লিটনের ব্যাটে উদ্ধার, লিটনেই হতাশা

সাধারণ গতির একটি শর্ট বল, লেগ স্টাম্পের বাইরে। লেগ সাইডে কত জায়গা দিয়েই তো অনায়াসে খেলা যায়। লিটন দাস পুল শটে হাওয়ায় ভাসিয়ে বল পাঠালেন সীমানার একমাত্র ফিল্ডারের কাছেই! ফাঁদে পা দিয়ে সম্ভাব্য মাইলফলকের অপমৃত্যু। আরাধ্য প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি অধরাই রইল তার।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 July 2021, 04:15 PM
Updated : 7 July 2021, 04:53 PM

হারারে টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম দিনের নায়ক তিনি। শেষ বিকেলের বিষাদের রঙও তিনিই। ডুবতে থাকা দল উদ্ধার তার ব্যাটে। কিন্তু পূর্ণতা পেল না তার আর দলের ইনিংস।

লিটন থমকে গেলেন ৯৫ রানে। হারারে টেস্টের প্রথম দিনে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের রান ৮ উইকেটে ২৯৪।

১৩২ রানে ৬ উইকেট হারানো দল দিন শেষে এই অবস্থায় পৌঁছে তৃপ্তির ছবি আঁকতেই পারে। তবে তাতে আক্ষেপের আঁচড় লিটনের বিদায়।

সপ্তম উইকেটে শতরানের জুটিতে লিটনের সঙ্গে ত্রাতা মাহমুদউল্লাহ। প্রায় দেড় বছর পর যিনি এই টেস্ট খেলতে নেমেছেন দলের অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে। দলের এই রক্ষণাত্মক মানসিকতা প্রশ্নবিদ্ধ অবশ্যই। তবে দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ের দিনে এই সিদ্ধান্তই হয়ে গেছে রক্ষাকবচ। নিজের ৫০তম টেস্টে মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত ৫৪ রানে।

আলাদা করে বলতে হবে মুমিনুল হকের কথাও। সতীর্থদের ব্যর্থতার প্রথমভাগে বাংলাদেশ অধিনায়কই বাড়িয়েছেন দলের রান। তবে দুই দফায় জীবন পেয়ে ও কয়েকবার অল্পের জন্য বেঁচে যাওয়ার পরও ৭০ রানে আটকে যাওয়ার দায় তাকে দেওয়াই যায়।

জিম্বাবুয়ে দিনশেষে হতাশই হবে। বাংলাদেশকে বাগে পেয়েও যে অল্পতে গুটিয়ে দেওয়া যায়নি!

টস হেরেও বোলিং পেয়ে খুশি ছিলেন অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলর। হারারের উইকেটের প্রথম দিনের সুবিধা কাজে লাগাতে তার চাওয়া ছিল আগে বোলিংই। পাঁচ ওভারের মধ্যে দুই উইকেট তুলে নিয়ে টেইলরের হাসি আরও চওড়া করে দেন ব্লেসিং মুজারাবানি।

হারারের আকাশে সকালে ছিল মেঘের আনাগোনা। উইকেটে বাউন্সও বেশ। দারুণ বোলিংয়ে বাংলাদেশকে ভোগান মুজারাবানি।

চোটের কারণে খেলতে পারেননি তামিম ইকবাল। বাংলাদেশের ইনিংস শুরু করেন সাইফ হাসান ও সাদমান ইসলাম। ম্যাচের প্রথম ওভারেই বলের লাইন মিস করে বোল্ড সাইফ। পাঁচ টেস্টে এই ওপেনারের তৃতীয় শূন্য এটি। তিনে নেমে নাজমুল হাসান শান্ত স্লিপে ধরা পড়েন ২ রান করেই।

৮ রানে ২ উইকেট পড়ার পর উইকেটে গিয়ে মুমিনুল হক ছিলেন সাবলীল। মুজারাবানি দারুণ বল করলেও আরেক প্রান্তে বোলারদের আলগা বল কাজে লাগিয়ে রান বাড়ান তিনি। নড়বড়ে শুরুর পর সাদমান ইসলামও টিকে যান। জুটি ছাড়িয়ে যায় পঞ্চাশ।

