দারুণ ফিফটিতে প্রস্তুতি সারলেন তামিম

হাঁটুর চোট পুরোপুরি সারেনি বলে জিম্বাবুয়ে সফরের একমাত্র টেস্টে খেলতে পারেননি তামিম ইকবাল। তবে হাঁটুতে টেপ পেঁচিয়ে হলেও ওয়ানডে সিরিজে খেলতে চান বলে জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়ক। প্রস্তুতি ম্যাচে দেখালেন, অনেকটা সময় ক্রিজে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না তার। জিম্বাবুয়ে নির্বাচিত একাদশের বিপক্ষে পঞ্চাশ ওভারের প্রস্তুতি ম্যাচে খেললেন দারুণ ইনিংস। অলরাউন্ড নৈপুণ্যে আলো ছড়ালেন মোসাদ্দেক হোসেন।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 July 2021, 12:02 PM
Updated : 14 July 2021, 06:09 PM

রান পেয়েছেন সাকিব আল হাসান ও মোহাম্মদ মিঠুনও। হারারেতে বুধবার ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৯৬ রান তোলে বাংলাদেশ। জবাবে স্বাগতিকরা ১৩০ রানেই হারায় ৭ উইকেট। ৪০.১ ওভারে তারা ৭ উইকেটে ১৮৯ রান তোলার পর আলোকস্বল্পতায় আর খেলা সম্ভব হয়নি।

এই পরিস্থিতিতে ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত, তবে ব্যবধান জানা যায়নি।

ইনিংস শুরু করে ৬২ বলে ৬৬ রান করেন তামিম। ৯৬ মিনিট ক্রিজে থেকে ১১ চার ও একটি ছক্কায় গড়া তার ইনিংস। ত্রিশ ছাড়ানো ইনিংস এসেছে সাকিব, মিঠুন ও মোসাদ্দেকের ব্যাট থেকে। অন্যদের সুযোগ দিতে স্বেচ্ছায় ব্যাটিং ছেড়ে দেন মিঠুন ও মোসাদ্দেক।

ব্যাটিংয়ে ৩০ বলে ৩৬ রানের পর হাত ঘুরিয়ে ১৬ রানে ২ উইকেট নেন মোসাদ্দেক। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও ইবাদত হোসেনেরও প্রাপ্তি ২টি করে উইকেট। উইকেট না পেলেও ভালো বোলিং করেন স্পিনার তাইজুল ইসলাম। জিম্বাবুয়ের হয়ে সাত নম্বরে নেমে ৫৯ রানে অপরাজিত থাকেন টিমাইসেন মারুমা।

প্রস্তুতি ভালো হলেও বাংলাদেশের দুর্ভাবনা মুস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে। প্রথম ওভারে পাঁচ বল করার পর ডান পায়ের গোড়ালিতে অস্বস্তি বোধ করায় আর বোলিং করেননি বাঁহাতি এই পেসার। কোনো ঝুঁকি না নিয়ে তাকে তুলে নেওয়া হয় মাঠ থেকে।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের হয়ে সাবধানী শুরু করেন তামিম ও মোহাম্মদ নাঈম শেখ। প্রথম পাঁচ ওভারে দুজন তোলেন ১৬ রান। এরপর বাড়ে রানের গতি। ১০ ওভারে শেষে দলের রান ছিল ৪৭।

একটা পর্যায়ে তামিমের রান ছিল ৩৪ বলে ১৯। এরপর মুখোমুখি পাঁচ বলে তিনি মারেন চারটি চার ও একটি ছক্কা। এর মধ্যে দ্বাদশ ওভারে পেসার ফারাজ আকরামের টানা চার বলে চারটি।

বাউন্ডারিতে তামিম ফিফটি পূরণ করেন ৪৬ বলে। তবে নাঈম খেলেন ধীরলয়ে। তরুণ এই ব্যাটসম্যান ৫২ বলে ২৫ রান করে তানাকা চিভানগার বলে ক্যাচ দিলে ভাঙে ৮৭ রানের উদ্বোধনী জুটি।

এরপর বেশিক্ষণ টেকেননি তামিমও। ষষ্ঠ বোলার হিসেবে প্রথমবার আক্রমণে এসে তাকে সিকান্দার রাজার ক্যাচে পরিণত করেন ওয়েসলি মাধেভেরে। এই অফ স্পিনারের পরের ওভারে বেরিয়ে এসে খেলার চেষ্টায় স্টাম্পড হন চার নম্বরে নামা লিটন দাস। তিনি যেতে পারেননি দুই অঙ্কে।

