আবুধাবিতে বৃহস্পতিবার রাতে ষষ্ঠ আসরের ফাইনালে মুলতান জিতেছে ৪৭ রানে।
মাকসুদ ও রুশোর ফিফটিতে দলটি ৪ উইকেটে করে ২০৬ রান। জিততে পেশাওয়ারকে গড়তে হতো টুর্নামেন্টটিতে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড। যেতে পারেনি তারা ধারেকাছেও, থমকে যায় ১৫৯ রানে।
প্রথমবার পাকিস্তানের এই ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেই শিরোপার স্বাদ পেল মুলতান। শেষ চার আসরের তিনটিরই ফাইনালে হারল পেশাওয়ার। চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা দ্বিতীয় আসরে।
মুলতানের ম্যাচের প্রথমভাগের দুই নায়ক মাকসুদ ৩৫ বলে করেন ৬৫ রান, ২১ বলে ৫০ রুশো। বোলিংয়ে ইমরান তাহির নেন ৩ উইকেট।
শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে সতর্ক শুরু করেন শান মাসুদ ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। প্রথম তিন ওভারে আসে কেবল ১২ রান। পরের ওভারে মোহাম্মদ ইরফানকে চার মারার পর ছক্কায় ওড়ান রিজওয়ান। পঞ্চম ওভারে সামিন গুলকে তিনটি বাউন্ডারি মারেন মাসুদ।
৬৮ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে নবম ওভারে মাসুদের বিদায়ে। ২৯ বলে ৬টি চারে তিনি করেন ৩৭ রান। মাসুদের পর নিজের পরের ওভারে রিজওয়ানকেও ফেরান মোহাম্মদ ইমরান। মুলতান অধিনায়কের ৩০ বলে ৩০ রানের ইনিংস গড়া ২ চার ও এক ছক্কায়।
এরপরই শুরু হয় মাকসুদ ও রুশোর তাণ্ডব। মুখোমুখি প্রথম বলেই চার মেরে শুরু করেন দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান রুশো। ওয়াহাব রিয়াজকে পরপর চার-ছক্কা মারেন মাকসুদ। দুই ব্যাটসম্যানদের ব্যাটে রান আসতে থাকে বানের জলের মতো।
মাকসুদ ফিফটি পূরণ করেন ২৬ বলে। পঞ্চাশ ছুঁতে রুশোর লাগে কেবল ২০ বল। এরপরই বিদায় নেন তিনি। পরপর দুই বলে তাকে ও জনসন চার্লসকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগান সামিন গুল।
ঝড় বয়ে যায় ওয়াহাব ও বাটের ওপর দিয়ে। দুজনই দেন ৫২ রান করে।
রান তাড়ায় শোয়েব মালিক ছাড়া পেশাওয়ারের আর কেউ নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি।
ব্লেসিং মুজারাবানিকে একটি ছক্কা হাঁকানোর পরের বলেই পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন হজরতউল্লাহ জাজাই। আরেক ওপেনার কামরান আকমল ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি (২৮ বলে ৩৬)। ১৩ বলে ৬ রান করে রান আউটে কাটা পড়েন জনাথন ওয়েলস। দশম ওভারে দলের রান তখন ৩ উইকেটে ৫৮।
১৭ রানে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েও মালিক বেঁচে যান ইমরান খানের ‘নো’ বলের কল্যাণে। পরের দুই বলে তিনি মারেন ছক্কা-চার। পরের ওভারে শাহনাওয়াজ দাহানিকে দুটি চার ও একটি হাঁকান রভম্যান পাওয়েল। তাহিরকে দুই ছক্কার পর বাউন্ডারি মারেন মালিক।
তাদের ব্যাটে পেশাওয়ার শিবিরে জাগে কিছুটা আশা। তবে পরপর দুই ওভারে দুজনই বিদায় নিলে ম্যাচ থেকে একরকম ছিটকে যায় পেশাওয়ার। সোহেল তানভীরের বাউন্সারে ডিপ স্কয়ার লেগে তাহিরের হাতে ধরা পড়া মালিক ২৮ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় করেন সর্বোচ্চ ৪৮ রান। ১৪ বলে ২৩ রান করেন রভম্যান।
তাহির একই ওভারে ফেরান শেরফান রাদারফোর্ড, ওয়াহাব রিয়াজ ও মোহাম্মদ ইমরানকে।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি পিএসএলের এবারের আসর শুরু হয়েছিল পাকিস্তানে। টুর্নামেন্ট চলাকালে ছয় জন ক্রিকেটারসহ মোট সাত জনের শরীরে কোভিড-১৯ শনাক্ত হলে মার্চের শুরুতে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে দেওয়া হয় টুর্নামেন্টটি। সেটিই পরে মাঠে গড়ায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে।
আসরের শুরুটা খুব বাজে হয়েছিল মুলতানের। প্রথম পাঁচ ম্যাচের চারটিতেই তারা পায় হারের তেতো স্বাদ। দ্বিতীয় লেগ শুরু করে পয়েন্ট টেবিলে পাঁচে থেকে। এরপরই দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় তারা। পরের পাঁচ ম্যাচের চারটি জিতে দুইয়ে থেকে শেষ করে প্রাথমিক পর্ব। কোয়ালিফায়ারে ইসলামাবাদ ইউনাইটেডকে হারিয়ে ফাইনালে পা রাখার পর এবার করল শিরোপা উৎসব।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
মুলতান সুলতানস: ২০ ওভারে ২০৬/৪ (মাসুদ ৩৭, রিজওয়ান ৩০, মাকসুদ ৬৫*, রুশো ৫০, চার্লস ০, খুশদিল ১৫*; সামিন ৪-০-২৬-২, ইরফান ৪-০-২৭-০, ওয়াহাব ৪-০-৫২-০, বাট ৪-০-৫২-০, ইমরান ৪-০-৪৭-২)
পেশাওয়ার জালমি: ২০ ওভারে ১৫৯/৯ (আকমল ৩৬, জাজাই ৬, ওয়েলস ৬, মালিক ৪৮, রভম্যান ২৩, রাদারফোর্ড ১৮, বাট ৭, ওয়াহাব ০, ইমরান ০, সামিন ৭*, ইরফান ০*; তানভীর ৪-০-৩৫-১, ইমরান খান ৪-১-২৭-২, মুজারাবানি ৪-০-২৬-২, দাহানি ৪-০-৩৮-০, তাহির ৪-০-৩৩-৩)
ফল: মুলতান সুলতানস ৪৭ রানে জয়ী ও চ্যাম্পিয়ন
ম্যান অব দা ম্যাচ: শোয়েব মাকসুদ
ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট: শোয়েব মাকসুদ