কিন্তু লাঞ্চের আগেই এই জুটি থামে ৬০ রানে। বাঁহাতি পেসার রিচার্ড এনগারাভার অফ স্টাম্পের বাইরের বল খোঁচা দিয়ে সাদমান ক্যাচ দেন স্লিপে। ফেরেন তিনি ৬৪ বলে ২৩ করে।

লাঞ্চের পর মুমিনুল পৌছেঁ যান ফিফটিতে। কিন্তু আরেক পাশে জোড়া ধাক্কায় টালমাটাল হয়ে যায় দলের ইনিংস। মুজারাবানির ভেতরে ঢোকা বল ছেড়ে দিয়ে এলবিডব্লিউ মুশফিকুর রহিম (১১)। ফেরার টেস্টে ভিক্টর নিয়াউচির বাইরের বল দৃষ্টিকটুভাবে তাড়া করে সাকিব আল হাসান শেষ ৩ রানেই।

ইনিংসের শুরুর দিকে বিপর্যয়ের মধ্যে ৭০ রানের ইনিংস খেলেন মুমিনুল হক। ছবি: জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট।

এর মধ্যে মুমিনুল জীবন পান ৫২ ও ৬০ রানে, বোলার দুবারই মুজারাবানি। উইকেটটি শেষ পর্যন্ত পান নিয়াউচি। বাইরের বল কাট করে বাংলাদেশ অধিনায়ক ধরা পড়েন গালিতে। শেষ হয় তার ১৩ চারে ৯২ বলে ৭০ রানের ইনিংস।

১৩২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে তখন বিব্রতকর অবস্থায় বাংলাদেশ। সেই দিশাহীন অবস্থা থেকে দলকে পথে ফেরায় লিটন ও মাহমুদউল্লাহর জুটি।

লিটন শুরু থেকেই ছিলেন স্বচ্ছন্দ। মাহমুদউল্লাহ অনেকটা সময় উইকেট ধরে রেখে শুধু সঙ্গ দেন লিটনকে। পরে নিজেও বাড়াতে থাকেন রান।

চার পেসার নিয়ে একাদশ সাজানো জিম্বাবুয়ে অনিয়মিত স্পিনারদের আনে আক্রমণে। মিল্টন শুম্বা, রয় কাইয়ার ধারহীন স্পিন সামলাতে কোনো সমস্যাই হয়নি লিটন, মাহমুদউল্লাহর। দারুণ ব্যাটিংয়ে দুজন বদলে দেন ইনিংসের চিত্র।

জিম্বাবুয়ে যখন অপেক্ষা করছে দ্বিতীয় নতুন বলের, তখনই তারা উপহার পেয়ে যায় উইকেট। লিটন বিদায় নেন ১৪৭ বলে ১৩ চারে ৯৫ করে।

টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৫ টেস্টে ৯ বার ফিফটি পেরিয়ে এখনও সেঞ্চুরির স্বাদ পাওয়া হলো না তার। আগে একবার আটকা পড়েছিলেন ৯৪ রানে।

লিটনকে হারানোর রেশ মিলিয়ে যেতে না যেতেই মেহেদী হাসান মিরাজ প্রথম বলে এলবিডব্লিউ বলের লাইন মিস করে। তাসকিন ঠেকিয়ে দেন ডোনাল্ড টিরিপানোর হ্যাটট্রিক বল। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে তিনি টিকে যান দিনের বাকিটুকুতেও। আলোকস্বল্পতায় খেলা শেষ হয় ৭ ওভার আগে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৮৩ ওভারে ২৯৪/৮ (সাইফ ০, সাদমান ২৩, শান্ত ২, মুমিনুল ৭০, মুশফিক ১১, সাকিব ৩, লিটন ৯৫, মাহমুদউল্লাহ ৫৪*, মিরাজ ০, তাসকিন ১৩*, মুজারাবানি ১৬-৩-৪৮-৩, এনগারাভা ১৫-৫-৩৬-১, টিরিপানো ১৩-৪-৩৬-২, নিয়াউচি ১২-১-৬৯-২, মায়ার্স ৩-১-১৩-০, শুম্বা ১৮-৪-৫৩-০, কাইয়া ৬-০-২৭-০)।