কলম্বোয় শুক্রবার তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে ভারতকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। সফরকারীদের দেওয়া ২২৭ রানের লক্ষ্য স্বাগতিকরা তাড়া করেছে ৪৮ বল বাকি থাকে।
এর আগে ২০১২ সালের জুলাইয়ে দেশের মাটিতে ভারতকে সবশেষ ওয়ানডেতে হারিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। এরপর থেকে কেবল সঙ্গী ছিল হতাশা। তাই এবারের সিরিজটি ২-১ ব্যবধানে হারলেও শ্রীলঙ্কার জন্য রয়েছে হারের বৃত্ত ভাঙার স্বস্তি।
আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের উইকেট থেকে এদিন সহায়তা পাচ্ছিলেন স্পিনাররা। তা কাজে লাগান আকিলা ধনাঞ্জয়া ও প্রাভিন জয়াবিক্রমা। বৃষ্টি বাধায় ৪৭ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে তাদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ভারত গুটিয়ে যায় ২৩ বল আগে।
জবাবে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ১০৯ রান করে জয়ের ভিত গড়ে দেন আভিশকা ও রাজাপাকসে। ইনিংস শুরু করতে নেমে ৭৬ রান করা আভিশকা হয়েছেন ম্যাচ সেরা। আর তিনে নামা রাজাপাকসে করেন ক্যারিয়ার সেরা ৬৫ রান।
সিরিজ আগেই নিশ্চিত হওয়ায় একাদশে ৬টি পরিবর্তন আনে ভারত। যেখানে অভিষেক হয় পাঁচ জনের-নিতিশ রানা, রাহুল চাহার, চেতান সাকারিয়া, কৃষ্ণাপ্পা গৌতম ও সাঞ্জু স্যামসন। ৪১ বছর আগে ভারতীয় দলে এক সঙ্গে পাঁচ জনের অভিষেক হয়েছিল।
টি-টোয়েন্টি মেজাজে ইনিংস শুরু করে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা ভারত। প্রথম দুই ওভারেই তুলে ফেলে ২৩ রান। তৃতীয় ওভারে অবশ্য তারা হারিয়ে বসে উইকেট। দুশমন্থ চামিরার বলে কট বিহাইন্ড হয়ে যান শিখর ধাওয়ান।
পৃথ্বী শ ও স্যামসনের জুটিতে পথেই ছিল ভারত। দারুণ ব্যাটিংয়ে দুইজন বাড়াতে থাকেন দলের রান। পাওয়ার প্লেতে ওভার প্রতি রান ছিল ছয়ের বেশি।
১৫ ওভারে ভারতের রান ছাড়িয়ে যায় একশ। পৃথ্বী ও স্যামসনের জুটিও পেরিয়ে যায় ৭০। দারুণ খেলতে থাকা পৃথ্বীকে ৪৯ রানে এলবিডব্লিউ করে ৭৪ রানের জুটি ভাঙেন দাসুন শানাকা। দুই ওভার পরই বিদায় নেন ৫ চার ও এক ছক্কায় ৪৬ রান করা স্যামসন।
এর কয়েক ওভার পর আসে বৃষ্টি। দেড় ঘণ্টার বেশির সময় অপেক্ষার পর ৪৭ ওভারে নেমে আসে ম্যাচ। বৃষ্টির পর খেলা শুরু হলেও আগের ছন্দ ধরে রাখতে পারেনি ভারত।
বৃষ্টির পর দ্বিতীয় ওভারেই জয়াবিক্রমার বলে কট বিহাইন্ড মনিশ পান্ডে। দারুণ এক ডেলিভারিতে হার্দিক পান্ডিয়াকে এলবিডব্লিউ করেন এই বাঁহাতি স্পিনার।
