ তৃপ্তির। ছেলেদের নিয়ে আমি গর্বিত যে ওরা পেরেছে আগের ম্যাচে, কারণ এখানে খেলা খুব চ্যালেঞ্জিং। এই ছেলেরা দেখিয়েছে, সবকিছু একসঙ্গে মেলে ধরতে পারলে, যে কোনো কিছুই সম্ভব।”

“এখন একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে আমাদের সামনে। কালকে আমরা ২-২ করে ফেলতে পারি। এরপর শেষ ম্যাচে দেখা যাবে, কী হয়। ছেলেরা চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত।”

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে যথারীতি বিকেল চারটায় শুরু ম্যাচ।