লিটন-সাকিবের নৈপুণ্যে বাংলাদেশের বড় জয়

পরিণত ব্যাটিংয়ে চমৎকার এক সেঞ্চুরি করলেন লিটন দাস। ব্যাটিংয়ে অবদান রাখলেন আফিফ হোসেন, মাহমুদউল্লাহ। তাদের দৃঢ়তায় লড়াইয়ের পুঁজি পাওয়া বাংলাদেশ দাঁড়াতেই দিল না জিম্বাবুয়েকে। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন সাকিব আল হাসান। বাঁহাতি এই স্পিনারের পাঁচ উইকেটে তামিম ইকবালের দল জিতল অনায়াসে।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 July 2021, 07:01 AM
Updated : 16 July 2021, 02:29 PM

বাংলাদেশের রেকর্ড গড়া জয়

জিম্বাবুয়ের মাটিতে তাদের সর্বনিম্ন রানে অলআউট করার দিনে সর্বোচ্চ জয়ও পেয়েছে বাংলাদেশ। ১৫৫ রানের রেকর্ড গড়া জয়ে সেঞ্চুরিতে উজ্জ্বল লিটন দাস। ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছেন তিনি।

৩০ রানে ৫ উইকেট নিয়ে বোলিংয়ে আলো ছড়িয়েছেন সাকিব আল হাসান। তার প্রথম ২ ওভারেই এসেছিল ১৭ রান।

বাংলাদেশের বিপক্ষে দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের আগের সর্বনিম্ন ছিল ১৪৮, বুলাওয়ায়োতে ২০১৩ সালে। রানের দিক থেকে জিম্বাবুয়ের মাটিতে বাংলাদেশের আগের বড় জয়টি ছিল সেই ম্যাচেই, ১২১ রানে। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৭৬/৯ (তামিম ০, লিটন ১০২, সাকিব ১৯, মিঠুন ১৯, মোসাদ্দেক ৫, মাহমুদউল্লাহ ৩৩, আফিফ ৪৫, মিরাজ ২৬, সাইফ ৮*, তাসকিন ১, শরিফুল ০*; মুজরাবানি ১০-২-৪৭-২, চাতারা ১০-১-৪৯-১, এনগারাভা ১০-১-৬১-২, জঙ্গুয়ে ৯-০-৫১-৩, বার্ল ৫-০-৩১-০, মাধেবেরে ৬-০-৩৭-০)।

জিম্বাবুয়ে: ২৮.৫ ওভারে ১২১ (মাধেবেরে ৯, মারুমানি ০, টেইলর ২৪, মায়ার্স ১৮, চাকাভা ৫৪, বার্ল ৬, জঙ্গুয়ে ০, মুজরাবানি ২, চাতারা ২*, এনগারাভা ০, মারুমা আহত অনুপস্থিত; তাসকিন ৫-০-২২-১, সাইফ ৪-০-২৩-১, সাকিব ৯.৫-০-৩০-৫, শরিফুল ৬-০-২৮-১, মিরাজ ৩-০-১৫-০, মোসাদ্দেক ১-০-১-০)।

সাকিবের পাঁচে জিতল বাংলাদেশ

পাওয়ার প্লেতে খরুচে বোলিং করা সাকিব আল হাসান পরে নিলেন মধুর প্রতিশোধ। তার স্পিনে ১২১ রানে গুটিয়ে গেল জিম্বাবুয়ের ইনিংস। বাংলাদেশ জিতল ১৫৫ রানে।

নিজের শেষ ওভারে রিচার্ড এনগারাভাকে কট বিহাইন্ড করেন সাকিব। ওয়ানডেতে তৃতীয়বারের মতো নেন পাঁচ উইকেট।

ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পাওয়া টিমাইসেন মারুমা ব্যাটিংয়ে নামেননি।

সাকিবের চতুর্থ শিকার চাকাভা

ফিফটির পর বেশিক্ষণ টিকলেন না রেজিস চাকাভা। সাকিব আল হাসানকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় ডিপ মিডউইকেটে মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে ধরা পড়েন এই কিপার-ব্যাটসম্যান।