৩৭ বলে ৭ চারে ৪০ করা সূর্যকুমার যাদব আকিলার শিকার। সুর্যকুমারসহ ভারতের তিন জন আউট হন চল্লিশের ঘরে। ৩৫ রানে শেষ চার উইকেট হারায় ভারত।
দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামা জয়াবিক্রমার নামের পাশে ছিল না কোনো উইকেট। দারুণ বোলিংয়ে এদিন তিনি ৫৯ রানে তুলে নেন তিনটি। ৪৪ রানে আকিলার প্রাপ্তিও তিন উইকেট।
রান তাড়ায় মিনোদ ভানুকা দ্রুত ফেরার পর রাজাপাকসেকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন আভিশকা। ষোড়শ ওভারে ১০০ পেরিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা।
দারুণ ব্যাটিংয়ে আভিশকা ফিফটি তুলে নেন ৫৩ বলে। তৃতীয় ওয়ানডে খেলতে নামা রাজাপাকসে প্রথম অর্ধশতকে পা দেন আরও দ্রুত, ৪২ বলে। তাদের জুটি সেঞ্চুরি স্পর্শ করে ৯৭ বলে।
তিনবার জীবন পাওয়া রাজাপাকসে ফিফটির পর বেশিদূর যেতে পারেননি। ১২ চারে ৫৬ বলে তার ৬৫ রানের ইনিংস থামান অভিষিক্ত সাকারিয়া। নিজের পরের ওভারে আক্রমণে এসে ফিরতি ক্যাচে বাঁহাতি এই পেসার ফিরিয়ে দেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে। পরপর দুই উইকেট হারানোয় শ্রীলঙ্কা চাপে পড়ে কিছুটা।
শেষ দিকে গিয়ে দ্রুত আরও কয়েকটি উইকেট হারায় তারা। তবে লক্ষ্য ছোট থাকায় বড় বিপদে পড়তে হয়নি। আভিশকাকে কিছুটা সময় সঙ্গ দেওয়া চারিথ আসালঙ্কা ২৪ রান করে ফেরেন পান্ডিয়ার স্লোয়ারে এলবিডব্লিউ হয়ে।
শেষ দিকে বোলিংয়ে এসে ম্যাচে কিছুটা রোমাঞ্চ ছড়ান চাহার। তাকে প্রথম ওয়ানডে উইকেট দিয়ে গোল্ডেন ডাকে ফেরেন শানাকা। থিতু ব্যাটসম্যান আভিশকাও এই লেগ স্পিনারের বলে ধরা পড়েন স্লিপে। ৯৮ বলে তার ৭৬ রানের ইনিংসে ৪ চারের পাশে এক ছক্কা।
চাহারের পরের ওভারে স্টাম্পড হয়ে যান চামিকা করুনারত্নে। বাকিটা পথ রমেশ মেন্ডিস ও আকিলার ব্যাটে পার হয় শ্রীলঙ্কা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ৪৩.১ ওভারে ২২৫ (পৃথ্বী ৪৯, শিখর ১৩, সাঞ্জু ৪৬, মনিশ ১১, সূর্যকুমার ৪০, পান্ডিয়া ১৯, নিতিশ ৭, গৌতম ২, চাহার ১৩, সাইনি ১৫, সাকারিয়া ০*; চামিরা ৮.১-০-৫৫-২, আকিলা ১০-০-৪৪-৪, চামিকা ৬-০-২৫-১, জয়াবিক্রমা ১০-০-৫৯-৩, শানাকা ৮-০-৩৩-১, রামেশ ১-০-৮-০)।
শ্রীলঙ্কা: ৩৯ ওভারে ২২৭/৭ (আভিশকা ৭৬, মিনোদ ৭, রাজাপাকসে ৬৫, ধনাঞ্জয়া ২, আসালঙ্কা ২৪, শানাকা ০, রমেশ ১৫*, চামিকা ৩, আকিলা ৫*; সাইনি ৫-০-২৭-০, সাকারিয়া ৮-০-৩৪-২, চাহার ১০-০-৫৪-৩, গৌতম ৮-০-৪৯-১, পান্ডিয়া ৫-০-৪৩-১, নিতিশ ৩-০-১০-০)।
ফল: শ্রীলঙ্কা ৩ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জয়ী ভারত।
ম্যান অব দা ম্যাচ: আভিশকা ফার্নান্দো।
ম্যান অব দা সিরিজ: সূর্যকুমার যাদব।