ভারতের ব্যাটিং ব্যর্থতার দিনে ইংলিশ ওপেনারদের দৃঢ়তা

সুইং বোলিংয়ের প্রদর্শনীতে নিজেকে মেলে ধরলেন জেমস অ্যান্ডারসন। জাদুকরী এক স্পেলে কাঁপিয়ে দিলেন ভারতকে। অভিজ্ঞ পেসারের সুর সঙ্গত করলেন অন্যরা। তাতে দুই সেশনের মধ্যে গুটিয়ে গেল বিরাট কোহলির দল। প্রথম দিন তারা বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি ইংল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটিকেই। দুই ওপেনার ররি বার্নস ও হাসিব হামিদের ফিফটিতে প্রথম দিনেই এগিয়ে গেছে জো রুটের দল। 

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 August 2021, 02:15 PM
Updated : 25 August 2021, 06:16 PM

হেডিংলি টেস্টের প্রথম দিন ভারতকে ৭৮ রানে গুটিয়ে দিয়ে ব্যাটিং করছে ইংল্যান্ড। কোনো উইকেট না হারিয়ে দিন শেষ করেছে তারা ১২০ রান নিয়ে। যে উইকেটে খাবি খেলেন সফরকারী ব্যাটসম্যানরা, সেখানে দারুণ ব্যাটিংয়ে স্বাগতিকদের দুই ওপেনারই পঞ্চাশ ছুঁয়ে অপরাজিত।

৬০ রানে খেলছেন হামিদ। আর বার্নসের রান ৫২। এরই মধ্যে ৪২ রানের লিড পেয়ে গেছে ইংল্যান্ড।

ভারতকে এত অল্পতে থামিয়ে দেওয়ার মূল কারিগর ৩৯ বছর বয়সী অ্যান্ডারসন। প্রথম স্পেলে ৮ ওভার বোলিং করে ৬ রান দিয়ে তার শিকার লোকেশ রাহুল, চেতেশ্বর পুজারা ও কোহলি। এরপর আর বলই হাতে নিতে হয়নি অভিজ্ঞ এই পেসারকে। ক্রেইগ ওভারটন তিনটি এবং রবিনসন ও স্যাম কারান দুটি করে উইকেট নিয়ে শেষ করে দেন সফরকারীদের প্রথম ইনিংস।

লিডসের হালকা ঘাসের ছোঁয়া থাকা উইকেটে ইংল্যান্ডের দাপুটে বোলিংয়ের বিপক্ষে দুই সেশনও টিকতে পারেনি কোহলির দল। তাদের হয়ে কেবল দুইজন যেতে পেরেছেন দুই অঙ্কে। তবে ২০ রান পার করতে পারেননি একজনও।

টস হেরে বোলিং পেয়ে অখুশি ছিলেন না জো রুট। ব্যাটিং নেওয়া কোহলি বুঝেছিলেন এই উইকেটে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলতে স্কোর বোর্ডে রান লাগবে। কিন্তু ব্যাটিং বিপর্যয়ে প্রত্যাশার ধারেকাছেও যেতে পারেনি সফরকারীরা।

ভারতকে শুরুতেই চেপে ধরেন অ্যান্ডারসন। প্রথম ওভারেই তার শিকার আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান লোকেশ রাহুল। ফুল লেংথ বল ড্রাইভ করে জস বাটলারের গ্লাভসে শূন্য রানে ধরা পড়েন ভারত ওপেনার।

কয়েক ওভার পর আবারও দৃশ্যপটে অ্যান্ডারসন। অভিজ্ঞ চেতেশ্বর পুজারাকে ফিরিয়ে দেন তিনি এক রানেই। তার সুইং করে বেরিয়ে যাওয়া বল পুজারার ব্যাটের কানা নিয়ে জমা পড়ে সেই বাটলারের গ্লাভসেই।