৫১ বলে দুই ছক্কা ও চারটি চারে ৫৪ রান করেন চাকাভা।  

২৭ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ৮ উইকেটে ১১৯। ক্রিজে টেন্ডাই চাটারার সঙ্গী রিচার্ড এনগারাভা।

চাকাভার ফিফটি

অন্য প্রান্তে একের পর এক সঙ্গী হারালেও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন রেজিস চাকাভা। শরিফুল ইসলামকে পয়েন্ট দিয়ে বিশাল এক ছক্কা হাঁকিয়ে পৌঁছেছেন পঞ্চাশে।

ক্রিজে গিয়েই বোলারদের ওপর চড়াও হন চাকাভা। উইকেটের পেছনে চমৎকার একটি দিন কাটানো এই কিপার প্রথম ১০ বলে করেন ২২ রান। এরপর একটু মন্থর হলেও পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন ৪৭ বলে।

২৬ ওভারে জিম্বাবুয়ের স্কোর ৭ উইকেটে ১১৯।

সাকিবের তৃতীয় শিকার মুজারাবানি

জায়গায় দাঁড়িয়ে সাকিব আল হাসানকে খেলার চেষ্টা করার মাশুল দিলেন ব্লেসিং মুজারাবানি। এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরলেন তিনি।

একটু জোরের ওপরে করা বলের লাইন মিস করেন মুজারাবানি। স্পিন করে ভেতরে ঢোকা বল আঘাত হানে প্যাডে। জোরালো আবেদনে সাড়া দিয়ে আঙুল তোলেন আম্পায়ার।

৪ বলে ২ রান করেন মুজারাবানি।

২৩ ওভারে জিম্বাবুয়ের স্কোর ৭ উইকেটে ১০৮। ক্রিসে রেজিস চাকাভার সঙ্গী টেন্ডাই চাটারা।

শূন্যতেই শেষ জঙ্গুয়ে

শরিফুল ইসলামের বল স্কয়ার লেগে পাঠিয়ে একটি সিঙ্গেল নিতে চেয়েছিলেন লুক জঙ্গুয়ে। তিনি কিছুটা দূর এগিয়ে যাওয়ার পর ফিরিয়ে দেন রেজিস চাকাভা। ততক্ষণে বলের কাছে পৌঁছে যান আফিফ হোসেন। তার জোরালো থ্রো স্টাম্প ভেঙে দিলে আর আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের জন্য অপক্ষো করেননি জঙ্গুয়ে।

২ বল খেলে তিনি বিদায় নেন শূন্য রানে।

২২ ওভারে জিম্বাবুয়ের স্কোর ৬ উইকেটে ১০৮। ক্রিজে রেজিস চাকাভার সঙ্গী ব্লেসিং মুজারাবানি।

সাকিবের দ্বিতীয় শিকার বার্ল

কাট করে আগের বলে এলো বাউন্ডারি। পরের বলে সাকিব আল হাসানকে স্লগ সুইপ করে ওড়াতে চাইলেন রায়ান বার্ল। পারলেন তিনি, ডিপ ডিমউইকেটে চমৎকার ক্যাচ মুঠোয় নিলেন আফিফ হোসেন।

এক চারে ১৭ বলে ৬ রান করেন বার্ল।

ওয়ানডেতে তিনি সাকিবের ২৭১তম শিকার। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে এককভাবে সর্বোচ্চ উইকেট এখন বাঁহাতি এই স্পিনারের। এশিয়া একাদশ ও বাংলাদেশের হয়ে ২৭০ উইকেট নেওয়া মাশরাফি নেমে গেলেন দুই নম্বরে।

২১ ওভারে জিম্বাবুয়ের স্কোর ৫ উইকেটে ১০৫। ক্রিজে রেজিস চাকাভার সঙ্গী লুজ জঙ্গুয়ে।

জিম্বাবুয়ের একশ

নিয়মিত উইকেট হারালেও রেজিস চাকাভার আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে গতি হারায়নি জিম্বাবুয়ের ইনিংস। ২০ ওভারে তিন অঙ্ক স্পর্শ করেছে দলটির রান।

