টেস্ট ব্যাটিং ভাবনায় রেখে লিটনের এই সেঞ্চুরি

তিন ম্যাচের মধ্যে দুই সেঞ্চুরি। ওয়ানডেতে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ইনিংস। সব মিলিয়ে যেন উড়ছিলেন লিটন দাস। এরপরই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে পড়ল লম্বা বিরতি। তাতেই যেন কেটে গেল তাল-লয়। স্টাইলিশ এই ব্যাটসম্যানের ব্যাট বেজে উঠল না একই সুরে। কঠিন সময় পেরিয়ে আবার যখন পারলেন, তখন তাকে দেখা গেল অন্য ছন্দে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 July 2021, 04:41 PM
Updated : 16 July 2021, 05:00 PM

এই লিটন যেন অনেক শান্ত। এই লিটন পরিণত। এই লিটনের সুফল পেল দল। তার দারুণ সেঞ্চুরিতেই বাংলাদেশ পেল জিম্বাবুয়েকে হারানোর ভিত।

হারারেতে শুক্রবার ১১৪ বল ১০২ রানের ইনিংসটির আগে ওয়ানডেতে তার ব্যাটে ছিল খরা। আগের ৮ ম্যাচে একবারও ছাড়াতে পারেননি ২৫। তিনবার আউট হন শূন্য রানে। সব মিলিয়ে করতে পারেন কেবল ১০১ রান।

দেশের মাটিতে মাস দুয়েক আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সবশেষ সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে ছিলেন না একাদশে। ওপেন করার জন্য দলে আছেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ, বাইরে অপেক্ষায় সৌম্য সরকার। ঘাড়ে নিঃশ্বাসটা টের পাচ্ছিলেন লিটন। 

হারারেতে প্রথম ওয়ানডেতে মাঠে নামার আগে এ নিয়ে কত ভাবনা খেলা করছিল তার মাথায়! কিন্তু তাতে নিমগ্ন থাকার সুযোগ ছিল না। সহায়ক কন্ডিশনে জিম্বাবুয়ের পেসারদের দারুণ বোলিং আর ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ৭৪ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে দল।

নিজের করণীয় ততক্ষনে বুঝে নিয়েছেন লিটন। ম্যাচের আগে যে বার্তা বারবার দেওয়া হচ্ছিল দল থেকে, সেটাকেই আপন করে নেন তিনি।

“দল থেকে বারবার বলা হচ্ছিল, প্রথম পাঁচ জনের কারো ৪০ ওভার পর্যন্ত ব্যাটিং করতে হবে। সেই ব্যাপারটাই মাথায় ছিল, যেন অন্তত ৩০-৩৫ ওভার পর্যন্ত ব্যাটিং করতে পারি।”

“আমি এমনিতেও ম্যাচের আগে একটু চাপে ছিলামই, অনেক দিন বড় স্কোর করতে পারছি না, একটা বড় রান করতে হবে। তখন অন্য প্রান্তে যখন দেখছি উইকেট পড়ছে, তখন একটা বাড়তি চাপ অনুভব করি। দলকে এখান থেকে একটা বড় জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। সব মিলিয়ে আমি সামাল দিয়েছি।”

ওয়ানডের আগে একমাত্র টেস্টেও দলের বিপদের সময় নেমে হাল ধরেছিলেন লিটন। ১৩২ রানে ৬ উইকেট হারানো দলকে দিয়েছিলেন ভরসা। ৯৫ রানের সেই ইনিংস এবার তাকে জুগিয়েছে আত্মবিশ্বাস।

ধুমধাম পিটিয়ে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেওয়া কত ইনিংসই তো আছে। কিন্তু পরিস্থিতি বুঝে নিজেকে সামলে রেখে এমন পরিণত ইনিংস খুব বেশি দেখা যায় না বাংলাদেশের ক্রিকেটে। যখন বুঝেছেন বিপদ কেটে গেছে, তখন চড়াও হয়েছেন। দম দিয়েছেন রানের গতিতে।

পরিস্থিতি এ দিন খুব ভালো পড়তে পারছিলেন তিনি। উইকেট ও কন্ডিশন দেখে নিজেকে বারবার মনে করে দিচ্চিলেন, বড় শট খেলে চাপ সরানোর চেষ্টা করা যাবে না।

“কন্ডিশনটা খুব একটা ব্যাটিং সহায়ক ছিল না। বলা চলে প্রথম ২০ ওভারে। কারণ, তখন আবহাওয়াও খুব একটা আমাদের দিকে ছিল না। একই সঙ্গে ওদের বোলাররাও তখন খুবই ভালো করেছে।”

“একটা চিন্তা সেসময় কাজ করছে যে, উইকেট থাকতে হবে। এই উইকেটে সেভাবে সব শট খেলার সুযোগ নেই। চেষ্টা করেছি ২০-২৫ ওভার পর্যন্ত নরম্যাল ক্রিকেট যেটা হয়, টেস্ট ক্রিকেটে যেভাবে খেলা চলে, সেভাবে ব্যাটিং করার জন্য। এর মধ্যে অনেক বল ডটও খেলেছি। নিজেকে একটা ব্যাপার বুঝিয়েছি, পরিস্থিতি আমার পক্ষে না। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে ১০-১৫ ওভার বেশি খেলতে হবে।”

ম্যাচে দশম বলে রানের খাতা খোলেন লিটন। লম্বা একটা সময় গুটিয়ে রাখেন নিজেকে। দুই দলের সবশেষ দেখায় চিত্রটা ছিল উল্টো। গত বছরের মার্চে সিলেটের সেই ম্যাচে খেলেন ১৭৬ রানের খুনে এক ইনিংস। যেখানে ছক্কাই ছিল আটটি, চার ১৬টি।

ওয়ানডেতে ভালো সময়ের যাত্রায় নয় ম্যাচে সেটি ছিল তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। স্কোরগুলো এমন, ৭৬, ৯৪*, ২০, ১৬, ২২, ৩২, ১২৬*, ৯, ১৭৬। ওয়ানডেতে এতটা ভালো সময় এর আগে কখনও কাটাননি লিটন। তার এর পরপরই করোনাভাইরাসের জন্য বিরতিটা তার জন্য ছিল মস্ত আঘাত।

“কোভিডের আগে আমি ভালো একটা মোমেন্টাম পেয়েছিলাম। কোভিড না হয়ে যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকত তাহলে হয়তো আমার রান করার সম্ভাবনা বেশি থাকত। কারণ, আমার একটা ‘পিক টাইম’ চলছিল তখন।”

“কোভিড বিরতির পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরাটা একটু কঠিন হয়ে গেছে। কারণ, মাথায় অনেক চিন্তা ছিল যে, পারফর্ম করতে হবে। পরিস্থিতিগুলো সেভাবে (পক্ষে) যায়নি। সব মিলিয়ে, দেখতে দেখতে আটটা ইনিংস গেছে। দলের সহায়তা ছিল, বড় ভাইদের সহায়তা ছিল। পরিবার থেকেও অনেক সহায়তা ছিল, বিশেষ করে আমার স্ত্রীর। সে বলব, আমার দ্বারা অনেক কিছুই সম্ভব বা আমি করতে পারি। এই বিশ্বাসগুলোই আমাকে সবসময় অনুপ্রাণিত করেছে।”