প্রাইম ব্যাংককে হারিয়ে আবাহনীর হ্যাটট্রিক শিরোপা

শেষ ওভারে প্রাইম ব্যাংকের প্রয়োজন ১৬ রান। শহিদুল ইসলাম প্রথম ডেলিভারি করলেন অফ স্টাম্পের বাইরে, পরিষ্কার কোমর উচ্চতার ওপরে। কিন্তু ‘নো’ বল ডাকলেন না আম্পায়ার। ব্যাটসম্যান অলক কাপালী তাকিয়ে রইলেন হতভম্ব হয়ে। রান এলো না পরের দুই বলেও। চতুর্থ বলে ছক্কা মারলেও পারলেন না এর পর। অলকের শেষের ঝলকের পরও আবাহনী জিতে নিল শিরোপা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 June 2021, 12:13 PM
Updated : 26 June 2021, 05:51 PM

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টির ফাইনালে রূপ নেওয়া ম্যাচে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবকে ৮ রানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন আবাহনী লিমিটেড।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে শনিবার শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে আবাহনীর ১৫০ রান তাড়ায় প্রাইম ব্যাংক থমকে যায় ১৪২ রানে।

আবাহনীর এটি হ্যাটট্রিক শিরোপা, গত পাঁচ বছরের মধ্যে চতুর্থ। ঢাকার শীর্ষ ক্লাব ক্রিকেটে সফলতম দলটির এটি ২১তম শিরোপা।

শেষের লড়াইয়ে আবাহনীর জয়ের নায়ক মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। ব্যাট হাতে ১৩ বলে ২১ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসের পর এই অলরাউন্ডার ৩৬ রানে নেন ৪ উইকেট।

তবে ব্যাট-বলের লড়াই ছাপিয়ে চোখে লেগে রইল আম্পায়ারিংয়ের ভুলগুলি। ম্যাচের প্রথম ওভারেই প্রাইম ব্যাংকের মুস্তাফিজুর রহমানের বলে আবাহনীর লিটন দাসের নিশ্চিত এলবিডব্লিউ দেননি আম্পায়ার তানভির আহমেদ। এরপর শেষ ওভারে ওই ‘নো’ বল না দেওয়া, সেখানেও লেগ আম্পায়ার ছিলেন তানভিরই।

মহামারীকালে প্রায় ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে জৈব-সুরক্ষা বলয়ে আয়োজিত লিগ যেমন ঘরোয়া ক্রিকেটের জন্য স্বস্তি বয়ে এনেছে, তেমনি বারবার অস্বস্তির কাঁটা হয়ে উঠেছে আম্পায়ারিংয়ের ভুল। যেগুলোর বেশ কটিই গেছে আবাহনীর পক্ষে।

শেষে এসে না পারার দায় অনেকটা নিজেদের দিতে পারে প্রাইম ব্যাংকও। আবাহনীকে বাগে পেয়েও তারা কাজে লাগাতে পারেনি সুযোগ।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা আবাহনী উইকেট হারায় শুরুতেই। ম্যাচের প্রথম বলেই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মুস্তাফিজুর রহমানের বাইরের বল চালিয়ে উইকেট বিলিয়ে দেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ।

এক বল পরই ফুল লেংথ ডেলিভারি লাগে লিটনের পায়ে। জোরালো আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। প্রাইম ব্যাংকের ক্রিকেটাররা হতাশায় দাঁড়িয়ে থাকেন কিছুক্ষণ। টিভি রিপ্লে দেখে নিশ্চিত আউট বলেই মনে হয়েছে।

আরেকটি উইকেট অবশ্য ধরা দেয় দ্রুতই। দ্বিতীয় ওভারে রুবেল হোসেন ফেরান মুনিম শাহরিয়ারকে। তবে লিটনের পাল্টা আক্রমণে গা ঝারা দেয় আবাহনী। ২ চার ও ১ ছক্কায় লিটনের ১৩ বলে ১৯ রানের ইনিংস শেষ হয় এনামুলের অসাধারণ ক্যাচে। নাহিদুল ইসলামের বলে মিড অফ থেকে অনেকটা পেছনে ছুটে ডাইভিং ক্যাচ নেন প্রাইম ব্যাংক অধিনায়ক।

