মাহমুদউল্লাহর অবদান কতটা, জানালেন তাসকিন

কঠিন পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যাটসম্যানই ছিলেন ক্রিজে। তিনি ভালো করেই জানেন টেলএন্ডার ব্যাটসম্যানদের নিয়ে কীভাবে গড়ে তুলতে হয় জুটি। সেই মাহমুদউল্লাহ আবারও তাই করে দেখালেন। রেকর্ড গড়া জুটিতে টানলেন দলকে। দিনের খেলা শেষে তাসকিন আহমেদ জানালেন, তার ইনিংসে কতটা অবদান অভিজ্ঞ এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানের।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 July 2021, 06:43 PM
Updated : 8 July 2021, 06:43 PM

হারারে টেস্টের প্রথম দিন এক পর্যায়ে ১৩২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ। লিটন দাসের সঙ্গে ১৩৮ রানের জুটিতে ধাক্কা সামাল দিয়ে দলকে টানেন মাহমুদউল্লাহ। এরপর আবার জোড়া ধাক্কায় তিনশ রানের নিচেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে দল। ডনাল্ড টিরিপানোর হ্যাটট্রিক ঠেকিয়ে দেওয়া তাসকিনের সঙ্গে ১৯১ রানের জুটিতে দলকে পাঁচশ রানের কাছে নিয়ে যান মাহমুদউল্লাহ।

প্রথম ইনিংসে ৪৬৮ রান করেছে বাংলাদেশ। স্বীকৃত ক্রিকেটে প্রথম ফিফটিতে ৭৫ রান করেন তাসকিন। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে ১৫০ রানে অপরাজিত থাকেন মাহমুদউল্লাহ।

প্রথম দিন শেষে সফরকারীদের চাওয়া ছিল, শেষ দুই ব্যাটসম্যান যতটা সময় পারে মাহমুদউল্লাহকে যেন সঙ্গ দেয়। দ্বিতীয় দিনের শুরুতে টিভি সাক্ষাৎকারে লিটন দাস বলেন, শেষ দুই জুটির কাছে দলের চাওয়া আর ৫০-৬০ রান। চাওয়ার তুলনায় প্রাপ্তি প্রায় তিন গুণ। শেষ ২ উইকেট হারিয়ে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ যোগ করে ১৭৪ রান! এতে দারুণ অবদান রাখা তাসকিন দিনের খেলা শেষে বিসিবির পাঠানো ভিডিও বার্তায় শোনালেন, তার ইনিংসে মাহমুদউল্লাহর অবদান কতটা।

“আজকে এটাই আমার মাথায় ছিল, দলের জন্য কিছু করতে হবে। যেহেতু (মাহমুদউল্লাহ) রিয়াদ ভাই ক্রিজে ছিলেন, টেলএন্ডার হিসেবে আমার মূল লক্ষ্যই ছিল তাকে সহায়তা করা। তিনি আমাকে কথা বলে, বলে খেলাচ্ছিলেন। মূল লক্ষ্য ছিল স্টাম্পের বলটা যেন দেখে খেলা হয়। রিয়াদ ভাই বারবার সেটা মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন। আমি আমার জোনে যখনই বল পেয়েছি, মারার চেষ্টা করেছি, ওগুলো বাউন্ডারি হয়েছে। তবে আমি দলের জন্যই খেলার চেষ্টা করেছি।”

প্রথম দিনের উইকেটে থাকা সুবিধার ছিটেফোটাও ছিল না দ্বিতীয় দিনে। বাংলাদেশের বোলারদের সামনে কী বিপদ অপেক্ষা করছে, ব্যাটিংয়ের সময়ই বুঝতে পেরেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। তাই তাসকিনকে বারবার তাগিদ দিচ্ছিলেন যত সম্ভব রানটা বড় করার জন্য।

“প্রথম দিনের প্রথম সেশন ছাড়া, পরের দিকের উইকেট অনেক ভালো হয়ে গিয়েছিল। রিয়াদ ভাইসব সময় বলছিলেন, উইকেট আস্তে আস্তে ভালো হয়ে যাচ্ছে, তো রান করা খুব গুরুত্বপূর্ণ, যেন বোলারদের হেল্প হয়। ওইটাই মাথায় ছিল। রিয়াদ ভাই বলছিল, উল্টা-পাল্টা না খেলার জন্য, সোজা ব্যাটে খেলার জন্য। তো আমিও সেটাই অনুসরণ করছিলাম। যেহেতু আমি বোলার, মাঝে মধ্যে হয়তো আমার মেরে দিতে মন চাইতে পারে। তো উনাকে সঙ্গ দেওয়ার কথা উনি বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন এবং সোজা ব্যাটে খেলার উপদেশ দিচ্ছিলেন। সেটাই অনুসরণ করেছি।”

তার রান ৭০ হওয়ার পর মাহমুদউল্লাহ বলেছিলেন, এখান থেকে সেঞ্চুরিও সম্ভব। শেষ পর্যন্ত ততদূর যেতে পারেননি তাসকিন। তবে যতটুকু পেরেছেন তাতেই খুশি তিনি। 

“এর আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমার সেরা ছিল ৩৩। ৪০ হওয়ার পর থেকে রিয়াদ ভাই বলছিলেন, ‘এখন কোনো বাজে শট না। ফিফটির কাছাকাছি, সোজা ব্যাটে খেল।’ ফিফটি হওয়ার পর আমার ৭০ পার হলো তখন উনি বলছিলেন, দেখ সোজা ব্যাটে খেলতে থাকলে, একশও হতে পারে।’ তবে উনি বারবার বলছিলেন, পরের বলটায় মনোযোগ দেওয়ার জন্য।”

“আমি তো অনেক ধরনের শট জানি না। সব সময় চেষ্টা করছিলাম, স্টাম্পের বলটা ডিফেন্স করতে। বাউন্সারটা লিভ করার জন্য। কাভার ড্রাইভসহ যেগুলো পাচ্ছিলাম সেগুলো করে রান করার চেষ্টা করছিলাম। কারণ, যেহেতু আমার অপশন কম। সেগুলোতেই অনড় থাকার চেষ্টা করছিলাম। যা হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। এখন আসল শুরু হয়েছে, বোলিং। সবাই দোয়া করবেন যেন বোলিং ভালো করতে পারি।”

নবম উইকেটে বাংলাদেশের আগের সেরা ১৮৪ ছাড়িয়ে মাহমুদউল্লাহ-তাসকিন জাগিয়েছিলেন বিশ্ব রেকর্ড গড়ার সম্ভাবনা। শেষ পর্যন্ত পারেননি। তাসকিন জানালেন, ১৯৫ রানের বিশ্ব রেকর্ডের কথা তিনি জানতেন না। তবে এ নিয়ে আক্ষেপ নেই। দলে ফেরা মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরিতে অবদান রাখতে পেরেই তিনি খুশি।

“আর কিছু রান হলে বিশ্ব রেকর্ড এতো, এটা জানা ছিল না। তবে যখন জুটি দেড়শ রানের হয়ে গিয়েছিল তখনই ভালো লাগছিল। তারওপর রিয়াদ ভাই কয়েকটা টেস্টে দলে ছিলেন না, উনি অসাধারণ একটা ইনিংস খেললেন। আমার খুব ভালো লাগছিল যে, আমি রিয়াদ ভাইকে সহায়তা দিতে পারছি লম্বা সময় ধরে। যেটা হয়েছে, খুব ভালো। এখন যদি বোলিংয়ে আমরা দলগতভাবে ভালো করতে পারি অবশ্যই ভালো কিছু হবে।”