২০ ওভারে জিম্বাবুয়ের স্কোর ১০০/৪। ২৯ বলে ৪১ রানে খেলছেন চাকাভা। রায়ান বার্লের রান ১৫ বলে ২। শেষ ৩০ ওভারে আরও ১৭৭ রান চাই স্বাগতিকদের।

মাশরাফিকে ছাড়িয়ে সাকিব

পাওয়ার প্লেতে সাকিব আল হাসান ছিলেন খরুচে। দুই ওভারেই ব্রেন্ডন টেইলরের ব্যাটে হজম করেছিলেন বাউন্ডারি। বোলিংয়ে ফিরে বাঁহাতি স্পিনার নিলেন মধুর প্রতিশোধ। ফিরিয়ে দিলেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ককে।

সাকিবের বাঁহাতি স্পিনের বিরুদ্ধে টেইলরের অস্ত্র যেন ছিল স্লগ সুইপ। এর আগে বাউন্ডারি পেলেও এবার অফ স্টাম্পে থাকা ফুল লেংথ বলে ঠিকমতো শট খেলতে পারেননি। শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ মুঠোয় জমান তাসকিন আহমেদ।

বাংলাদেশর বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৭০ ওয়ানডে উইকেট পাওয়া মাশরাফি বিন মুর্তজার পাশে বসলেন সাকিব। তার সব উইকেটই দেশের হয়ে। মাশরাফি একটি উইকেট পেয়েছিলেন এশিয়া একাদশের হয়ে। তাই এই পেসারকে ছাড়িয়ে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট এখন সাকিবের।

তিন চারে ৩১ বলে ২৪ রান করেন টেইলর।

১৫ ওভারে জিম্বাবুয়ের স্কোর ৪ উইকেটে ৭৯। ক্রিজে রেজিস চাকাভার সঙ্গী রায়ান বার্ল।

মায়ার্সকে ফেরালেন শরিফুল

মাত্রই জমে উঠছিল জুটি। বাড়তে শুরু করেছিল রান। কিন্তু অধৈর্য হয়ে গেলেন ডিওন মায়ার্স। শরিফুল ইসলামকে পুল করে ছক্কার চেষ্টায় ফিরে গেলেন অভিষিক্ত এই ব্যাটসম্যান।

বাঁহাতি পেসার শরিফুলের অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বল পুল করেন মায়ার্স। ব্যাটের কানায় লেগে উঠে যাওয়া ক্যাচ মুঠোয় জমান মোসাদ্দেক হোসেন।

২৪ বলে তিন চারে ১৮ রান করেন মায়ার্স।

১১ ওভারে জিম্বাবুয়ের স্কোর ৩ উইকেটে ৪৯। ক্রিজে ব্রেন্ডন টেইলরের সঙ্গী রেজিস চাকাভা।

পাওয়ার প্লেতে ২ ওপেনারের উইকেট

পাওয়া প্লেতে দুই ওপেনার ওয়েসলি মাধেভেরে ও টাডিওয়ানাশে মারুমানিকে ফিরিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে ব্রেন্ডন টেইলর ও ডিওন মায়ার্সের ব্যাটে লড়াই করছে জিম্বাবুয়ে।

১০ ওভারে জিম্বাবুয়ের স্কোর ২ উইকেটে ৪৭। টেইলর ও মায়ার্স দুই জনে ১৭ রানে খেলছেন।

একটি করে উইকেট নিয়েছেন তাসকিন আহমেদ ও মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। পাওয়ার প্লের ভেতর ২ ওভার বোলিং করে ১৭ রান দিয়েছেন সাকিব আল হাসান।

তাসকিনের দুর্দান্ত ডেলিভারিতে বোল্ড মাধেভেরে

ওয়েসলি মাধেভেরেকে বেশিক্ষণ টিকতে দিলেন না তাসকিন আহমেদ। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে দিলেন তরুণ ওপেনারকে।

ভেতরে ঢোকা বলের লাইনে যেতে পারেননি মাধেভেরে। তার ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে উপড়ে ফেলে মিডল স্টাম্প। ১৭ বলে তিনি করেন ৯ রান।