৩১ রানে ৩ উইকেট হারানো দলকে এগিয়ে নেন মোসাদ্দেক হোসেন ও নাজমুল হোসেন শান্ত। জুটিতে রানের গতি অবশ্য খুব ভালো ছিল না। ৭০ রান যোগ করেন দুজন ৬১ বলে।

৩ চার ও ২ ছক্কায় শান্ত ফেরন ৪০ বলে ৪৫ রান করে। রুবেল হোসেনের সোজা বল ক্রস ব্যাটে খেলে মোসাদ্দেক বোল্ড ৩৯ বলে ৪০ করে।

মূলত সাইফ উদ্দিনের সৌজন্যে দেড়শতে পৌঁছায় আবাহনী। মুস্তাফিজের করা আবাহনীর শেষ ওভারে দুটি ছক্কা মারেন সাইফ।

ব্যাটিংয়ের শেষটা ভালো করার পর বোলিংয়েও দলকে দারুণ সূচনা এনে দেন সাইফ। প্রাইম ব্যাংকের বড় ভরসা রনি তালুকদারকে ফেরান তিনি প্রথম ওভারেই। নিজের পরের ওভারে বিদায় করে দেন প্রাইম ব্যাংক অধিনায়ক এনামুলকে।

পরে রকিবুল হাসান, মোহাম্মদ মিঠুনদের দ্রুত বিদায়ে লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়ে প্রাইম ব্যাংক। ওপেনার রুবেল মিয়া দীর্ঘক্ষণ এক প্রান্তে থেকে পারেননি দলকে আশা দেখাতে। তানজিম হাসানের স্লোয়ারে তিনি বোল্ড হন ৪৩ বলে ৪১ করে।

একসময় ম্যাচ থেকে অনেকটাই ছিটকে পড়ে প্রাইম ব্যাংক। সাইফ যখন এক ওভারই ফেরান নাঈম হাসান ও রুবেল হোসেনকে, শেষ ৩ ওভারে প্রয়োজনে পড়ে তাদের ৪১ রানের। উইকেট বাকি তখন মোটে ২টি। অভিজ্ঞ অলকের ঝড় শুরু এরপরই। তানজিমকে ছক্কা মারেন তিনি, টানা দুই বলে চার-ছক্কা সাইফকে।

শেষ ওভারেও টিকে থাকে দলের আশা। কিন্তু প্রথম বলে প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত, পরের দুই বলে রান না পেয়ে শেষ হয়ে যায় তাদের সম্ভাবনা। বিফলে যায় অলকের ১৭ বলে ৩৪ রানের ইনিংস। বিজয় উৎসবে মেতে ওঠে আবাহনী।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

আবাহনী: ২০ ওভারে ১৫০/৭ (মোহাম্মদ নাঈম ০, মুনিম ৩, লিটন ১৯, শান্ত ৪৫, মোসাদ্দেক ৪০, আফিফ ১২, সাইফ উদ্দিন ২১*, শহিদুল ১*; মুস্তাফিজ ৪-০-৩৭-১, রুবেল ৪-০-২২-২, নাহিদুল ৪-০-২০-২, শরিফুল ৪-০-২২-১, নাঈম ২-০-২৫-০, রুবেল মিয়া ২-০-২৫-১)।

প্রাইম ব্যাংক: ২০ ওভারে ১৪২/৯ (রনি ১, রুবেল মিয়া ৪১, এনামুল ১৩, রকিবুল ৪, মিঠুন ৬, নাহিদুল ১০, নাঈম ১৯, অলক ৩৪*, রুবেল ০, শরিফুল ৩, মুস্তাফিজ ০*; সাইফ উদ্দিন ৪-০-৩৬-৪, আরাফাত সানি ৪-০-১৮-১, তানজিম ৪-০-৩১-১, মেহেদি রানা ৩-০-৩০-২, শহিদুল ৪-০-২১-০, মোসাদ্দেক ১-০-৫-০)।

ফল: আবাহনী লিমিটেড ৮ রানে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ:  মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন।