নিউ জিল্যান্ডের মূল ক্রিকেটাররা থাকলে এই সফরে নিশ্চিতভাবেই থাকতেন না রবীন্দ্র। তারা নেই বলেই তিনি আছেন এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল। যে স্বপ্নের পিছু ছুটে এগিয়ে চলেছেন ক্রিকেটের পথ ধরে।
নামেই অনেকটা পরিষ্কার, রবীন্দ্রর শেকড় উপমহাদেশে। তার বাবা-মা, দুজনই ভারতীয়। বাবা রবি কৃষ্ণমূর্তিও ছিলেন ক্রিকেটার। বেঙ্গালুরুতে ক্লাব ক্রিকেট খেলেছেন জাভাগাল শ্রীনাথের মতো তারকার সঙ্গে। বেঙ্গালুরুর অনেক ক্রিকেট তারকাই রবির বন্ধু। তবে ক্রিকেটে তিনি বেশিদূর এগোতে পারেননি। বরং মন দেন সফটওয়ার সিস্টেম আর্কিটেক্ট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ায়।
সেই ক্যারিয়ারই রবিকে নিয়ে যায় ইংল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও অস্ট্রেলিয়ায়। নানা দেশ ঘুরে শেষে তিনি থিতু হন নিউ জিল্যান্ডে। ১৯৯৯ সালে রবীন্দ্রর জন্ম সেখানেই, ওয়েলিংটনে।
ওয়েলিংটনের ক্রিকেট কাঠামোয় বেড়ে ওঠা রবীন্দ্র নিউ জিল্যান্ডের হয়ে ২০১৬ যুব বিশ্বকাপ খেলতে আসেন বাংলাদেশে। মূলত বাঁহাতি ব্যাটসম্যান, যিনি বাঁহাতি স্পিনও বেশ ভালো করেন। তবে ওই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের উইকেটে একটুও সুবিধা করতে পারেননি ব্যাটিংয়ে। বল হাতে অবশ্য ৭টি উইকেট নিয়েছিলেন।
দারুণভাবে নজর কাড়েন তিনি ২০১৮ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে। ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে তিনি ২৩৩ রান করার পাশাপাশি উইকেট নেন ১৩টি।
ওই বছর ওয়েলিংটনের চুক্তিও পেয়ে যান। পারফর্ম করেন ঘরোয়া ক্রিকেটে। সুযোগ মেলে নিউ জিল্যান্ড ‘এ’ দলে। গত মৌসুমে কিউইদের ‘এ’ দলের হয়েও তার পারফরম্যান্স ছিল দুর্দান্ত। সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ জাতীয় দল ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলের বিপক্ষে উপহার দেন দুটি সেঞ্চুরি। ভালো করেন পাকিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষেও। এরপর একটু ছন্দপতন কাঁধের চোটে। সেই চোট কাটিয়ে দুই মাস পর মাঠে নেমেই ঘরোয়া প্লাঙ্কেট শিল্ডের ম্যাচে করেন সেঞ্চুরি, পরের ম্যাচে উইকেট নেন ছয়টি।
এগিয়ে চলার ধারাবাহিকতায় গত জুনের ইংল্যান্ড সফরের টেস্ট দল ও আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের নিউ জিল্যান্ড দলে জায়গা পেয়ে যান তিনি। ম্যাচ খেলার যদিও সুযোগ হয়নি।
এই সফরের আগ পর্যন্ত মূলত বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটেই তাকে বেশি সম্ভাবনাময় মনে করা হয়েছে। ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি খেলেছেন মোটে ২২টি। পারফরম্যান্স যদিও খুব খারাপ নয়, তবে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার মতো ছিল না। মূল ক্রিকেটারদের না থাকা ও বাংলাদেশের উইকেট কন্ডিশন-মিলিয়েই টি-টোয়েন্টির এই সফরে রবীন্দ্রর সুযোগটা মিলেছে।
মূলত ওপেনার হলেও তিনি ব্যাট করতে পারেন মিডল অর্ডারের যে কোনো পজিশনে। সঙ্গে বোলিং ও আর ফিল্ডিং মিলিয়ে মিরপুরের উইকেটে তার একাদশে জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্টই।
রবীন্দ্র নিজেও তা জানেন। নিউ জিল্যান্ড ক্রিকেটের ভিডিও বার্তায় ২১ বছর বয়সী অলরাউন্ডার বললেন, দারুণ রোমাঞ্চ নিয়ে অপেক্ষায় তিনি।
“নিউ জিল্যান্ডের হয়ে খেলতে পারা সবসময়ই দারুণ। অভিষেক হলে তা হবে অবিশ্বাস্যরকমের স্পেশাল। তবে আশা করি আমরা দল হিসেবে জিতব এবং শিখব। প্রতিটি দিন ধরে তাই এগোতে হবে। যদি খেলি, তাহলে চাওয়া থাকবে দলে অবদান রাখার এবং দলকে জেতানোর।”
২০১৬ যুব বিশ্বকাপে মিরপুরে কেবল একটি ম্যাচই খেলতে পেরেছিলেন তারা, ভারতের বিপক্ষে। এবার পুরো সিরিজই মিরপুরে। পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথমটি বুধবার।