হারারে টেস্টের তৃতীয় দিনে শেষ সেশনে ২৭৬ রানে শেষ জিম্বাবুয়ের প্রথম ইনিংস। বাংলাদেশ শুক্রবার দিন শেষ করে দ্বিতীয় ইনিংসে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৪৫ রান তুলে।
প্রথম ইনিংসের ১৯২ রানের লিড দিন শেষে বেড়ে হয়েছে ২৩৭।
বাংলাদেশে বিশাল লিড এনে দেওয়ার মূল দুই কারিগর মিরাজ ও সাকিব। মাত্র চার বোলারের একাদশ, দুই স্পিনারের ওপর তাই নির্ভরতা ছিল অনেক বেশি। ভরসার প্রতিদান দারুণভাবে দেন দুজন। দুজনে মিলে নেন ৯ উইকেট।
৮২ রানে ৫ উইকেট নিয়ে সফলতম বোলার মিরাজ। সমান রান দিয়েই সাকিবের উইকেট ৪টি।
দুই স্পিনারের দারুণ বোলিংয়ে ১৫ রানে শেষ ৫ উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে।
বাকি একটি উইকেট তাসকিন আহমেদের। তার বোলিং ফিগার যা বলছে, তার চেয়ে অনেক ভালো ছিল তার বোলিং। দিনজুড়ে ব্যাটসম্যানদের সবচেয়ে বেশি অস্বস্তিতে ফেলেছেন তিনিই।
অভিষিক্ত ওপেনার টাকুদজোয়ানাশে কাইটানোর অসাধারণ মনোসংযোগ আর ব্রেন্ডন টেইলরের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে একসময় খুব ভালো অবস্থানে ছিল জিম্বাবুয়ে। রান ছিল এক পর্যায়ে ২ উইকেটে ২২৫। কিন্তু অনভিজ্ঞ ব্যাটিং লাইন পরে টিকতে পারেনি বাংলাদেশের স্পিনের সামনে।
কাইটানো ও টেইলরের জুটি দ্বিতীয় দিন বিকেলেই জিম্বাবুয়েকে গড়ে দেয় শক্ত ভিত। তৃতীয় দিনও এই জুটি অনেক দূর এগিয়ে নেয় দলকে।
পেস-স্পিন সব অনায়াসেই সামলে টেইলর ওয়ানডের গতিতে বাড়াতে থাকেন রান। কাইটানো আগলে রাখেন এক প্রান্ত। জুটি পেরিয়ে যায় শতরান।
এই জুটি থামাতে পারে বাংলাদেশ টেইলরের উপহার পেয়ে। মিরাজের বলে স্লগ করতে গিয়ে টেইলর আউট হন ৯২ বলে ৮১ রান করে।
প্রথম সেশনে ৯৫ রান দিয়ে বাংলাদেশের প্রাপ্তি ছিল ওই এক উইকেটই।
বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু দ্বিতীয় সেশন থেকে। কাইটানো ও আরেক অভিষিক্ত ডিওন মায়ার্সের জুটি যদিও জমে গিয়েছিল। তবে সাকিবের লেগ স্টাম্পের বাইরের বল সুইপ করে উইকেট ছুঁড়ে আসেন ২৭ রান করা মায়ার্স।
দ্বিতীয় নতুন বলের ঠিক আগে ওই উইকেটের পর নতুন বলে সাফল্য ধরা দেয় আরও দুটি। সাকিবকে সুইপ করতে গিয়ে টিমাইসেন মারুমা এলবিডব্লিউ হন ১৭ বলে শূন্য করে। তাসকিন আহমেদের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে রয় কাইয়া ফেরেন শূন্যতে।
দ্বিতীয় সেশনে ১৯ ওভারে মাত্র ৩৫ রান দেয় বাংলাদেশ, উইকেট আসে ৩টি।
কাইটানো তখনও টিকে বাংলাদেশের সামনে বড় বাধা হয়ে। সব ঝড়-ঝাপটা সামলে এক প্রান্ত আগলে রাখার প্রতিজ্ঞা নিয়ে যেন নেমেছিলেন তিনি। এবার জুটি গড়ার চেষ্টা করেন রেজিস চাকাভার সঙ্গে।
জিম্বাবুয়ের হয়ে অভিষেকে সর্বোচ্চ ইনিংস খেলা ওপেনার এখন কাইটানোই। পেছনে পড়ে গেছে ১৯৯২ সালে করা গ্রান্ট ফ্লাওয়ারের ৮২।
কাইটানো বিদায়ের পর হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে ইনিংস। লোয়ার অর্ডারে ছোবল দেন মিরাজ। ততক্ষণে উইকেটে স্পিন ধরছে বেশ। বাউন্সও হয় কিছুটা অসমান। কাজে লাগান মিরাজ।
তার তীক্ষ্ণ টার্ন করে ভেতরে ঢোকা বলে এলবিডব্লিউ ডোনাল্ড টিরিপানো। পরে ভিক্টর নিয়াউচিকে যখন বোল্ড করলেন তিনি, ফলো-অন এড়তে জিম্বাবুয়ের তখনও লাগে ৬ রান। উইকেট বাকি ২টি।
শেষ পর্যন্ত তা এড়াতে পারে জিম্বাবুয়ে। কিন্তু বেশিদূর আর যাওয়া হয়নি। ব্লেসিং মুজারাবানিকে বোল্ড করে মিরাজ পেয়ে যান ৫ উইকেট।
২৭ টেস্টে ৫ উইকেট পেলেন তিনি অষ্টমবার, দেশের বাইরে দ্বিতীয়বার।
সাকিব বিদায় করে দেন শেষ ব্যাটসম্যানকে। ৩১ রানে অপরাজিত রেজিস চাকাভা অসহায় তাকিয়ে দেখেন সতীর্থদের বিদায়।
পরে ব্যাটিংয়ে নেমেও বাংলাদেশ দিনটা শেষ করে স্বস্তিতে। সাদমান ইসলাম ও সাইফ হাসান কাটিয়ে দেন দিনের ১৭ ওভার।
সাইফ অবশ্য ১১ রানে বেঁচে যান জোরালো আবেদন থেকে। ডোনাল্ড টিরিপানোর বল পুল করতে গিয়ে লেগেছিল তার পায়ে। আম্পায়ার আউট দেননি, রিপ্লে দেখে আউট বলেই মনে হয়েছে। এই টেস্টে নেই রিভিউ।
টেস্ট দলে জায়গা বাঁচিয়ে রাখার লড়াইয়ে থাকা ওপেনার দিন শেষ করেন ২০ রানে। সাদমান অপরাজিত ২২ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৪৬৮
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: (আগের দিন ১১৪/১) ১১১.৫ ওভারে ২৭৬ (কাইটানো ৮৭, টেইলর ৮১, মায়ার্স ২৭, মারুমা ০, কাইয়া ০, চাকাভা ৩১*, টিরিপানো ২, নিয়াউচি ০, মুজারাবানি ২, এনগারাভা ০*; তাসকিন ২৪-১০-৩৬-১, ইবাদত ২১-৮-৫৮-০, সাকিব ৩৪.৫-১০-৮২-৪, মিরাজ ৩১-৫-৮২-৫, মুমিনুল ১-০-৩-০)।
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ১৭ ওভারে ৪৫/০ (সাদমান ২২*, সাইফ ২০*; মুজারাবানি ৫-৩-৬-০, এনগারাভা ১-০-৭-০, টিরিপানো ৪-০-১২-০, নিয়াউচি ৩-১-১০-০, শুম্বা ৩-০-৮-০, কাইয়া ১-০-২-০)।