১২৬ রানের ছোট্ট পুঁজিতেও ম্যাচ জমে উঠল বেশ। তবে শামীম গড়ে দিলেন ম্যাচের ভাগ্য। ৩০ বলে ৫২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাবকে এনে দিলেন ৫ উইকেটের জয়।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টির সুপার লিগের ম্যাচটি প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের সুযোগ ছিল শিরোপার দিকে আরেকটু এগিয়ে যাওয়ার। তাদেরকে সেই সুযোগ করে দিয়েছিল দিনের আগের ম্যাচে আবাহনীর পরাজয়। কিন্তু সেই সযোগ তারা পারল না কাজে লাগাতে।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার রনি তালুকদারের ফিফটির পরও প্রাইম ব্যাংক করতে পারে ১২৫ রান। প্রাইম দোলেশ্বরের রান তাড়াও এগোচ্ছিল ধুঁকতে ধুঁকতে। শামীমের সৌজন্যে শেষ পর্যন্ত জিতে যায় তারা ৭ বল বাকি রেখেই।
ম্যাচের শুরু তাদের জন্য যদিও ছিল দারুণ। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা প্রাইম ব্যাংক প্রথম ৩ ওভারেই তুলে ফেলে ৩৩। তবে তাতে অবদান প্রায় পুরোটাই রনির। তার রান যখন ৮ বলে ২৩, আরেক প্রান্তে ইমরান উজজামান আউট হন ১০ বলে ৮ রান করে।
শফিকুলের বাউন্সারে ইমরান আউট হওয়ার পর এনামুল হক রান আউট হন ফরহাদ রেজার সরাসরি থ্রোয়ে। কামরুল শিকার শুরু করেন মোহাম্মদ মিঠুনকে ফিরিয়ে। এরপর রকিবুল হাসানও যখন আউট হলেন, ৮ ওভারে প্রাইম ব্যাংকের ৪ উইকেটে ৬৪। তাতে রনির রানই ৪৪।
এনামুল হক জুনিয়রকে পুল করে চার মেরে রনি ফিফটি স্পর্শ করেন ৩১ বলে। তার সঙ্গে নাহিদুল ইসলামের জুটি কিছুটা এগিয়ে নেয় দলকে।
রনির ইনিংস থামে দ্বিতীয় স্পেলে ফেরা কামরুলের বলে। স্কুপ করার চেষ্টায় বল লাগে তার প্যাডে। আম্পায়ার মাহফুজুর রহমান জায়গা থেকে একটু সরে গিয়েও পরে এলবিডব্লিউ দেন, ততক্ষণে দৌড়ে রান নিয়ে ফেলেছেন দুই ব্যাটসমান। সিদ্ধান্তে বেশ অসন্তুষ্ট দেখা যায় রনিকে। ৪১ বলে ৫৯ রানে ফেরেন তিনি।
তার বিদায়ে দিশা হারায় দলের ইনিংসও। নাহিদুল আউট হস ২৮ বলে ২৭ করে। অন্য ব্যাটসম্যানদেরও চলে কেবল আসা-যাওয়া। শেষ ৬ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে তারা তুলতে পারে মোটে ২৬ রান।
বাঁহাতি পেসার শফিকুল ইসলাম ক্যারিয়ারে প্রথমবার পান ৪ উইকেটে স্বাদ (৪/৩৬)। তবে সেরা বোলার ছিলেন নিঃসন্দেহে কামরুল ইসলাম রাব্বি। লিগে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা বোলার ৪ ওভারে মাত্র ১০ রানে নেন ৩ উইকেট।
রান তাড়ায় প্রাইম দোলেশ্বর শুরুটাও হয় বাজে। দুই ওপেনার বিদায় নেন দ্রুত। ৪ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে রান ওঠে কেবল ১৩।
পঞ্চম ওভারের প্রথম বলে শরিফুলের গতিময় ডেলিভারি ছোবল দেয় ফজলে মাহমুদ রাব্বির প্যাডে। জোরালো আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। টিভি রিপ্লে দেখে ব্যাটসম্যানকে সৌভাগ্যবানই মনে হয়েছে। ফজলে মাহমুদ জবাব দেন ওই চারটি বাউন্ডারি মেরে।
রান রেটের অবস্থা তখনও খুব ভালো নয়। সাইফ হাসান যে ১১ বল খেলেও রানের দেখা পাননি! মুস্তাফিজুর রহমানকে টানা দুটি বাউন্ডারিতে অবশ্য তিনি গা ঝারা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু পারেননি পুষিয়ে দিতে। তার ইনিংস থামে ৩১ বলে ২৭ করে।
পরে মার্শাল আইয়ুবও রান করতে ভুগতে থাকায় দোলেশ্বরের সমীকরণ হয়ে ওঠে কঠিন। শামীমের রুদ্র মূতির্তে সমাধান মেলে সহজেই। রুবেল হোসেন ও মুস্তাফিজুর রহমানকে পেশীর জোরে ছক্কায় ওড়ান তিনি।
মার্শাল ২২ বলে ১৩ রান করে আউট হলেও দোলেশ্বরের জিততে সমস্যা হয়নি। শরিফুলের ওভারে এক ছক্কা দুই বাউন্ডারিতে জিতিয়ে দেন শামীম।
দারুণ এই জয়ে রানার্স আপ হয়ে লিগ শেস করার সম্ভাবনা জাগিয়েছে দোলেশ্বর। শিরোপার ফয়সালা শনিববার সকালে আবাহনী ও প্রাইম ব্যাংকের ম্যাচে। যে দল জিতবে, ট্রফি তাদেরই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
প্রাইম ব্যাংক: ১৯.৫ ওভারে ১২৬ (রুবেল মিয়া ৮, রনি ৫৯, এনামুল ১, রকিবুল ১, মিঠুন ৬, নাহিদুল ২৭, অলক ৬, নাঈম ৫, শরিফুল ২, রুবেল ১, মুস্তাফিজ ১*; শফিকুল ৩.৫-০-৩৬-৪, এনামুল জুনি. ৪-০-২৪-০, ফরহাদ রোজ ১-০-৭-০, কামরুল রাব্বি ৪-০-১০-৩, তৌকির ৪-০-২৬-০, শরিফউল্লাহ ৩-০-১৮-১)।
প্রাইম দোলেশ্বর: ১৯.৫ ওভারে ১৩০/৫ (ইমরান ১, তৌকির ৮, সাইফ ২৭, ফজলে মাহমুদ ২০, মার্শাল ১৩, শামীম ৫২*, ফরহাদ রেজা ১*; মুস্তাফিজ ৩-০-১৯-০, রুবেল হোসেন ৪-০-২২-২, শরিফুল ৩.৫-১-৪২-১, নাহিদুর ১-০-৪-০, রুবেল মিয়া ৪-০-২২-১, অলক ৩-০-১৮-১)।
ফল: প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাব ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: শামীম হোসেন।