আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনও তিনি দেননি। তবে টেস্টের তৃতীয় দিনেই সতীর্থদের কাছে নিজের ইচ্ছের কথা জানিয়েছেন বলে গুঞ্জন চলছে। ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়ায় ফুটে উঠছে গুঞ্জন সত্যি হওয়ারই প্রতিচ্ছবি। টিভি ধারাভাষ্যকাররাও নিশ্চিত করলেন, টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিচ্ছেন ৩৫ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার।
এই ম্যাচ দিয়েই তিনি ফেরেন টেস্ট ক্রিকেটে। প্রায় দেড় বছর পর ফিরে খেলেন ১৫০ রানের অসাধারণ ইনিংস। বলা হচ্ছিল তার টেস্ট ক্যারিয়ারের পুনর্জন্ম। অথচ এই ম্যাচ দিয়েই তিনি লিখে ফেললেন সাদা পোশাকের এপিটাফ। নিজের ৫০তম টেস্টই হয়ে রইল তার ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট।
বাদ পড়া, ফেরা, সেঞ্চুরি করা ও অবসর, সব মিলিয়ে তার ক্যারিয়ারের শেষ ভাগটা হয়ে রইল দারুণ নাটকীয়। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তান সফরে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে বাজে শটে আউট হওয়ার পর দল থেকে বাদ পড়েন তিনি। ওই ইনিংসের আগের ৮ ইনিংসেও ছিল না তার ফিফটি। পরে বিসিবির লাল বলের কেন্দ্রীয় চুক্তিতেও জায়গা হয়নি তার।
১৭ মাস পর এবার সুযোগ মেলে জিম্বাবুয়ে সফরের আগে। প্রথমে ঘোষিত টেস্ট স্কোয়াডে যদিও ছিল না তার নাম। তবে তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমের চোট শঙ্কার কারণে অভিজ্ঞতার বিবেচনায় দলে যুক্ত করা হয় মাহমুদউল্লাহকে। এরপর হারারে টেস্টে সুযোগ পান অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে।
টেস্টের প্রথম দিন যখন উইকেটে যান, ১৩২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে তখন কাঁপছে বাংলাদেশ। সেই অবস্থা থেকে দলকে উদ্ধার করায় বড় ভূমিকা রাখেন তিনি। ক্যারিয়ার সেরা ১৫০ রানের ইনিংসে দলকে এনে দেন বড় স্কোর।
এরপর যখন তার টেস্ট ক্যারিয়ারে নতুন গতি পাওয়ার কথা, তিনিই তা থমকে দিলেন। ২০০৯ সালের জুলাইয়ে বোলিংয়ের চমক দিয়ে যে ক্যারিয়ার শুরু, এক যুগ পর আরেক জুলাইয়ে তা শেষ হলো ব্যাটিং কীর্তিতে।
তখন তিনি পুরোপুরি অলরাউন্ডার। ব্যাট করছিলেন ৮ নম্বরে, সঙ্গে বোলিং। ব্যাটিংয়ের সাফল্যের জন্য খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্টে প্রথম ফিফটির দেখা পান ভারতের বিপক্ষে চট্টগ্রামে। পরের টেস্টে খেলেন ৯৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। ওই সিরিজে তার ব্যাটিং দেখেই ভারতীয় কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কার তাকে বলেন বিশ্বের সেরা ৮ নম্বর ব্যাটসম্যান।
পরের সিরিজেই প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ পান নিউ জিল্যান্ড সফরে হ্যামিল্টনে। তাতে ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন মেলে ওই বছরই। পাঁচে উঠেও শুরুটা খারাপ করেননি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টে করেন দুটি ফিফটি।
এরপর থেকে আর মেলেনি খুব ধারাবাহিকতা। মাঝেমধ্যে দু-একটি ফিফটি, বারবার থিতু হয়ে আউট হওয়া, এই ছিল নিয়মিত চিত্র। জায়গা নিয়ে প্রশ্নও ওঠে। বিশেষ করে ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের সময়টায় ২৩ ইনিংসে তার ফিফটি ছিল কেবল ৩টি। তবু একটু ব্যাটিং, একটু বোলিং মিলিয়ে আর সীমিত ওভারে ভালো পারফরম্যান্স মিলিয়ে দলে টিকে যান।
এরপর বাদ পড়ার দুয়ারে চলে যান বার দুয়েক। প্রতিবারই শেষ সময়ে ভালো করে টিকে যান। ৮ বছরের সেঞ্চুরি খরা কাটিয়ে অবশেষে দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা পান ২০১৮ সালের নভেম্বরে। তার টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা সময়ও তখন থেকেই। চার টেস্টের মধ্যে তিনটি সেঞ্চুরি করেন।
২০১৯ সালে নিউ জিল্যান্ড সফরে হ্যামিল্টনে সেঞ্চুরি ও পরের টেস্টে ওয়েলিংটনে করেন ফিফটি। এরপরই আবার ব্যর্থতার ধারা, পাকিস্তানে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে ওই শট, বাদ পড়া এবং এবার ফেরা, রাঙানো ও বিদায়।
সব মিলিয়ে ৫০ টেস্টে ৫ সেঞ্চুরি ও ১৬ ফিফটিতে ২ হাজার ৯১৪ রান করেছেন ৩৩.৪৯ ব্যাটিং গড়ে। শেষ দিনের আগে বোলিংয়ে উইকেট ৪৩টি, অভিষেক টেস্টের সেই বোলিংই একমাত্র ৫ উইকেট।
এই পরিসংখ্যান বলছে, খুব সমৃদ্ধ নয় তার টেস্ট ক্যারিয়ার। বাংলাদেশের বাস্তবতায় যদিও খুব খারাপ নয়। তবে শুরুতে যে সম্ভাবনার ছাপ রেখেছিলেন, সময়ের সঙ্গে যে প্রত্যাশা বেড়েছে তার কাছে কিংবা তিনি নিজেও হয়তো যে উচ্চতায় দেখতে চেয়েছেন নিজেকে, চাওয়া-পাওয়াগুলো মেলেনি এক বিন্দুতে।