৫ ওভারে জিম্বাবুয়ের রান ২ উইকেটে ১৭। ক্রিজে ব্রেন্ডন টেইলরের সঙ্গী ডিওন মায়ার্স।

প্রথম আঘাত সাইফের

শুরুতেই জিম্বাবুয়ের উদ্বোধনী জুটি ভেঙে দিলেন মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। এই পেসারের চমৎকার ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন টাডিওয়ানাশে মারুমানি।

শরীরের খুব কাছে থাকা গুড লেংথের বল কাট করতে চেয়েছিলেন অভিষিক্ত ওপেনার। ঠিক মতো খেলতে পারেননি। ব্যাটের কানায় লেগে স্টাম্প এলোমেলো করে দেয় বল। প্রথম ওয়ানডে ইনিংসে শূন্য রানে ফিরেন মারুমানি।

২ ওভারে জিম্বাবুয়ের স্কোর ১ উইকেটে ৭। ক্রিজে ওয়েসলি মাধেভেরের সঙ্গী বাংলাদেশকে অনেকবার ভোগানো ব্রেন্ডন টেইলর।

উইকেটের পিছনে সোহান

ব্যাটিংয়ের সময় পা পিছলে পড়ে গিয়ে হাতে খানিকটা চোট পান লিটন দাস। সেটা নিয়েই ব্যাটিং চালিয়ে গিয়ে করেন সেঞ্চুরি। তবে ফিল্ডিংয়ে আর নামেননি তিনি। মোহাম্মদ মিঠুন থাকলেও উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়েছেন একাদশের বাইরে থাকা নুরুল হাসান সোহান।

জিম্বাবুয়েকে ২৭৭ রানের লক্ষ্য দিল বাংলাদেশ

বাজে শুরুর পর লিটন দাস ও মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে ঘুরে দাঁড়াল বাংলাদেশ। থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। তবে দারুণ সেঞ্চুরিতে দলকে টানলেন লিটন।

এই ওপেনারের সেঞ্চুরিতে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৭৬ রান করেছে বাংলাদেশ।

শেষটায় ঝড় তুললেন আফিফ হোসেন। দারুণ সঙ্গ দিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তাতে বাংলাদেশ পেল লড়াইয়ের পুজি। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৭৬/৯ (তামিম ০, লিটন ১০২, সাকিব ১৯, মিঠুন ১৯, মোসাদ্দেক ৫, মাহমুদউল্লাহ ৩৩, আফিফ ৪৫, মিরাজ ২৬, সাইফ ৮*, তাসকিন ১, শরিফুল ০*; মুজারাবানি ১০-২-৪৭-২, চাটারা ১০-১-৪৯-১, এনগারাভা ১০-১-৬১-২, জঙ্গুয়ে ৯-০-৫১-৩, বার্ল ৫-০-৩১-০, মাধেভেরে ৬-০-৩৭-০)

পঞ্চাশ রানের জুটি গড়ে আউট মিরাজ-আফিফ

দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় পরপর দুই বলে ফিরে গেলেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও আফিফ হোসেন। লুক জঙ্গুয়েকে ছক্কা হাঁকানোর পর একই চেষ্টায় ফিরে যান মিরাজ। ২৫ বলে একটি করে ছক্কা ও চারে তিনি করেন ২৬।

পরের বলে স্কুপ করার চেষ্টায় বোল্ড হয়ে যান আফিফ। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের ৩৫ বলে খেলা ৪৫ রানের ঝড়ো ইনিংসে দুই ছক্কার পাশে চার একটি।

জঙ্গুয়ের পরের বলটি ছিল ওয়াইড। পরের বলে দুই রান নেওয়ার চেষ্টায় রান আউট হয়ে ফিরেন তাসকিন আহেমদ।

৪৯ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ৯ উইকেটে ২৬৭। ক্রিজে মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের সঙ্গী শরিফুল ইসলাম।

