আভিশকার সেঞ্চুরিতে শ্রীলঙ্কার জয়

দারুণ সেঞ্চুরিতে আলো ছড়ালেন আভিশকা ফার্নান্দো। দলকে এনে দিলেন লড়াইয়ের পুঁজি। জয়-পরাজয়ের হিসেবে অবশ্য দুই দলের স্লগ ওভারের পারফরম্যান্স রাখল বড় ভূমিকা। শ্রীলঙ্কা শেষ ১০ ওভারে তুলেছিল ৯০। দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ ১০ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৯১। এর আগেই তাদের থামিয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল শ্রীলঙ্কা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Sept 2021, 06:14 PM
Updated : 2 Sept 2021, 07:09 PM

কলম্বোতে বৃহস্পতিবার প্রথম ওয়ানডেতে ১৪ রানে জিতে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগে ১০ পয়েন্ট পেয়েছে শ্রীলঙ্কা।

আভিশকার তৃতীয় সেঞ্চুরিতে ৯ উইকেটে ৩০০ রান করে স্বাগতিকরা। ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতা লঙ্কান এই ওপেনার করেন ১১৮ রান। দলের বড় সংগ্রহ পাওয়ার পেছনে অবদান আছে চারিথ আসালঙ্কার ৭১ রানের ইনিংসটিরও।

ইতিহাস ছিল স্বাগতিকদের পক্ষে। দ্বীপদেশটিতে দিন-রাতের ম্যাচে কেউ কখনও তিনশ ছাড়ানো লক্ষ্য তাড়া করে জেতেনি। তবে আশা জাগিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা ৪০ ওভারে রান ছিল ৩ উইকেটে ২১০।  হাতে অনেক উইকেট থাকলেও প্রত্যাশিত ঝড় তুলতে পারেনি সফরকারীরা, তাই এইডেন মারক্রামের ৯৬ রানের চমৎকার ইনিংসের পরও ৬ উইকেটে থমকে যায় ২৮৬ রানে।

আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা শ্রীলঙ্কার শুরুটা হয় ভালোই। দুই ওপেনার আভিশকা ও মিনোদ ভানুকার ব্যাটে দলের রান পঞ্চাশ পেরিয়ে যায়।

উইকেটের খোঁজে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা বোলিংয়ে আনে অনিয়মিত অফ স্পিনার মারক্রামকে। তাতেই ধরা দেয় সাফল্য। নিজের দ্বিতীয় ওভারেই বোল্ড করে দেন তিনি ২৭ রান করা মিনোদকে। ভাঙে ৫৭ রানের উদ্বোধনী জুটি।

পরের ওভারেই ভানুকা রাজাপাকসেকে বিদায় করেন কেশভ মহারাজ। দ্রুত দুই উইকেট হারানো শ্রীলঙ্কা প্রতিরোধ গড়ে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ও আভিশকার ব্যাটে। তাদের জুটিতে বাড়তে থাকে লঙ্কানদের রান।

এই জুটিতে ৭৫ বলে ফিফটি তুলে নেন আভিশকা। কিন্তু দুইবার জীবন পেয়েও পঞ্চাশ ছুঁতে পারেননি ধনাঞ্জয়া। বাঁহাতি স্পিনার মহারাজের বলে স্টাম্পড হয়ে যান ৪৪ রানে। ভাঙে ৭৯ রানের জুটি।

এরপরই শ্রীলঙ্কা পায় তাদের ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটি। চারিথ আসালঙ্কার সঙ্গে সেই জুটিতে অগ্রণী ছিলেন আভিশকা। ফিফটির পর দ্রুত রান তোলায় মনোযোগ দিয়ে তিনি ১০৬ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন।

তাবরাইজ শামসি ভাঙেন ৭১ বলে ৯৭ রানের এই জুটি। এই বাঁহাতি রিস্ট স্পিনারের বলে পয়েন্টে সহজ ক্যাচ তুলে দিয়ে বিদায় নেন ১১৮ রান করা আভিশকা। ১১৫ বলের তার ইনিংসটিতে ২ ছক্কার পাশে চার ১০টি।

বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান করে আসালঙ্কা ওয়ানডেতে দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নেন ৫১ বলে। তার ব্যাটেই মূলত তিনশ রানে পৌঁছাতে পারে শ্রীলঙ্কা। ৬ চার ও এক ছক্কায় এই ব্যাটসম্যানের ৬২ বলে ৭২ রানের ইনিংস শেষ ওভারে থামান কাগিসো রাবাদা।

জবাব দিতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকা পাওয়ার প্লেতে হারায় ইয়ানেমান মালানের উইকেট। ৩ চারে ২৩ রান করা এই ওপেনার ভানিন্দু হাসারাঙ্গার বলে এলবিডব্লিউ হলে ভাঙে তাদের ৪৯ রানের উদ্বোধনী জুটি।

তবে নিজের মতো ব্যাটিং করে যান মারক্রাম। দাসুন শানাকাকে ছক্কায় উড়িয়ে এই ওপেনার ফিফটি স্পর্শ করেন ৪৯ বলে। আরেক প্রান্তে তাকে সঙ্গ দিয়ে যান টেম্বা বাভুমা।

দারুণ ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন মারক্রাম। দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক বাভুমা খেলতে থাকেন দেখেশুনে। তাদের জুটির রান একশ স্পর্শ করে ১০৩ বলে।

এরপরই বাঁধে বিপত্তি। শ্রীলঙ্কার ফিল্ডারের থ্রো করা বল এসে লাগে বাভুমার বৃদ্ধাঙ্গুলে। পরে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক।

সেঞ্চুরি নাগালেই ছিল মারক্রামের। কিন্তু ৯৬ রানে তিনি প্রাভিন জয়াবিক্রমার বলে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন আক্ষেপ নিয়ে। এই ওপেনারের ৯০ বলের ইনিংসটি গড়া ৪ ছক্কা ও ৫ চারে।

এরপর লড়াই চালিয়ে যান ফন ডার ডাসেন ও হাইনরিখ ক্লাসেন। কিন্তু শেষে যে ঝড় প্রয়োজন ছিল সেটা তুলতে পারেননি দুই জনের কেউই। ৫০ বলে ফিফটি করা ফন ডার ডাসেন ৬ চারে ৫৯ করে বোল্ড হন ডি সিলভার বলে।

এই ইনিংসের পথে একটি মাইলফলক স্পর্শ করেন এই ব্যাটসম্যান। কুইন্টন ডি ককের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ওয়ানডেতে দ্রুততম হাজার রান করা ব্যাটসম্যান এখন তিনি। দুইজনই ২১ ইনিংসে করেন এক হাজার রান।

রান আউটে কাটা পড়েন ৩৬ রান করা কিপার-ব্যাটসম্যান ক্লাসেন। এরপর আর লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেননি দক্ষিণ আফ্রিকা।

দুই দলের দ্বিতীয় ওয়ানডে আগামী শনিবার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ৩০০/৯ (আভিশকা ১১৮, মিনোদ ২৭, রাজাপাকসে ০, ধনাঞ্জয়া ৪৪, আসালঙ্কা ৭২, শানাকা ৬, হাসারাঙ্গা ৩, চামিকা ৭*, চামিরা ০, আকিলা ০; রাবাদা ৯-০-৬৬-২, নরকিয়া ১০-০-৬৯-০, মহারাজ ১০-১-৩০-২, মারক্রাম ৬-০-৩৩-১, ফেলুকওয়ায়ো ৫-০-৩৭-০, শামসি ১০-০-৫৫-১)।

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৫০ ওভারে ২৮৬/৬ (মালান ২৩, মারক্রাম ৯৬, বাভুমা ৩৮ আহত অবসর, ফন ডার ডাসেন ৫৯, ভেরেইনা ১২, ক্লাসেন ৩৬, ফেলুকওয়ায়ো ৫, রাবাদা ১৩*, মহারাজ ০*; চামিরা ৭-০-৫৫-০, চামিকা ৩-০-১৮-১, হাসারাঙ্গা ১০-১-৫২-১, জয়াবিক্রমা ১০-০-৪৭-১, আকিলা ১০-০-৬৫-২, শানাকা ২-০-১৪-০, ধনাঞ্জয়া ৮-০-৩৫-০)।

ফল: শ্রীলঙ্কা ১৪ রানে জয়ী।

সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে শ্রীলঙ্কা।

ম্যান অব দা ম্যাচ: আভিশকা ফার্নান্দো।