এরপর জুটি বাঁধেন সাকিব ও মিঠুন। ৪২ বলে ৫ চার ও একটি ছক্কায় ৩৯ রান করে স্বেচ্ছাবসরে যান মিঠুন। ফারাজের বলে আউট হওয়ার আগে ৬০ বলে একটি চারে ৩৭ রান করেন তিনে নামা সাকিব।

রান বাড়ানোর কাজ করেন এরপর মোসাদ্দেক ও আফিফ হোসেন। ৩০ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৩৬ রান করে স্বেচ্ছায় ব্যাটিং ছাড়েন মোসাদ্দেক। চিভানগার বলে এলবিডব্লিউ হওয়া আফিফ ২৩ বলে ৩ চার ও একটি ছক্কায় করেন ২৮।

শেষ দিকে নুরুল হাসান সোহানের ১২ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ১৮ ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের ১০ বলে অপরাজিত ১২ রানের সৌজন্যে তিনশর কাছাকাছি যায় বাংলাদেশের সংগ্রহ।

বোলিংয়ে বাংলাদেশের প্রথম সাফল্য আসে সাইফউদ্দিনের হাত ধরে। চতুর্থ ওভারে এই পেসারকে টানা দুই চার মারার পর কিপার সোহানকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মাধেভেরে। পরের ওভারে আরেক ওপেনার টাডিওয়ানাশে মারুমানিকে ফেরান শরিফুল ইসলাম।

চারে নেমে দ্রুত রান তুলছিলেন বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদ পাওয়া ডিওন মায়ার্স। ১৩তম ওভারে জোড়া আঘাত হানেন ইবাদত। শেষ দুই বলে ফিরিয়ে দেন মায়ার্স ও টিনাশে কামুনহুকামউইকে। ২৯ বলে ৮ চারে ৪২ রান করেন মায়ার্স।

থিতু হয়ে ইনিংস বড় করতে পারেননি চামু চিবাবা (৫১ বলে ১৭) ও রাজা (৪০ বলে ২৪)। চিবাবাকে ফিরিয়ে দ্বিতীয় শিকার ধরেন সাইফউদ্দিন। মোসাদ্দেক নিজের পরপর দুই ওভারে ফেরান রাজা ও রায়ান বার্লকে।

তখন ১৩০ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে অল্পতে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়েছিল জিম্বাবুয়ে। তবে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন মারুমা। আফিফকে টানা দুই ছক্কায় ফিফটি পূরণ করেন তিনি ৫৫ বলে।

পরের ওভারে ইবাদতকে মারুমা বাউন্ডারি মারার পর আর খেলা হয়নি। ৫৯ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৫৯ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি।

আগামী শুক্রবার হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে হবে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৯৬/৬ (তামিম ৬৬, নাঈম ২৫, সাকিব ৩৭, লিটন ২, মিঠুন ৩৯ (স্বেচ্ছাবসর), মোসাদ্দেক ৩৬ (স্বেচ্ছাবসর), আফিফ ২৮, সোহান ১৮, সাইফউদ্দিন ১২*, মিরাজ ৫*; নিয়াউচি ১০-০-৫৩-০, ফারাজ ১০-০-৭৩-২, চিভানগা ৮-১-৪৪-২, চিসোরো ৬-০-২৯-০, বার্ল ৮-০-৫৯-০, মাধেভেরে ৪-০-১২-২, মাসাকাদাজা ৪-০-১৭-০)

জিম্বাবুয়ে নির্বাচিত একাদশ: ৪০.১ ওভারে ১৮৯/৭ (মাধেভেরে ১৪, মারুমানি ৯, চিবাবা ১৭, মায়ার্স ৪২, কামুনহুকামউই ০, রাজা ২৪, মারুমা ৫৯*, বার্ল ২, মুটুমবামি ১৬*; মুস্তাফিজ ০.৫-০-৫-০, মোসাদ্দেক ৬.১-১-১৬-২, সাইফউদ্দিন ৭-০-৩৩-২, শরিফুল ৭-০-৩৯-১, তাইজুল ৮-১-৩০-০, ইবাদত ৭.১-০-৩৭-২, আফিফ ৪-০-২৬-০)।