পেসার চাহারের ব্যাটিং নৈপুণ্যে ভারতের দুর্দান্ত জয়

১৯৩ রানে নেই ৭ উইকেট। লক্ষ্য তখনও ৮৩ রান দূরে। নেই বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের কেউ। বল-প্রতি রান তাড়ার কঠিন চ্যালেঞ্জে চমক দেখালেন দিপক চাহার। অসাধারণ ব্যাটিংয়ে আরেক পেসার ভুবনেশ্বর কুমারকে নিয়ে দলকে নিলেন জয়ের বন্দরে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 July 2021, 06:11 PM
Updated : 20 July 2021, 07:11 PM

কলম্বোয় মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কাকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে ভারত। তিন ম্যাচের সিরিজ সফরকারীরা জিতে নিয়েছে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই। টানা ৯টি ওয়ানডে সিরিজ জিতল তারা।

আভিশকা ফার্নান্দো ও চারিথ আসালঙ্কার ফিফটিতে ২৭৫ রানের পুঁজি পায় লঙ্কানরা। সূর্যকুমার যাদবের ফিফটির পর চাহারের ক্যারিয়ারের সেরা ৬৯ রানের ইনিংসে ভারত লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ৫ বল বাকি থাকতে।

ব্যাটিং ও বোলিং দুই বিভাগেই দারুণ শুরু পেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। ঘরের মাঠে ২০১২ সালের পর ভারতের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে জয়ের আশাও জাগিয়েছিল তারা। কিন্তু তাদের আশা গুঁড়িয়ে ব্যবধান গড়ে দেন চাহার।

দলের ১৬০ রানে যখন সূর্যকুমারকে হারায় ভারত, ক্রিজে যান চাহার। কিছুক্ষণ পর বিদায় নেন ক্রুনাল পান্ডিয়াও। এরপরই প্রতিরোধ গড়েন ভুবনেশ্বর ও চাহার। গড়েন অষ্টম উইকেটে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮৪ রানের জুটি। সেখানে ভুবনেশ্বরের অবদান ২৮ বলে অপরাজিত ১৯।

বল হাতে চাহার নিয়েছেন দুই উইকেট। অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে জিতেছেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে দিনের শুরুটা শ্রীলঙ্কার জন্য ছিল আশা জাগানিয়া। আগের ম্যাচের তুলনায় ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনার আভিশকা ফার্নান্দো ও মিনোদ ভানুকা খেলতে থাকেন দারুণ। মিনোদকে ফিরিয়ে ৭৭ রানের শুরুর জুটি ভাঙেন যুজবেন্দ্র চেহেল।

এই লেগ স্পিনারের পরের বলেই কট বিহাইন্ড হয়ে যান ভানুকা রাজাপাকসে। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে নিয়ে দুই উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন আভিশকা। লঙ্কান ওপেনার ফিফটি তুলে নেন ৭০ বলে। ভুবনেশ্বর কুমারের বলে মিডউইকেটে ধরা পড়ে থামে তার ৪ চার ও এক ছক্কায় ৫০ রানের ইনিংস।

থিতু হয়ে ফিরেন ধনাঞ্জয়া। তেমন কিছু করতে পারেননি দুই অলরাউন্ডার দাসুন শানাকা ও ভানিন্দু হাসারাঙ্গা।

চামিকা করুনারত্নেকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন আসালঙ্কা। সপ্তম উইকেটে দুই জনে দলকে এনে দেন ৫০ রানের জুটি। চতুর্থ ওয়ানডেতে আসালঙ্কা প্রথম ফিফটির স্বাদ পান ৫৬ বলে। ৪৮তম ওভারে ভুবনেশ্বর ফেরান ৬৫ রান করা এই ব্যাটসম্যানকে।

দিপককে টানা দুই বলে চার মারার পর চামিকা শেষ ওভারে ভুবনেশ্বরকে মারেন আরও দুটি। তার ব্যাটে ২৭০ রান পার করে শ্রীলঙ্কা। প্রথম ওয়ানডেতে ৪৩ রানে অপরাজিত থাকা চামিকা এবার ৫ চারে ৩৩ বলে ৪৪ রানের ইনিংস।

প্রথম ওয়ানডেতে বিধ্বংসী দুই ইনিংস খেলা পৃথ্বী শ ও ইশান কিষান এবার করতে পারেননি কিছুই। দলকে টানতে পারেননি অধিনায়ক শিখর ধাওয়ানও।

হতাশাজনক রান আউটে বিদায় নেন মনিশ পান্ডে । শানাকার পরের বলেই জীবন পান হার্দিক পান্ডিয়া, ফিরতি ক্যাচ নিতে পারেননি লঙ্কান অধিনায়ক। হার্দিককে এক বল পরেই ফিরিয়ে দেন তিনি।

মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলে চার মেরে রানের খাতা খোলা সূর্যকুমার ৪২ বলে পৌঁছান ফিফটিতে। ৫৩ রানে তাকে এলবিডব্লিউ করেন লাকশান সান্দাক্যান। এরপর কিছুক্ষণ লড়াই চালান ক্রুনাল পান্ডিয়া। রিস্ট স্পিনার হাসারাঙ্গার দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে থামে তার ৩৫ রানের ইনিংস।

এরপরই শ্রীলঙ্কার সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়ান চাহার ও ভুবনেশ্বর। অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দলকে জিতিয়ে ফেরেন দুইজন।

চাহার অপরাজিত থাকেন ৬৯ রানে। ৮২ বলের ইনিংসে ৭ চারের পাশে একটি ছক্কা। ভারতের জেতা ম্যাচে দলের আট নম্বর ব্যাটসম্যানের এটা সর্বোচ্চ ইনিংস।
আগামী শুক্রবার তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে মুখোমুখি হবে দুই দল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ২৭৫/৯ (আভিশকা ৫০, মিনোদ ৩৬, রাজাপাকসে ০, ধনাঞ্জয়া ৩২, আসালঙ্কা ৬৫, শানাকা ১৬, হাসারাঙ্গা ৮, চামিকা ৩৬*, চামিরা ২, সান্দাক্যান ০, রাজিথা ১*; ভুবনেশ্বর ১০-০-৫৪-৩, দিপক ৮-০-৫৩-২, হার্দিক ৪-০-২০-০, চেহেল ১০-১-৫০-৩, কুলদিপ ১০-০-৫৫-০, ক্রুনাল ৮-০-৩৭-০)।

ভারত: ৪৯.১ ওভারে ২৭৭/৭ (পৃথ্বী ১৩, ধাওয়ান ২৯, কিষান ১, মনিশ ৩৭, সূর্যকুমার ৫৩, হার্দিক ০, ক্রুনাল ৩৫, চাহার ৬৯*, ভুবনেশ্বর ১৯*; রাজিথা ৭.২-০-৫৩-১, চামিরা ১০-০-৬৫-০, হাসারাঙ্গা ১০-০-৩৭-৩, সান্দাক্যান ১০-০-৭১-১, চামিকা ৬-১-২৬-০, শানাকা ৩-০-১০-১, ধনাঞ্জয়া ৩-০-১০-০)।

ফল: ভারত ৭ উইকেটে জয়ী।

সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজে ২-০ তে এগিয়ে ভারত।

ম্যান অব দা ম্যাচ: দিপক চাহার।