অলকের ঝলকে প্রাইম ব্যাংকের নাটকীয় জয়

দুই ওভারে প্রয়োজন ১২ রান, মেহেদি হাসানের দুর্দান্ত এক ওভারে সেটিই হয়ে গেল এক ওভারে ১০। গাজী গ্রুপের আশা জেগে উঠল নতুন করে। কিন্তু শেষ ওভারে তারুণ্য আর অভিজ্ঞতার লড়াইয়ে পার্থক্য গড়ে দিলেন অলক কাপালী। তরুণ পেসার মহিউদ্দিন তারেকের দ্বিতীয় বলে ছক্কা আর পঞ্চম বলে বাউন্ডারিতে অলক দারুণ জয় এনে দিলেন প্রাইম ব্যাংককে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 June 2021, 01:23 PM
Updated : 23 June 2021, 01:23 PM

বল হাতেও অলক এ দিন মেলে ধরেন চলতি লিগে নিজের সেরা পারফরম্যান্স (৪-১-১৬-৩)। পরে ব্যাট হাতেও তিনি নায়ক দারুণ ফিনিশিংয়ে (১৫ বলে ২১*)। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টির সুপার লিগের উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সকে এক বল বাকি রেখে দুই উইকেটে হারাল প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব।

শুধু রান-বলের সমীকরণেই নয়, শেষ দিকে ম্যাচে উত্তেজনার বারুদ ছড়িয়ে পড়ে আরও অনেক দিকে। ষোড়শ ওভারে নাসুম আহমেদের বলে অলকের বিরুদ্ধে কট বিহাইন্ডের জোরালো আবেদন করে গাজী গ্রুপ। আম্পায়ার আউট না দেওয়ায় হতাশায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে দেখা যায় মাহমুদউল্লাহকে। গাজী গ্রুপের অধিনায়ককে মাঠে ক্ষিপ্ত দেখা গেছে আরও কয়েকবার। তখন শূন্য রানে থাকা অলকই পরে হারিয়ে দেন মাহমুদউল্লাহদের।

মাঠে মেজাজ হারিয়ে বোলিংয়েও নিজেকে হারিয়ে বসেন মাহমুদউল্লাহ। নাসুমের ওই ওভার শেষে প্রাইম ব্যাংকের প্রয়োজন ছিল ৪ ওভারে ৩৮। পরের ওভারে মাহমুদউল্লাহর প্রথম দুই বলেই ছক্কা মারেন নাহিদুল ইসলাম। তৃতীয় বলে আরেক ছক্কার চেষ্টায় নাহিদুল আউট হলেও ওভারের শেষ বলে চার মারেন শরিফুল ইসলাম। ওই ওভারে ১৯ রানে সহজ হয়ে আসে সমীকরণ।

নাহিদুল-অলকরা নামার আগে ম্যাচে এগিয়ে ছিল গাজী গ্রুপই। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে বুধবার ১২৬ রান তাড়ায় সহজ চ্যালেঞ্জেও দাঁড়াতে পারেনি প্রাইম ব্যাংকের টপ অর্ডার। ৩৭ রানে হারায় তারা ৪ উইকেট।

কিছুটা লড়াই করে রকিবুল হাসান যখন বিদায় নেন ২০ রানে, দশম ওভারে প্রাইম ব্যাংকের রান দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ৫১।

এরপর নাহিদুল ও নাঈম হাসানের (১৬) জুটিতে লড়াইয়ে ফেরে প্রাইম ব্যাংক। ৩ ছক্কায় ২৫ বলে ৩৯ রান করে আউট হন নাহিদুল। লোয়ার অর্ডারদের নিয়ে বাকি কাজ সারেন অলক।

শেষ ওভারে যখন প্রয়োজন ১০ রান, তারেকের ওভারের দ্বিতীয় বলে স্লগ করেন অলক। স্কয়ার লেগ সীমানায় বদলি ফিল্ডার শাহাদাত হোসেন ডাইভ দিয়ে চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারেননি ছক্কা। পঞ্চম বল কিপারের পাশ দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে অলক নিশ্চিত করেন জয়।

ম্যাচে লড়াই তুমুল হলেও হারের দায়টা গাজী গ্রুপ দিতে পারে নিজেদেরই। বাজে শটের মহড়া তারা ছুঁড়ে আসেন একের পর এক উইকেট।

ম্যাচের প্রথম বলেই শরিফুল ইসলামকে পুল করতে গিয়ে আউট হন সৌম্য। রুবেল হোসেনের সোজা বল ক্রস ব্যাটে খেলে বোল্ড মুমিনুল হক।

অলকের বিরুদ্ধে কটবিহাইন্ডের আবেদনে আম্পায়ার আউট না দেওয়ায় মাহমুদউল্লাহদের হতাশা।

অলকের যে দুটি ডেলিভারিতে ক্যাচ দেন ইয়াসির আলি ও মাহমুদউল্লাহ, সেই শর্ট বল দুটি মাঠের যে কোনো প্রান্তে খেলতে পারার কথা তাদের। পরে জাকির হাসানও উইকেট বিলিয়ে আসেন অলকের বলেই।

ওপেনিংয়ে মেহেদি হাসান ৩১ বলে ৩৩ বলে এলবিডব্লিউ হয় রুবেল মিয়ার স্লো মিডিয়াম পেসে। ছয়ে নেমে আরিফুল হক রান আউট ২৮ বলে ৩১ করে। শেষ দিকে আকবর আলি করেন ২২ বলে ২৪। গাজী গ্রুপ যেতে পারে ১২৫ পর্যন্ত।

দারুণ লড়াইয়ের পর সেই তাড়ায় জিতে প্রাইম ব্যাংক ধরে রাখল শীর্ষস্থান। দিনের শেষ ম্যাচে জিতলে অবশ্য রান রেটে শীর্ষে উঠে যাবে আবাহনী।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

গাজী গ্রুপ: ২০ ওভারে ১২৫/৯ (মেহেদি ৩৩, সৌম্য ০, মুমিনুল ১০, ইয়াসির ৯, মাহমুদউল্লাহ ২, আরিফুল ৩১, জাকির ৩, আকবর ২৪, নাসুম ১, মুকিদুল ৩*; শরিফুল ৪-০-৩৪-২, রুবেল হোসেন ৪-০-২৯-১, মুস্তাফিজ ৪-০-২৭-১, রুবেল মিয়া ৪-০-১৮-১, অলক ৪-১-১৬-৩)।

প্রাইম ব্যাংক: ১৯.৫ ওভারে ১২৯/৮ (রনি ১১, রুবেল মিয়া ০, এনামুল ৯, মিঠুন ১, রকিবুল ২০, নাহিদুল ৩৯, নাঈম ১৬, অলক ২১*, শরিফুল ৫, রুবেল ৩*; মেহেদি ৪-০-১২-২, নাসুম ৪-০-২২-২, তারেক ৩.৫-০-৩৩-০, মাহমুদউল্লাহ ৪-০-৪০-১, মুমিনুল ৪-০-২১-২)।

ফল: প্রাইম ব্যাংক ২ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: অলক কাপালী।