আফিফ-মিরাজের জুটিতে পঞ্চাশ

দ্রুত রান তুলছেন আফিফ হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজ। দুই তরুণের ব্যাটে ম্যাচে দ্বিতীয় পঞ্চাশ রানের জুটি পেয়েছে বাংলাদেশ।

সপ্তম উইকেটে তাদের পঞ্চাশ এসেছে কেবল ৪৩ বলে।

রোববার সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে।

সেঞ্চুরির পর ফিরলেন লিটন

ফিফটির পর থেকে দ্রুত রান তুলছিলেন লিটন দাস। সেঞ্চুরির পর গতি বাড়াতে চাইলেন আরও। পারলেন না এই ওপেনার। রিচার্ড এনগারাভাকে ছক্কার চেষ্টায় ফিরলেন সীমানায় ক্যাচ দিয়ে।

দলের যে অবস্থা তাতে সেঞ্চুরিতেই শেষ হয়নি লিটনের কাজ। কিন্তু তিন অঙ্ক ছোঁয়ার পর যেতে পারলেন না বেশিদূর। বাঁহাতি পেসার এনগারাভার শর্ট বলে ঠিক মতো পুল করতে পারেননি। বদলি ফিল্ডার ওয়েলিংটন মাসাকাদজা মুঠোয় জমান ক্যাচ।

১১৪ বলে ৮ চারে ১০২ রান করেন লিটন।

৪২ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ৬ উইকেটে ২০৯। ক্রিজে আফিফ হোসেনের সঙ্গী মেহেদী হাসান মিরাজ।

দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে লিটনের সেঞ্চুরি

সবশেষ আট ইনিংসে একবারও পার হতে পারেননি ২৫। তিনবার ফিরেন শূন্য রানে। বেশ চাপে থাকা লিটন দাস ঘুরে দাঁড়ালেন দলের খুব প্রয়োজনের সময়। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে করলেন সেঞ্চুরি, ওয়ানডেতে তার চতুর্থ।

৭৮ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়েছিলেন লিটন। নিজের মন্থরতম ফিফটির পর রানের গতি বাড়ান, পরের পঞ্চাশ আসে ৩২ বলে। ১১০ বলে ৮ চারে করেন সেঞ্চুরি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সবশেষ চার ইনিংসে তার তৃতীয়। 

৪০ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ৫ উইকেটে ১৯৯। লিটন ১০০ ও আফিফ হোসেন ১২ রানে ব্যাট করছেন।

মাহমুদউল্লাহর বিদায়ে ভাঙল জুটি

গড়ে উঠেছিল জুটি, কেটে গিয়েছিল চাপ। সময় ছিল রানের গতি বাড়ানোর। এমন সময়ে কট বিহাইন্ড হয়ে ফিরে গেলেন মাহমুদউল্লাহ। ভাঙল ১০৩ বল স্থায়ী ৯৩ রানের জুটি।

লুক জঙ্গুয়ের স্লোয়ার বাউন্সারে ঠিক মতো পুল করতে পারেননি অভিজ্ঞ এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। ব্যাটের কানা ছুঁয়ে জমা পড়ে তৎপর রেজিস চাকাভার গ্লাভসে। ৫২ বলে এক ছক্কায় ৩৩ রান করে মাহমুদউল্লাহ।

৩৬ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ৫ উইকেটে ১৬৮। ক্রিজে লিটন দাসের সঙ্গী আফিফ হোসেন।

চোট পেয়ে মাঠ ছাড়লেন মারুমা

ব্লেসিং মুজারাবানির বলে লিটন দাস খেললেন ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টের উপর দিয়ে। বলের জন্য কয়েক পা ছুটেই পড়ে গেলেন টিমাইসেন মারুমা। নিজে নিজে উঠতে পারেননি, ফিজিও মাঠে আসার পর দুই জনের সহায়তায় মাঠ ছাড়েন তিনি।

লিটন-মাহমুদউল্লাহর জুটিতে পঞ্চাশ

সাবধানী শুরুর পর রানের গতি বাড়াতে শুরু করেছেন লিটন দাস ও মাহমুদউল্লাহ। দুই জনের ব্যাটে বাংলাদেশ ম্যাচে পেয়েছে প্রথম পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটি।

