ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টির সুপার লিগে শিরোপার অভিযান থেকে ছিটকে যাওয়া দুই দলের লড়াই জমল দারুণ। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে তিন বল বাকি থাকতে তিন উইকেটে হারাল গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স।
দলের বোলিং শুরু করে ৪ ওভারে ১ মেডেন নিয়ে ২২ রান দিয়ে মেহেদির প্রাপ্তি ২ উইকেট। পরে ব্যাটিং শুরু করে প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্তে আউট হন শেষ ওভারে। তবে ১১ চার ও ৩ ছক্কায় তার ৫৮ বলে ৯২ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস দলকে নিয়ে যায় জয়ের দুয়ারে।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার গাজী গ্রুপ জিতে যায় মোহামেডানের ১৬৫ রান টপকে।
মেহেদির একমাত্র খেদ থাকতে পারে দলের জয় সঙ্গে নিয়ে ফিরতে না পারায়। শেষ ওভারে যখন প্রয়োজন মাত্র ৫ রান, ইয়াসিন আরাফাতের স্লোয়ারে তাকে এলবিডব্লিউ দেন আম্পায়ার। টিভি রিপ্লেতে মনে হয়েছে, বল পরিষ্কার ছিল অফ স্টাম্পের বাইরে। হতভম্ব মেহেদি বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন উইকেটে।
জিততে অবশ্য সমস্যা হয়নি তাদের। তৃতীয় বলে আকবর আলির বাউন্ডারিতে ধরা দেয় জয়।
শেষ ওভারের সমীকরণ অতটা সহজ হয়ে ওঠে আগের সময়টায় মেহেদির অসাধারণ ব্যাটিংয়ে। বলতে গেলে একাই টেনে নেন তিনি দলের ইনিংস।
সৌম্য সরকারের সঙ্গে তার ওপেনিং জুটি অবশ্য জমে ওঠার ইঙ্গিত দিয়েছিল। তবে ৪১ রানের জুটি থামে যথারীতি সৌম্য (১৭ বলে ২২) উইকেট ছুঁড়ে আসায়।
মেহেদি প্রথমবার রক্ষা পান এর আগেই। শুভাগতকে চার মারার পরের বলেই বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে মিস করেন লাইন। আপাত সহজ সুযোগ, কিপার ইরফান বলই গ্লাভসে জমাতে পারেননি।
তার পরের সুযোগটি ছিল আরও সহজ। দ্বাদশ ওভারে অফ স্পিনার মাহমুদুল হাসানকে সুইপ করে সহজ ক্যাচ দেন স্কয়ার লেগে, দৃষ্টিকটুভাবে তা নিতে ব্যর্থ হন পারভেজ হোসেন ইমন।
জীবন কাজে লাগিয়ে একটু পর ইয়াসিনের বলে স্কুপ করে বাউন্ডারিতে তিনি স্পর্শ করেন চলতি লিগে নিজের প্রথম ফিফটি, ৩৮ বলে।
আরেক প্রান্তে সঙ্গী পাননি কাউকে। তরুণ শাহাদাত হোসেন আর অভিজ্ঞ মুমিনুল, মাহমুদউল্লাহ, ইয়াসির আলি চৌধুরি, সবার বিদায় বাজে শটে। ইয়াসিনের লেগ স্টাম্পের বাইরে বল পুল করতে গিয়ে ব্যাট দিয়ে স্টাম্পে আঘাত করে ‘হিট উইকেট’ আরিফুল হক।
শেষ ৫ ওভারে গাজী গ্রুপের প্রয়োজন পড়ে ৫৩ রান। লড়াইটা একাই চালিয়ে যান মেহেদি। ইয়াসিনের ওভারে দুই বাউন্ডারি, আবু জায়েদের ওভারে তিন বাউন্ডারি, রুয়েল মিয়াকে ছক্কা-চার। চার ওভারের মধ্যে ১৬ বল খেলে ৩৯ রান করে তিনি মিলিয়ে ফেলেন জটিল সমীকরণ। শেষ ওভারে তার হতাশাময় বিদায়ের পরও জিতে যায় দল।
ম্যাচের শুরুতেও গাজী গ্রুপের ত্রাতা ছিলেন মেহেদিই। মোহামেডানের ৪০ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন তিনি আব্দুল মজিদকে ফিরিয়ে। পরে থামান বিপজ্জনক পারভেজকেও। আগের দুই ম্যাচে ৪৫ রানের দুটি ইনিংসের পর তরুণ বাঁহাতি এবার করেন ৩১ বলে ৪১।
মিডল অর্ডারে শামসুর রহমান ব্যর্থ আবার। চার ইনিংসের মধ্যে তৃতীয়বার শূন্য রানে ফেরেন নাদিফ চৌধুরি। ইরফান শুক্কুরের ২২ বলে ২৮ রানের ইনিংস শেষ হয় বাঁহাতি স্পিনার রকিবুল আতিকের ফুল টসে।
শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন তিনি ৩১ বলে ৫৯ করে। পরে বল হাতেও দুটি উইকেট নিয়ে দায়িত্ব পালন করেন নিজের। ম্যাচ শেষে তবু নেই তাদের হাসি। দিনটি যে ছিল মেহেদির!
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
মোহামেডান: ২০ ওভারে ১৬৫/৬ (পারভেজ ৪১, মজিদ ১০, ইরফান ২৮, শামসুর ৮, শুভাগত ৫৯*, নাদিফ ০, মাহমুদুল ১৪, আবু জায়েদ ০*; আতিক ৪-০-৩৩-২, মেহেদি ৪-১-২২-২, নাহিদ ৪-০-৪৭-০, সৌম্য ৩-০-২১-০, তারেক ৪-০-৩০-২, মাহমুদউল্লাহ ১-০-১১-০ )।
গাজী গ্রুপ: ১৯.৩ ওভারে ১৬৬/৭ (মেহেদি ৯২, সৌম্য ২২, শাহাদাত ২, মুমিনুল ৮, মাহমুদউল্লাহ ৮, ইয়াসির ১১, আরিফুল ৫, আকবর ১১*, নাহিদ ১*; আবু জায়েদ ৪-০-৩২-০, রুয়েল ৪-০-৪৫-০, শুভাগত ৪-০-২৯-২, আসিফ ৪-০-২২-৩, মাহমুদুল ১-০-১৪-০, ইয়াসিন ২.৩-০-২৩-২)।
ফল: গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ৩ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: মেহেদি হাসান।