গায়ানায় শনিবার রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে ৭ রানে জিতে চার সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে বাবর আজমের দল। সিরিজের প্রথম ম্যাচ ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে।
টপ অর্ডারের গড়ে দেওয়া দৃঢ় ভিত কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় পাকিস্তান। অধিনায়কের ফিফটিতে দলটি ৮ উইকেটে করতে পারে ১৫৭ রান। মোহাম্মদ হাফিজের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলিংয়ে এক সময়ে সহজ জয়ের পথেই ছিল পাকিস্তান। শেষে পুরানের ঝড়ে আশা জাগিয়েও ওয়েস্ট ইন্ডিজ থামে ১৫০ রানে।
শেষ ওভারে পুরান যখন স্ট্রাইক পান তখন প্রয়োজন ১৮ রান। শেষ দুই বলে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ছক্কা-চার মারলে কমে ব্যবধান। শুরুর দিকে ক্যারিবিয়ানরা মন্থর ব্যাটিং না করলে হয়তো রান-বলের সমীকরণ এতোটা কঠিন হত না। পাওয়ার প্লেতে স্বাগতিকরা খেলে ২২টি ডট বল!
৪ ওভারে হাফিজ দেন কেবল ৬ রান। অসাধারণ বোলিংয়ের জন্য তিনিই জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। ৩৩ বল ছয় ছক্কা ও চারটি চারে ৬২ রানে অপরাজিত থাকেন পুরান।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে মোহাম্মদ রিজওয়ানের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পায় পাকিস্তান। তৃতীয় ওভারে আকিল হোসেনকে পরপর দুই ছক্কা ডানা মেলেন রিজওয়ান। শারজিল খান তাকে দিয়ে যান সঙ্গ।
ক্রিস গেইলের করা চতুর্থ ওভারে ফিরে যেতে পারতেন পাকিস্তানের দুই ওপেনার। শারজিলের ক্যাচ ছাড়েন অধিনায়ক কাইরন পোলার্ড। ওভারের পঞ্চম বলে এলবিডব্লিউর রিভিউ নিলে ফিরে যেতে হতো রিজওয়ানকে। কিন্তু নেয়নি ক্যারিবিয়ানরা।
শারজিলের জন্য খুব একটা বেশি মাশুল দিতে হয়নি। পরের ওভারেই জেসন হোল্ডারকে ছক্কা মারর পর ক্যাচ দিয়ে ফিরেন তিনি। ভাঙে ২৯ বল স্থায়ী ৪৬ রানের শুরুর জুটি।
তবে রিজওয়ান টিকে থাকেন বেশ কিছুক্ষণ, বাবর আজমের সঙ্গে গড়েন চমৎকার এক জুটি।
ক্রিজে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর রোমারিও শেফার্ডকে জোড়া চার মারেন বাবর। পরে ছক্কায় ওড়ান হেইডেন ওয়ালশ জুনিয়রকে। উইকেটে স্পিনারদের জন্য কিছুটা সহায়তা থাকায় কিছুটা সাবধানী ছিলেন দুই ব্যাটসম্যান। তাতে কিছুটা ভাটা পড়ে রানের গতিতে। ৪৭ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করে জুটির রান।
পঞ্চদশ ওভারে রিজওয়ানের রান আউটে ভাঙে ৬৭ রানের জুটি। এই কিপার-ব্যাটসম্যান দুটি করে ছক্কা ও চারে ৩৬ বলে করেন ৪৬।
পরের ওভারে শেফার্ডকে ছক্কা মেরে ৩৮ বলে পঞ্চাশে পৌঁছান বারর। সেই ওভার থেকে আসে ১৭ রান। কিন্তু বৃষ্টির জন্য ষোড়শ ওভার শেষে মাঠ ছাড়তে হয় দুই দলকে। সে সময় পাকিস্তানের স্কোর ছিল ২ উইকেটে ১৩৪।
ছবি: ক্রিকেট ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ
শেষ ৪ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে কেবল ২৩ রান যোগ করতে পারে পাকিস্তান।
২৬ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সফলতম বোলার হোল্ডার। ডোয়াইন ব্রাভো ২ উইকেট নেন ২৪ রানে।
রান তাড়ায় শুরুটা ভালো হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজের। দ্বিতীয় বলেই আন্দ্রে ফ্লেচারকে বোল্ড করে দেন হাফিজ। তার অফ স্পিন বেশ ভুগিয়েছে স্বাগতিকদের।
পাওয়ার প্লেতে টানা তিন ওভারের স্পেলে হাফিজ দেন কেবল ৫ রান! একটু খরুচে ছিলেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। ষষ্ঠ ওভারে বোলিং এসে গেইলকে বোল্ড করে দেন হাসান আলি।
এক ছক্কায় ২০ বলে ১৬ রান করেন গেইল। থিতু হয়ে ফিরেন শিমরন হেটমায়ার।
যখন প্রয়োজন বড় শট খেলার তখন ক্র্যাম্প নিয়ে মাঠের বাইরে চলে যান এভিন লুইস। অনেকটা সময় ক্রিজে থাকলেও তার ব্যাটে দেখা যায়নি প্রত্যাশিত ঝড়। দুটি করে ছক্কা ও চারে ৩৫ রান করতে খেলেন ৩৩ বল।
শেষ ৫ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন ছিল ৭৪ রান। পুরানের ছক্কা বৃষ্টিতে জেগে উঠে স্বাগতিকদের আশা। কিন্তু অন্য প্রান্তে মেলেনি খুব একটা সহায়তা। ১৪ বলে ১৩ রান করে ফিরেন পোলার্ড।
হাসানকে পরপর দুই ছক্কা হাঁকিয়ে ২৮ বলে ফিফটি করা পুরান শেষ ওভারে যখন স্ট্রাইক পান তখন প্রতি বলেই প্রয়োজন ছিল বাউন্ডারি। সেটা সম্ভব হয়নি তার পক্ষেও।
আগামী রোববার একটু মাঠে হবে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান: ২০ ওভারে ১৫৭/৮ (শারজিল ২০, রিজওয়ান ৪৬, বাবর ৫১, ফখর ১৫, হাফিজ ৬, হাসান ০, মাকসুদ ৫, শাদাব ৫, ওয়াসিম ১*; আকিল ৪-০-৩০-০, হোল্ডার ৪-০-২৬-৪, গেইলর ১-০-১১-০, ব্রাভো ৪-০-২৪-২, শেফার্ড ৩-০-৩৮-০, ওয়ালশ ৪-০-২৫-০)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ১৫০/৪ (ফ্লেচার ০, লুইস আহত অবসর ৩৫, গেইল ১৬, হেটমায়ার ১৭, পুরান ৬২*, পোলার্ড ১৩, হোল্ডার ০*; হাফিজ ৪-১-৬-১, আফ্রিদি ৪-০-৪৪-১, হাসান ৪-০-৩২-১, শাদাব ৪-০-১৪-১, কাদির ১-০-১১-০, ওয়াসিম ৩-০-৩২-১)
ফল: পাকিস্তান ৭ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মোহাম্মদ হাফিজ