পঞ্চম উইকেটে ৬৮ বলে এসেছে জুটির পঞ্চাশ। এতে লিটনের অবদান ৩১, মাহমুদউল্লাহর ১৭। ২ রান এসেছে অতিরিক্ত থেকে।

ছবি: জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট

লিটনের মন্থরতম ফিফটি

দলের প্রয়োজনে নিজের অনেক শটই গুটিয়ে রেখেছেন লিটন দাস। নিয়মিত উইকেট পতনের মধ্যে খেলছেন দায়িত্ব নিয়ে। সাবধানী ব্যাটিংয়ে করেছেন ফিফটি।

রায়ান বার্লকে কাভার দিয়ে বাউন্ডারি মেরে ৭৮ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন লিটন। ওয়ানডেতে এটাই তার মন্থরতম ফিফটি। আগের মন্থরতম ফিফটি ছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই। দুই দলের সবশেষ ওয়ানডেতে সিলেটে ১৭৬ রান করার পথে ৫৪ বলে ছুঁয়েছিলেন পঞ্চাশ।

২৯ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ৪ উইকেটে ১১৭। লিটন ৭৮ বলে ৫০ ও মাহমুদউল্লাহ ৩০ বলে ১৪ রানে খেলছেন।

মন্থর ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের একশ

দুই মেডেন ওভারে ব্যাটিং শুরু করা বাংলাদেশের রান তিন অঙ্কে গেছে ২৬তম ওভারে। দুই স্পিনার রায়ান বার্ল ও ওয়েসলি মাধেভেরে আক্রমণে আসার পর একটু স্বস্তি নিয়ে খেলছেন লিটন দাস ও মাহমুদউল্লাহ।

২৬ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ৪ উইকেটে ১০২। লিটন ৭০ বলে ৪৩ ও মাহমুদউল্লাহ ২০ বলে ৯ রানে ব্যাট করছেন।

দ্রুত ফিরলেন মোসাদ্দেক

প্রস্তুতি ম্যাচে দারুণ ব্যাটিং করা মোসাদ্দেক হোসেন এবার ব্যর্থ। রিচার্ড এনগারাভার বলে কিপারকে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন তিনি।

সময়ের দাবি ছিল, লিটন দাসের সঙ্গে একটি জুটি। সেটি করতে পারলেন না মোসাদ্দেক। সিম মুভমেন্টে ও বাউন্সে শুরু থেকে ভুগতে থাকা এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানের মাঝে দেখা গেল না লড়াইয়ের মানসিকতা।

এনগারাভার অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে আরও বেরিয়ে যাওয়া বলে কাট করেছিলেন মোসাদ্দেক। জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলা শটে পারেননি ঠিক মতো টাইমিং করতে। সহজ ক্যাচ মুঠোয় জমান রেজিস চাকাভা।

১৫ বলে ৫ রান করেন মোসাদ্দেক।

১৯ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ৪ উইকেটে ৭৪। ক্রিজে লিটনের সঙ্গী দলকে অনেকবার এমন বিপদ থেকে টেনে তোলা মাহমুদউল্লাহ।

বাজে শটে ফিরলেন মিঠুন

ক্রিজে যাওয়ার পর থেকে শট খেলছিলেন মোহাম্মদ মিঠুন। বাউন্ডারিও পাচ্ছিলেন নিয়মিত। কিন্তু সম্ভাবনাময় ইনিংসের ইতি টানলেন নিজেই, বাজে শটে ফিরলেন উইকেট বিলিয়ে।

টেন্ডার চাটারার টানা স্পেলের সপ্তম ওভার ছিল সেটি। অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ বল, অনেকটা জায়গায় দাঁড়িয়ে আয়েশী হয়ে খেলতে গিয়ে কিপারকে সহজ ক্যাচ দেন মিঠুন।

১৯ বলে চারটি চারে ১৯ রান করেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।

১৪ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ৩ উইকেটে ৫৭। ক্রিজে লিটন দাসের সঙ্গী মোসাদ্দেক হোসেন।

