টেইলরের ঝড় থামিয়ে জয়ের আশায় বাংলাদেশ

প্রথম ইনিংসের ব্যাটিং যদি হয় ওয়ানডের গতিতে, দ্বিতীয় ইনিংস যেন টি-টোয়েন্টির গতিতে! লক্ষ্য পবর্তসম, কিন্তু ব্রেন্ডন টেইলর ছুটলেন ভয়ডরহীন পদক্ষেপে। তবে অতি রোমাঞ্চের নেশাই কাল হলো তার। জিম্বাবুয়ের অধিনায়ককে থামিয়ে জয়ের আশা বাড়াল বাংলাদেশ।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 July 2021, 03:08 PM
Updated : 10 July 2021, 03:08 PM

হারারের টেস্টের চতুর্থ দিন বিকেলে টেইলর এগোচ্ছিলেন ঝড়ো সেঞ্চুরির দিকে। কিন্তু শতরানের আগেই তিনি থমকে যান। এরপর ধৈর্যের প্রতিমূর্তি হয়ে থাকা টাকুদজোয়ানাশে কাইটানোকে শেষ বিকেলে ফিরিয়ে বাংলাদেশ দিন শেষ করে স্বস্তিতে।

জয়ের জন্য শেষ দিনে বাংলাদেশের প্রয়োজন ৭ উইকেট। জিম্বাবুয়ের প্রয়োজন ৩৩৭ রান।

দিনের প্রথম ভাগে সাদমাম ইসলাম ও নাজমুল হোসেন শান্তর সেঞ্চুরিতে জিম্বাবুয়েকে বড় লক্ষ্যের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয় বাংলাদেশ।

প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিতে ১৯৬ বলে ১১৫ রানে অপরাজিত থাকেন সাদমান। দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরিতে ১১৮ বলে অপরাজিত ১১৭ করেন শান্ত। দুজনে গড়েন ১৯১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি, দেশের বাইরে যা দ্বিতীয় উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ।

১ উইকেটে ২৮৪ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসের ১৯২ রান মিলিয়ে লিড দাঁড়ায় ৪৭৬ রানের।

২১ বছরের টেস্ট ইতিহাসে এই প্রথম সাড়ে চারশ রানের বেশি লক্ষ্য দিতে পারল বাংলাদেশ।

জিম্বাবুয়ে দিন শেষ করে ৩ উইকেটে ১৪০ রানে।

প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়েকে ধসিয়ে দেওয়ার দুই নায়ক সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ দুই প্রান্ত থেকে শুরু করেন বোলিং। প্রথম ৫ ওভারে সাফল্য না আসায় ষষ্ঠ ওভারে আক্রমণে তাসকিন আহমেদ। দ্বিতীয় বলেই উইকেট!

লেংথ থেকে লাফানো গতিময় এক ডেলিভারিতে তৃতীয় স্লিপে ক্যাচ দেন মিল্টন শুম্বা।

এরপরই শুরু টেইলরের পাল্টা আক্রমণ। প্রথম বলেই নান্দনিক ড্রাইভে চার মারার পর জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক ছুটতে থাকেন অপ্রতিরোধ্য গতিতে। কাইটানোর সঙ্গে অদ্ভুতুড়ে এক জুটি গড়ে ওঠে তার।

জুটিতে দেখা যায় চূড়ান্ত বৈপরীত্য। টেইলরের ব্যাটে ছোটে স্ট্রোকের ফোয়ারা, কাইটানোর ব্যাটে রানের নামই নেই। যেন উইকেটেই পেতে ফেলেন শয্যা!

তাসকিনের এক ওভারে তিন বাউন্ডারি, আরেক ওভারে দুটি, সাকিব-মিরাজের ওভারে জোড়ায় জোড়ায় বাউন্ডারিতে টেইলর ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেন ৩৩ বলেই। জুটিরও তখন পঞ্চাশ, কাইটানোর ব্যাটে যে একটি রানও নেই!

অবশেষে ইনিংসের ১৮তম ওভারে ইবাদত হোসেনের বলে সিঙ্গেল শূন্যের সঙ্গে বন্ধন কাটে কাইটানোর। প্রথম রানের দেখা পান ৩৮ বল খেলে!

টেইলর এগিয়ে যান শতরানের পথে। দারুণ সব ক্রিকেট শটের পাশাপাশি ঝুঁকির পথও বেছে নেন তিনি লফটেড শট, রিভার্স সুইপ, স্কুপ খেলে।

তবে প্রথম ইনিংসের মতো এবারও হয়নি তার সেঞ্চুরি। এবারও আউট সেই মিরাজের বলেই।

ঝুলিয়ে দেওয়া ফুল লেংথ বলটিতে আলতো পুশ করে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে হতাশায় নুয়ে পড়েন টেইলর। তার নামের পাশে তখন ১৬ চারে ৭৩ বলে ৯২ রান!

বাংলাদেশের বিপক্ষে আগে দুই দফায় এক টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি আছে তার। এবার হাতছাড়া করলেন দুই ইনিংসেই। প্রথম ইনিংসে মিরাজের বলে আউট হন ৯২ বলে ৮১ করে।

দ্বিতীয় উইকেটে ৯৫ রানের জুটিতে কাইটানোর অবদান কেবল ২!

টেইলরের আগেই অবশ্য কাইটানোকে ফেরাতে পারত বাংলাদেশ। তার ১ রানে মিরাজের বলে যে ক্যাচটি ছাড়লেন ইবাদত, এর চেয়ে সহজ ক্যাচ কমই মেলে।

শেষ পর্যন্ত দারুণ এক আর্ম ডেলিভারিতে কাইটানোর দেয়াল ভাঙেন সাকিব। ১৪৬ মিনিট ক্রিজে কাটিয়ে ১০২ বলে ৭ রানে ফেরেন অভিষিক্ত ওপেনার।

আরেক অভিষিক্ত ডিওন মায়ার্স অবশ্য ইতিবাচক ব্যাটিংয়ের কিছু ঝলক দেখান। ছক্কা মারেন তিনি মিরাজ-সাকিব, দুজনের বলেই। দিন শেষেও আছেন অপরাজিত।

তবে টেইলের বিদায়ের পর অনভিজ্ঞ ব্যাটিং লাইন আপকে শেষ দিনে অল্পতে গুটিয়ে দেওয়ার আশা করতেই পারে বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৪৬৮

জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ২৭৬

বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: (আগের দিন ৪৫/০) ৬৭.৪ ওভারে ২৮৪/১ (ডি.)(সাদমান ১১৫*, সাইফ ৪৩, শান্ত ১১৭*; মুজারাবানি ১২-৪-২৭-০, এনগারাভা ৯-০-৩৬-১, টিরিপানো ১১-২-৩৩-০, নিয়াউচি ১০-১-৩৬-০, শুম্বা ১২.৪-০-৬৭-০, কাইয়া ১৩-২-৮৪-০)।

জিম্বাবুয়ে ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৪৭৭) ৪০ ওভারে ১৪০/৩ (শুম্বা ১৫, কাইটানো ৭, টেইলর ৯২, মায়ার্স ১৮*, টিরিপানো ৭*; সাকিব ১২-৪-২৩-১, মিরাজ ১৪-২-৪৫-১, তাসকিন ৭-০-৩৯-১, ইবাদত ৩-০-১৯-০, মাহমুদউল্লাহ ৪-০-৯-০)।