আফ্রিদির আগুনে বোলিংয়ে পুড়ল উইন্ডিজ

বৃষ্টি, ভেজা আউটফিল্ড, আলোকস্বল্পতা, কত যে বাধা! ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের মতো ক্যারিবিয়ান আবহাওয়াও হয়ে উঠেছিল প্রতিপক্ষ। কিন্তু অদম্য মানসিকতা আর জয়ের প্রচণ্ড তাড়নায় শেষ পর্যন্ত সব জয় করল পাকিস্তান। শাহিন শাহ আফ্রিদির বোলিং তোপে দারুণ জয়ে তারা সমতায় শেষ করল সিরিজ।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 August 2021, 04:43 AM
Updated : 25 August 2021, 04:43 AM

জ্যামাইকায় দ্বিতীয় টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১০৯ রানে হারাল পাকিস্তান। দুই ম্যাচের সিরিজ শেষ হলো ১-১ সমতায়।

শেষ ইনিংসে ৩২৯ রানের লক্ষ্যে ছুটে ক্যারিবিয়ানরা শেষ দিনে গুটিয়ে যায় ২১৯ রানে।

গোটা সিরিজে পাকিস্তানের নায়ক শাহিন শাহ আফ্রিদি শেষ দিনেও ছিলেন বিধ্বংসী। ইনিংসে তার উইকেট ৪টি। ম্যাচে শিকার ১০টি, যে স্বাদ পেলেন তিনি প্রথমবার।

বৃষ্টিতে ম্যাচের দ্বিতীয় দিন খেলা ভেস্তে যায় পুরোপুরি। অন্যান্য দিনেও প্রকৃতি বিঘ্ন ঘটায় বারবার। শেষ দিনেও খেলা বন্ধ থাকে কিছুক্ষণ। তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজের।

ম্যাচের শেষ দিনে মঙ্গলবার পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ৯ উইকেট, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ২৮০ রান। দিনের শুরুর দিকেই নাইটওয়াচম্যান আলজারি জোসেফকে বাউন্সারে ফিরিয়ে আফ্রিদি শুরু করেন তার শিকার।

ক্যারিবিয়ান মিডল অর্ডারে এরপর ছোবল দেন হাসান আলি। লম্বা সময় উইকেট আঁকড়ে রাখার সামর্থ্য আছে যে দুজনের, সেই এনক্রুমা বনার ও রোস্টন চেইসকে দ্রুতই থামান এই পেসার। ২ রান করে বনার আউট হন ভুল লাইনে খেলে। ১৫ বল খেলে চেইস করতে পারেননি রান, স্লিপে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন ইমরান বাট।

এক প্রান্ত আগলে রাখা ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটকে ফেরানর সুযোগও পেয়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু ফাহিম আশরাফের বলে স্লিপে ২৫ রানে ক্যারিবিয়ান অধিনায়কের সহজ ক্যাচ ছাড়েন আবিদ আলি।

লাঞ্চের আগে অবশ্য আরেকটি উইকেট পেয়ে যায় পাকিস্তান। বাঁহাতি স্পিনার নুমান আলির টার্ন ও বাউন্সে বিদায় নেন থিতু হয়ে যাওয়া জার্মেইন ব্ল্যাকউড (২৫)।

লাঞ্চের পর দ্বিতীয় ওভারেই নুমান এনে দেন আরেকটি বড় উইকেট। ২৫০ মিনিট উইকেটে কাটিয়ে মুহূর্তের জন্য মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন ব্র্যাথওয়েট। আলগা শটে পয়েন্টে ক্যাচ দেন তিনি ১৪৭ বলে ৩৯ রান করে।

দুই ম্যাচের সিরিজ শেষ হলো সমতায়। ছবি: উইন্ডিজ ক্রিকেট।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচ বাঁচানোর আশার অনেকটাই সমাপ্তি সেখানেই। কাইল মেয়ার্স, জেসন হোল্ডার, জশুয়া দা সিলভারা পরে লড়াইয়ের চেষ্টা করেন। তবে যথেষ্ট হয়নি তা।

সিরিজের আগের তিন ইনিংসে শূন্য করার পর এবার রানের দেখা পান মেয়ার্স। ইনিংস যদিও বড় করতে পারেননি (৩২)। হোল্ডারের সঙ্গে তার ৪৬ রানের জুটি থামান আফ্রিদি।

মেয়ার্স আউট হওয়ার পরই বৃষ্টিতে থামে খেলা। চা-বিরতি হয় আগেই। বিরতির পর হোল্ডার ও জশুয়া প্রতিরোধ গড়েন কিছুক্ষণ। ছক্কায় ইনিংস শুরু করা হোল্ডার পাল্টা আক্রমণে দ্রুত কিছু রানও বাড়ান। তাকে ফ্লাইটে বিভ্রান্ত করে ৪৭ রানে আউট করেন নুমান।

এরপর দ্বিতীয় নতুন বলে শেষ দুই উইকেট তুলে নেন আফ্রিদি। ৫২ বলে ১৫ রান করা জশুয়াকে ফিরিয়ে পূর্ণ করেন তিনি ম্যাচে ১০ উইকেট।

৯৪ রানে ১০ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা ২১ বছর বয়সী এই পেসার। ২ ম্যাচেই ১৮ উইকেট নিয়ে ম্যান অব দা সিরিজও তিনিই।

ম্যাচের প্রথম দিন সকালে ২ রানে ৩ উইকেট হারানো পাকিস্তানই শেষ পর্যন্ত জিতে নিল ম্যাচ। পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিরিজ জিততে না পারার ২০ বছরের খরা দীর্ঘায়িত হলো আরও।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৩০২/৯(ডি.)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ১৫০

পাকিস্তান ২য় ইনিংস: ১৭৬/৬(ডি.)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩২৯, আগের দিন ৪৯/১) ৮৩.২ ওভারে ২১৯ (ব্র্যাথওয়েট ৩৯, পাওয়েল ২৩, জোসেফ ১৭, বনার ২, চেইস ০, ব্ল্যাকউড ২৫, মেয়ার্স ৩২, হোল্ডার ৪৭, জশুয়া ১৫, রোচ ৭, সিলস ০*; আব্বাস ১৪-৩-৪২-০, আফ্রিদি ১৭.২-৫-৪৩-৪, হাসান ১৪-৬-৩৭-২, ফাহিম ১৩-৫-৩৬-০, নুমান ২২-৭-৫২-৩, ফাওয়াদ ৩-১-৩-০)।

ফল: পাকিস্তান ১০৯ রানে জয়ী।

সিরিজ: ২ ম্যাচ সিরিজ ১-১ ড্র।

ম্যান অব দা ম্যাচ: শাহিন শাহ আফ্রিদি।

ম্যান অব দা সিরিজ: শাহিন শাহ আফ্রিদি।