পাওয়ার প্লেতে তামিম-সাকিবের উইকেট

উইকেটে পেসারদের জন্য বেশ সুবিধা আছে। সিম মুভমেন্ট, বাড়তি বাউন্স মিলছে। এর মধ্যে রানের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তবে হারিয়ে ফেলেছে দুই ব্যাটিং ভরসা তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানের উইকেট।

১০ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ২ উইকেটে ৩৮ রান। লিটন দাস ২০ বলে ৭ ও মোহাম্মদ মিঠুন ৮ বলে ৫ রানে ব্যাট করছেন।

তামিম ও সাকিব দুই জনকেই ফেরান ব্লেসিং মুজারাবানি। শরীরের বেশ কাছের বল কাট করে কট বিহাইন্ড হন তামিম। ঝুঁকি নিয়ে খেলা সাকিব অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বাড়তি বাউন্স করা বলে ধরা পড়েন কাভারে।

শুরু থেকে সাবধানী লিটন। শট খেলছেন দেখেশুনে। গিয়েই বাউন্ডারি মেরে মিঠুন বুঝিয়ে দিয়েছেন, রানের গতি বাড়ানোর দিকেই থাকবে তার মনোযোগ।

সাকিবকেও হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ

ক্রিজে যাওয়ার পর থেকে শট খেলছিলেন সাকিব আল হাসান। বেশি শট খেলার প্রবণতাই কাল হলো বাঁহাতি এই অলরাউন্ডারের জন্য। ব্লেসিং মুজারাবানির বাড়তি লাফানো বলে ফিরে গেলেন ক্যাচ দিয়ে।

অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বলে কাট করেছিলেন সাকিব। একটু বাড়তি বাউন্স করে বেরিয়ে যাওয়া বল ঠিক মতো খেলতে পারেননি। ব্যাটের নিচের দিকে লেগে উঠে যায় ক্যাচ। কাভারে মুঠোয় জমান রায়ান বার্ল।

২৫ বলে তিন চারে ১৯ রান করেন সাকিব।

৯ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ২ উইকেটে ৩২। ক্রিজে লিটন দাসের সঙ্গী মোহাম্মদ মিঠুন।

সবচেয়ে বেশি শূন্য তামিমের

দলের প্রয়োজনে ঝুঁকি নিয়েই এই ম্যাচে খেলছেন তামিম ইকবাল। তবে ব্যাটিংয়ে দলকে মোটেও সহায়তা করতে পারেননি অধিনায়ক। বরং গড়লেন বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশিবার শূন্য রানে ফেরার বিব্রতকর রেকর্ড।

ওয়ানডেতে এ নিয়ে ১৯ বার রানের খাতা খোলার আগেই ফিরলেন তামিম। ১৮বার শূন্য রানে আউট হয়ে এই রেকর্ড এতো দিন যৌথভাবে তার সঙ্গে শীর্ষে ছিলেন সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার।

তিন সংস্করণ মিলিয়েও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশিবার শূন্য রানে আউট হলেন তামিম, ৩৪ বার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৩ বার রানের খাতা খোলার আগে আউট হয়েছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা।

শূন্যতেই শেষ তামিম

অনুমিতভাবেই শুরুতে বেশ সুবিধা পাচ্ছেন জিম্বাবুয়ের পেসাররা। সাবধানী ব্যাটিংয়ে প্রথম ওভার মেডেন খেলেন তামিম ইকবাল। পরের ওভারে তাকে অনুসরণ করেন লিটন দাস। তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে অধিনায়ককে হারায় বাংলাদেশ। স্কোর বোর্ডে তখনও ওঠেনি কোনো রান।

ব্লেসিং মুজারাবানির বল ছিল শরীরের বেশ কাছে। তবুও কাট করতে চেয়েছিলেন তামিম। ঠিকভাবে পারেননি বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। ব্যাটের কানা ছুঁয়ে জমা পড়ে কিপার রেজিস চাকাভার গ্লাভসে।

ক্রিজে গিয়ে প্রথম বলেই চমৎকার এক স্ট্রেট ড্রাইভে বাউন্ডারি মারেন সাকিব আল হাসান। তার সঙ্গে রানের খাতা খোলে বাংলাদেশও।