৪ রানে ২ উইকেট হারানো দলকে পথে ফেরাতে পারেননি কোহলিও। অ্যান্ডারসনের ফুল লেংথ বল সজোরে ড্রাইড করে কট বিহাইন্ড ভারত অধিনায়কও। আরও একবার এই পেসারের শিকার হলেন কোহলি। টেস্টে যৌথভাবে সবচেয়ে বেশি ৭বার সময়ের সেরা এই ব্যাটসম্যানকে ফেরালেন অ্যান্ডারসন। সেই সঙ্গে কোহলির সেঞ্চুরিবিহীন টানা ইনিংসের সংখ্যা স্পর্শ করল ৫০। 

প্রথম ঘণ্টায় তিন উইকেট হারানো ভারতকে বিপদে ফেলে লাঞ্চের আগে ফিরেন অজিঙ্কা রাহানে। রবিনসনের বলে তিনিও হন কট বিহাইন্ড। এই চার ব্যাটসম্যানের মধ্যে ভারত সহ-অধিনায়কই যেতে পারেন দুই অঙ্কে (১৮)।

বিরতির পর রবিনসনকে উইকেট দিয়ে আসেন রিশাভ পান্ত। শুরু থেকে অস্বস্তিতে থাকা এই কিপার-ব্যাটসম্যান রবিনসনের বাউন্সার মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে।

সতীর্থদের আসা যাওয়ার মাঝে এক প্রান্ত আগলে রাখেন ওপেনার রোহিত শর্মা। ধৈর্যের সঙ্গে খেলতে থাকেন তিনি। সাবধানী ব্যাটিংয়ে খেলে ফেলেন একশ বল।

ওভারটনের শর্ট বল যেন মনোযোগ নষ্ট করে দেয় তার। অফ স্টাম্পের বাইরের বল পুল করে ধরা পড়েন মিড-অনে। শেষ হয় তার ১০৫ বলে ১৯ রানের লড়াই, যেখানে বাউন্ডারি কেবল একটি।

৬৭ রানে দাঁড়িয়েই ৪ উইকেট হারায় ভারত। শেষ পর্যন্ত তারা গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে নিজেদের তৃতীয় সর্বনিম্ন রানে।

৯ বছরের মধ্যে ইংল্যান্ডের ২২তম উদ্বোধনী জুটি দেখাল এই উইকেটে কীভাবে ব্যাটিং করা উচিত। ৪২ ওভার অবিচ্ছিন্ন হননি বার্নস ও হামিদ।

গত ম্যাচে তিনে ব্যাটিং করা হামিদ ২০১৬ সালের পর ওপেনিংয়ে সুযোগ পেয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় পঞ্চাশ স্পর্শ করেন ১১০ বলে। আর বার্নসের দশম টেস্ট ফিফটি আসে ১২৩ বলে।  

দারুণ ব্যাটিংয়ে ১১ চারে ৬০ রান নিয়ে দিন শেষ করেছেন হামিদ। আর ৫ চার ও এক ছক্কায় ৫২ রান নিয়ে খেলছেন বার্নস।

দ্বিতীয় টেস্ট হেরে সিরিজে পিছিয়ে থেকে এই ম্যাচ খেলতে নেমেছে ইংল্যান্ড। পেসারদের পর ওপেনাররা ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ের শুরুর দিনটা স্বাগতিকদের জন্য করে দিলেন স্বস্তির। অপেক্ষা বাকি দিনগুলোর।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত: ৪০.৪ ওভারে ৭৮ (রোহিত ১৯, রাহুল ০, পুজারা ১, কোহলি ৭, রাহানে ১৮, পান্ত ২, জাদেজা ৪, শামি ০, ইশান্ত ৮*, বুমরাহ ০, সিরাজ ৩; অ্যান্ডারসন ৮-৫-৬-৩, রবিনসন ১০-৩-১৬-২, কারান ১০-২-২৭-২, মইন ২-০-৪-০, ওভারটন ১০.৪-৫-১৪-৩)।

ইংল্যান্ড: ৪২ ওভারে ১২০/০ (বার্নস ৫২*, হামিদ ৬০*; ইশান্ত ৭-০-২৬-০, বুমরাহ ১২-৫-১৯-০, শামি ১১-২-৩৯-০, সিরাজ ৭-১-২৬-০, জাদেজা ৫-৩-৬-০)।