নিউ জিল্যান্ডের বিশ্বকাপ দলের একজনও এই লড়াইয়ে নেই। তাদের জন্য এটি প্রতিশ্রুতি রক্ষার সফর। বাংলাদেশ বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করেনি এখনও। তবে এই সিরিজে আছেন দু-একজন ছাড়া বিশ্বকাপ দলের প্রায় সবাই। সিরিজে দলের চাওয়া, লক্ষ্য সবকিছুতেই মিশে বিশ্বকাপ। দেড় মাস পরের বিশ্বকাপের জন্য স্কিলের ঝালাই আর জয়ের আত্মবিশ্বাস, সবই চায় বাংলাদেশ।
পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের এই দ্বৈরথ শুরু বুধবার। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ম্যাচ শুরু বিকেল চারটায়।
এমনিতে অবশ্য আত্মবিশ্বাসের কমতি নেই বাংলাদেশ দলের। সবশেষ সিরিজে অস্ট্রেলিয়াকে ৪-১ ব্যবধানে হারানোর স্মৃতি তো এখনও তরতাজা। ওই সিরিজের আগে টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কোনো জয় ছিল না বাংলাদেশের। এবারও তারা দাঁড়িয়ে একই মোড়ে। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষেও এই সংস্করণে কোনো জয় নেই ১০টি ম্যাচ খেলেও।
এবার নিজেদের মাঠে পাওয়া গেছে খর্বশক্তির নিউ জিল্যান্ডকে। এর চেয়ে ভালো সুযোগ হয় না, জানেন মাহমুদউল্লাহও। যদিও টি-টোয়েন্টির অনিশ্চয়তা ভাবনায় রেখে বাংলাদেশ অধিনায়ক বেশ সতর্কও।
“টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট এমন, আপনি নিজেকে ফেভারিট ভাবতেও পারেন, আবার যদি অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে যান, তাহলে নেতিবাচক হয়ে যেতে পারে। নির্দিষ্ট দিনে কন্ডিশন ও উইকেট পর্যালোচনা করে ভালো খেলার যে তাড়না, সেটা থাকা দরকার। সেই জিনিসগুলো নিশ্চিত করতে পারলে ও ইতিবাচক ভাবে চিন্তা করতে পারলে, আমাদের ভালো সুযোগ থাকবে।”
সিরিজপূর্ব আলোচনায় অবশ্য মাঠের ক্রিকেট অনেকটাই ছাপিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের উইকেটকিপিং নিয়ে আলোচনা। নুরুল হাসান সোহান ও মুশফিকুর রহিম দুটি করে ম্যাচে কিপিং করবেন, কোচ রাসেল ডমিঙ্গো এটি জানানোর পর থেকেই আলোচনার ঝড় উঠেছিল। দলের ভেতর অস্থিরতা তৈরির শঙ্কাও অমূলক ছিল না। তবে সিরিজ শুরুর আগের দিন মাহমুদউল্লাহ চওড়া হাসিতে জানিয়ে দিলেন, “কোনো অসুবিধা নেই, অল গুড।”
মাঠের বাইরের আলোচনার চেয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক বারবার দৃষ্টি ফেরালেন মাঠের ক্রিকেটেই। বাড়তি সতর্ক তিনি দলটি নিউ জিল্যান্ড বলেও। সেরা ক্রিকেটারদের তারা এই সিরিজে পাঠায়নি বটে। তবে প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি রাখেনি। প্রতিপক্ষ নিয়ে বিশ্লেষণ করাসহ পেশাদারিত্বেও কমতি নেই। মাহমুদউল্লাহ বললেন, তারাও এসব ভালোভাবেই জানেন।
“ওরা যে দলই নিয়ে এসেছে, ওরা ভালো দল। ওরা সবসময়ই ডিসিপ্লিনড দল, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে। যে পরিকল্পনা করে, সবসময়ই সেটায় অটল থাকার চেষ্টা করে। ওদের সঙ্গে ভালো করতে হলে আমাদেরও গোছানো ক্রিকেট খেলতে হবে।”
“প্রথম বল থেকেই ভালো ক্রিকেট খেলার যে মানসিকতা অস্ট্রেলিয়া সিরিজে ছিল, যে ক্ষুধার্ত মনোভাব ছিল, সেই জিনিসগুলো খেয়াল রেখে ম্যাচগুলো খেলা উচিত। আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলা গুরুত্বপূর্ণ, তাহলে আমাদের ভালো ফল পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।”
মূল ক্রিকেটাররা কেউ না থাকলেও এই দলটিও গড়েছেন তারা অনেক ভেবেই। টম ল্যাথাম, হেনরি নিকোলসরা টি-টোয়েন্টি নিয়মিত খেলেন না। তবে স্পিন খুব ভালো খেলেন বলেই এই সফরে নেওয়া হয়েছে। সঙ্গে টম ব্লান্ডেল, তরুণ উইল ইয়াংদের নিয়ে গড়া বাটিং লাইন আপ হেলাফেলা করার মতো নয়। দুই স্পিনিং অলরাউন্ডার রাচিন রবীন্দ্র ও কোল ম্যাকনকি এখানে কার্যকর হতে পারেন ব্যাটে-বলে।
যদিও এই দলের কেউ বিশ্বকাপে খেলবেন না, তার পরও অনুপ্রেরণার কোনো ঘাটতি দলে দেখছেন না টম ল্যাথাম।
“দেশের হয়ে খেলতে নামলে নিজেদের অনুপ্রাণিত করা খুবই সহজ। ব্যক্তিগতভাবে আমার নিজের খুব একটা সুযোগ হয় না টি-টোয়েন্টি খেলার, এই সুযোগ তাই রোমাঞ্চকর। দলের অন্যদেরও মানসিকতা একই। মাঠে নেমে আমাদের উপভোগ করতে হবে, এই কন্ডিশনে যে ঘরানায় সফল হতে পারি বলে আমরা মনে করি, সেটায় অটুট থাকতে হবে। অবশ্যই আমাদের লক্ষ্য সিরিজ জয়।”
ল্যাথামের সিরিজ জয়ের আশা পূরণে মূল বাধা হতে পারে উইকেট। বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সিরিজে উইকেট ছিল ব্যাটিংয়ের জন্য ভয়াবহ। অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানরা চোখে প্রায় আঁধার দেখেছে মিরপুরের ২২ গজে। এবার অবশ্য উইকেট অতটা ব্যাটিং-প্রতিকূল হবে না বলেই মনে করেন বাংলাদেশ কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। মিরপুরের স্বাভাবিক উইকেটই এবার থাকবে বলে আশা তার।
সেই স্বাভাবিক উইকেটও কিউইদের জন্য অস্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে, যদি মুস্তাফিজুর রহমান, সাকিব আল হাসানরা থাকেন ছন্দে। বাংলাদেশ তাই পরিষ্কার ফেভারিট হিসেবেই শুরু করছে সিরিজ। প্রত্যাশার প্রতিফলন মাঠে কতটা পড়ে, সেটিই কেবল দেখার অপেক্ষা।