৩ ওভারে বাংলাদেশের রান ১ উইকেটে ৫।

পিচ

উইকেটে ঘাসের ছোঁয়া আছে। গত কয়েকদিনে হারারেরে ঠাণ্ডা বেশ, গত রাতে বৃষ্টিও হয়েছে। উইকেটে সিম মুভমেন্ট মিলবে, প্রথম ঘণ্টায় পেসারদের সহায়তা থাকবে।

তবে ফুল লেংথের জায়গায়, ব্যাটসম্যানের কাছাকাছি জায়গাগুলোতে ঘাস নেই। বল ব্যাটে আসবে ভালোভাবে। পিচ রিপোর্টে ধারাভাষ্যকার টিনো মায়োয়ো বললেন, শুরুর ঘণ্টার পর ক্রমে উইকেট ব্যাটিং সহায়ক হয়ে উঠবে। দ্বিতীয় ইনিংসে খুব ভালো ব্যাটিং উইকেট হয়ে উঠবে।

জিম্বাবুয়ে দলে দুই অভিষিক্ত

অসুস্থতা থেকে সেরে উঠে দলে ফিরলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে আরও অপেক্ষা করতে হচ্ছে সিকান্দার রাজাকে। প্রথম ম্যাচে দলে জায়গা হয়নি এই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডারের। ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক হচ্ছে টাডিওয়ানাশে মারুমানি ও ডিওন মায়ার্সের।

জিম্বাবুয়ে দল: ব্রেন্ডন টেইলর, রায়ান বার্ল, রেজিস চাকাভা, টেন্ডাই চাতারা, লুক জঙ্গুয়ে, টিমাইসেন মারুমা, টাডিওয়ানাশে মারুমানি, ব্লেসিং মুজারাবানি, ডিওন মায়ার্স, রিচার্ড এনগারাভা, ওয়েসলি মাধেভেরে।

চোটের জন্য নেই মুস্তাফিজ

প্রস্তুতি ম্যাচে চোট পাওয়া মুস্তাফিজুর রহমানকে প্রথম ওয়ানডেতে পাচ্ছে না বাংলাদেশ। তাসকিন আহমেদ ও মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের সঙ্গে তৃতীয় পেসার হিসেবে আছেন শরিফুল ইসলাম।

বেশ আলোচনা হলেও বাইরেই থাকতে হচ্ছে কিপার-ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহানকে।

বাংলাদেশ দল: তামিম ইকবাল, লিটন কুমার দাস, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ, মোসাদ্দেক হোসেন, মোহাম্মদ মিঠুন, আফিফ হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন, তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম।

টস

প্রথম ওয়ানডেতে টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েছেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলর। বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল জানান, টস জিতলে তিনিও ফিল্ডিং নিতেন।

জয়ে শুরুর দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ

দুই দলের একমাত্র টেস্টটি আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ ছিল না। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকেও হয়তো সেই অর্থে চাওয়া-পাওয়ার তেমন কিছু নেই। তবে মাঝের ওয়ানডে সিরিজটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এই তিন ম্যাচ আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগের অংশ। যা আদতে বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব।

হারারে স্পোর্টস ক্লাবে শুক্রবার প্রথম ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়ের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টায়।

লক্ষ্য তো অবশ্যই সর্বোচ্চ ৩০ পয়েন্ট। তবে বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল এগোতে চান ধাপে ধাপে। সেই পথে তার চাওয়া, শুরুটা ভালো করা।

“খেলাটা ক্রিকেট। সুপার লিগে বাংলাদেশ এখন দ্বিতীয় স্থানে আছে। কিন্তু এখন তো বড় দলগুলি হারছে…। আমার মনে হয়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে, শুরুটা ভালো করা। আগে ব্যাটিং করি বা বোলিং, শুরু ভালো করতে হবে। এরপর যতটা সম্ভব, সবকিছু ঠিকঠাক করতে হবে ভালো কিছু পেতে হলে।”