বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার আলোচিত টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু হচ্ছে মঙ্গলবার। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথমটি শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টায়।
বাংলাদেশের মতো অস্ট্রেলিয়ারও চাওয়া একইরকম, বিশ্বকাপ প্রস্তুতি ও সিরিজ জয়। তবে এই দুই চাওয়ায় দুই দলের মনোযোগের পাল্লা ভারি দুই দিকে। অস্ট্রেলিয়ার সিরিজ জয়ের তাড়না থাকলেও বিশ্বকাপ প্রস্তুতি ও ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে মেলে ধরার ব্যাপারটি বেশি জরুরি। বাংলাদেশও চোখ রাখছে বিশ্বকাপে। তবে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে খেলা, সেটিও নিজ আঙিনায়, এমন সুযোগ তো মেলে কম সময়ই। বাংলাদেশ তাই ছবি আঁকছে সিরিজ জয়ের।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট ও ওয়ানডেতে জয়ের স্বাদ পেলেও টি-টোয়েন্টিতে এখনও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। এই সংস্করণে চারবার পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছে দুই দল, সবকটিই বিশ্বকাপে এবং প্রতিটিই জিতেছে অস্ট্রেলিয়া।
এবার অস্ট্রেলিয়া এসেছে দলের সেরা কয়েকজন তারকাকে ছাড়া। চোট ও ব্যক্তিগত কারণ মিলিয়ে নেই ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভেন স্মিথ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, নিয়মিত অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ, মার্কাস স্টয়নিস, প্যাট কামিন্স, কেন রিচার্ডসন ও জাই রিচার্ডসন। বোলিংয়ে যদিও প্রায় সেরা আক্রমণই আছে, তারপরও সব মিলিয়ে তারা যথেষ্টই খর্বশক্তির।
শামীম হোসেন, আফিফ হোসেনের মতো তরুণদের দিকে নজর থাকবে এই সিরিজেও।
মাহমুদউল্লাহ অবশ্য সম্ভাবনার প্রকাশে কিছুটা সাবধানী। দলে যারাই থাকুক, অস্ট্রেলিয়া সবসময়ই দারুণ পেশাদার দল। তাদেরকে সমীহই করছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
“সেরা সুযোগ কিনা, সেটা বলা কঠিন। কারণ অস্ট্রেলিয়া ভালো দল। ওদেরকে হারাতে হলো ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ হলো, আমরা আমাদের স্কিলগুলো ম্যাচের দিন কতটা প্রয়োগ করতে পারি। ম্যাচের অবস্থা ও কন্ডিশন অনুযায়ী নিজেদের কতটা মেলে ধরতে পারি। এসবের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। আমার ধারণা, খুব ভালো একটি সিরিজ হবে।”
বাংলাদেশও অবশ্য সেরা দল পাচ্ছে না। চোটের কারণে সিরিজে নেই ওপেনার তামিম ইকবাল। পারিবারিক কারণে সুরক্ষা-বলয় ছেড়ে যেতে হওয়ায় খেলতে পারছেন না মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস ও আমিনুল ইসলাম বিপ্লব।
তবে তাদের না থাকাকে অন্যদের জন্য সুযোগ হিসেবে দেখছেন মাহমুদউল্লাহ। অধিনায়কের মতে, একতা আর সম্মিলিত পারফরম্যান্সের জোরে লক্ষ্য পূরণ করবে বাংলাদেশ।
“টি-টোয়েন্টি সংস্করণই এমন, নির্দিষ্ট দিনে ভালো খেললে যে কোনো দলকে হারানো সম্ভব। র্যাঙ্কিংয়ে তারা যত ওপরের দলই হোক। ওদের কয়েকজন ক্রিকেটার আসেনি। আমরাও তেমনি কয়েকজনকে মিস করছি, তামিম-মুশফিক-লিটন নেই। আমাদের দলের জন্য ও প্রতিটি ক্রিকেটারের জন্য বড় সুযোগ আমাদের মান দেখানোর। আমি সবসময় বিশ্বাস করি যে ঘরের মাঠে আমরা ভালো দল এবং এটা দেখানোর চেষ্টা করব এবারও।”
“দলের সবার প্রতিই আমাদের আস্থা রাখতে হবে। দল হিসেবে আমাদের ভালো করতে হবে। এটাই আমাদের শক্তির জায়গা। যখন আমরা দল হিসেবে পারফর্ম করি, ছোট ছোট জায়গাগুলি ঠিকঠাক করতে পারি, তখন দল হিসেবে আমরা শক্তিশালী থাকি এবং মনে করি, এটাই আমাদের শক্তি।”
অস্ট্রেলিয়ার কাছে এই সিরিজে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বকাপ প্রস্তুতি।
“হ্যাঁ, অবশ্যই (বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নেওয়া) আমরা এটা চাই। ওয়েস্ট ইন্ডিজেও এটা আমরা করেছি। প্রত্যাশিত ফলাফল আমরা পাইনি। তবে কিছু কিছু ব্যাপার আমরা পেয়েছি, যা দেখতে চেয়েছিলাম। মিচ মার্শ, অ্যাশটন টার্নারদের কাছ থেকে যা চেয়েছি, পেয়েছি। আরও কয়েকজন আছে, তারা দেখিয়েছে যে এই পর্যায়ে তাদের সামর্থ্য আছে।”
“অবশ্যই আমরা এই সিরিজ জিততে চাই। প্রতিটি ম্যাচই আমরা সবসময় জিততে চাই। তবে এটা একটা সুযোগ সবাইকে দেখার যে বিভিন্ন ভূমিকায় তারা কেমন করছে, যাতে বিশ্বকাপের দল নির্বাচনের সময় বোঝা যায় কোন ভূমিকায় কে কেমন করছে। সেই সুযোগটি নিতে সবাই রোমাঞ্চিত। নানা জায়গায় নিজেদের তুলে ধরতে মুখিয়ে থাকবে অনেকেই।”
সত্যিই যদি অস্ট্রেলিয়ার তরুণরা সেটা পারেন, তাহলে দলের জয়ের সম্ভাবনাও তাদের বাড়বে। এই দলে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের অভাব থাকলেও প্রতিভাবান ক্রিকেটার আছেন অনেক। নিজেদের মেলে ধরতে তারা চেষ্টার কমতি রাখবেন না।
সিরিজের ভাগ্য নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে উইকেট। মিরপুরের উইকেট বরাবরের মতো এবারও মন্থর থাকলে অস্ট্রেলিয়ার কাজটা হয়ে উঠবে কঠিন। তবে বাংলাদেশ সেটার ফায়দা কতটা নিতে পারবে, প্রশ্ন সেখানেই। টি-টোয়েন্টিতে তাদের পারফরম্যান্স যে ভীষণ অধারাবাহিক।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জিততে পারলে এই চিত্র বদলানোর পথে বড় একটি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ভবিষ্যতের জন্য আত্মবিশ্বাসের বড় রসদও মিলবে। কতটা পারবে বাংলাদেশ, উত্তর মিলবে ৭ দিনে ৫ ম্যাচের এই সিরিজে।